বিশেষ প্রতিবেদক : চট্রগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও বিভিন্ন সময়ে গোপন অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ওই দুইজন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময়ে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ মহল কর্তৃক একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে । উক্ত দুর্নীতির তদন্ত কাজে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এর তৎকালীন উপসচিব জনাব লুৎফর রহমান, সিনিয়র সহকারি সচিব জনাবা আরিফা জোহরা ও বর্তমান উপসচিব জনাব আবু সাঈদ তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন এবং সকলের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম এর প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে ২ টি এবং সীম্যানশিপ ইন্সট্রাক্টর জনাব মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ৪ টি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় নৌশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শাখা বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা স্মারক নং-১৮.০০.০০০০.০১৭.০৬.০১৬.২৩-৫৮৭, তারিখ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রি. ইস্যুকৃত কারণ দর্শানো নোটিশে ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান, অধ্যক্ষ, ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউট, চট্টগ্রাম এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে (ক) ছাত্রদের ট্রেইনিং ব্লকের ওয়ার্কশপের ইমারজেন্সি ফায়ার এক্সিট বন্ধ করে সেখানে একটি দোকান বসানো; (খ) ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউটের পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা; অভিযোগ দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রমাণিত হয়েছে, যা সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ২ (খ) অনুযায়ী অসদাচরণের শামিল।

অপরদিকে, স্মারক নং-১৮.০০.০০০০.০১৭.০৬.০১৬.২৩-৫৮৬, তারিখ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রি. ইস্যুকৃত কারণ দর্শানো নোটিশে জনাব মেহেদী হাসান, ইন্সট্রাক্টর (সীম্যানশীপ), ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউট, চট্টগ্রাম এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে (ক) টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম; (খ) অধ্যক্ষের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউট এর পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষ; এবং (গ) রিসিভিং কমিটির প্রধান হিসেবে নিম্নমানের মালামাল গ্রহণ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রমাণিত হয়েছে। যা সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ২ (খ) অনুযায়ী অসদাচরণের শামিল।
এমতাবস্থায়, এহেন কার্যকলাপের জন্য কেনো সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার জবাব পত্র প্রাপ্তির ০৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে সিনিয়র সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে ।

তবে উল্লেখিত প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়াও সংবাদে প্রকাশিত/অভিযোগে আরো অনেক অপকর্মের সাথে উভয় কর্মকর্তা জড়িত থাকলেও সেগুলো কারণ দর্শানো নোটিশে উল্লেখ করা হয়নি । তন্মধ্যে অন্যতম হলো নামে বেনামে বা নিজ পরিবারের নামে ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিয়ে সরকারি / বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি ব্যবসা (যেমন, মাতা জাহানার বেগম এর নামে “ইন্টারন্যাশনাল মেরিন কর্পোরেশন” এর লাইসেন্স), নিজ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট এর টেন্ডার টিইসি ও টিওসি কমিটির সদস্য হয়েও নিজ মাতার নামে কাজ পাইয়ে দেওয়া, ক্যাম্পাসে অবস্থান নাকরে নিজ ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে ঠুনকো কারণ দেখিয়ে টিএ ডিএ বিল নেওয়া, নাবিকদের ডাইনিং এ নিম্মমানের খাবার পরিবেশন, নারী কেলেংকারী, সরকারি ক্যাম্পাসের সম্পদ (জ্বালানি গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) ব্যবহার করে প্রশিক্ষণার্থী নাবিকদের দিয়ে পরিশ্রম করিয়ে বানিজ্যিকভাবে টয়লেট ক্লিনার উৎপাদন, ক্যাপ্টেন গ্রুপের বানিজ্যিক কার্য্যক্রম, “উদ্যোক্তা ডট কম” এর বানিজ্যিক কার্য্যক্রম পরিচালনা ইত্যাদি ।
উল্লেখ্য, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত কারণ দর্শানো নোটিশ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ক্যাপ্টেন আতাউর রহমানের ছত্র-ছায়ায় লালিত ইন্সট্রাক্টর (সীম্যানশীপ) মেহেদি হাসান বর্তমানে বিভিন্ন মহলে অর্থের বিনিময়ে দেন দরবার ও তদবির করে বেড়াচ্ছেন ।
এ ছাড়াও ইন্সট্রাক্টর (সীম্যানশীপ) মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরিজীবী হয়েও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা নাকরে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে রিয়েল এস্টেট ফ্ল্যাট/হাউজিং ব্যবসা (অনেক প্রজেক্ট এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “গ্রিন স্কয়ার”, যার একজন সফল ডিরেক্টর তিনি ।
ঠিকানা: মাইলের মাথা, দক্ষিন হালিশহর, চট্টগ্রাম, ফোন-০১৮৩২৯৯৪৪৪৪), অসুদুপায়ে রেগুলার নাবিক ভর্তি পরীক্ষা ও কোচিং বানিজ্য এবং দালাল চক্র মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা, ২০৫ জনের দ্বিতীয়় স্পেশাল ব্যাচের মাধ্যমে অবৈধ নাবিক সিডিসি প্রদান এর জন্যে প্রতারণার মাধ্যমে বেকার যুবকদের থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক ( শিপ পার্সোনেল) এর যোগসাজসে বি এস সি কোটায় এনএমআই এর ২৭ ব্যাচের সাথে ৭ অতিরিক্ত নাবিক প্রশিক্ষণ (যার মধ্যে ৫ জন সম্পূর্ণ অবৈধ), বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজগুলোতে বর্তমান মহাব্যবস্থাপক (শিপ পার্সোনাল) এর সহযোগী হয়ে অর্থের বিনিময়ে় জাহজে অফিসার ও নাবিক নিয়োগ বাণিজ্য সহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ লেনদেন, হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার ও চট্টগ্রাম বায়জিদ বোস্তামী এলাকায় কয়েক একর জমির মালিকানা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। বি এস সি ‘র মহাব্যবস্থাপক (শিপ পার্সোনেল) এর সাথে যোগসাজসে নিজের প্রতিষ্ঠান এনএমআই’র নাবিকদের চাকুরী না দিয়ে টাকার বিনিময়ে বেসরকারি মাস মেরিন একাডেমী থেকে পাস কৃত নাবিকদের বিএসসি তে চাকুরীর ব্যবস্থা করে। তার ২ জন ব্যাচম্যাট রাসেদ ও এনামুলের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মহাব্যবস্থাপক ( শিপ পার্সোনেল) এর সহযোগিতায় মাসিক দুই হাজার ডলার ভাগাভাগির চুক্তিতে বিএসসির বাংলার জয়যাত্রা ও বাংলার অর্জন জাহাজে চীফ ইঞ্জিনিয়ার হতে সাহায্য করেছে।
চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন আতাউর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ইন্সট্রাক্টর জনাব মেহেদী হাসানের লাগামহীন দুর্নীতির বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবের দ্রুত পদক্ষেপ সুশীল সমাজ কামনা করছে।