ভিন্নপথে প্রতারকরা

অপরাধ

মার্কেটসহ গণপরিবহন বন্ধ নেই জনসমাগম

নিজস্ব প্রতিবেদক :পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশেই অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, থুথু পার্টি, ধাক্কা পার্টিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারকচক্র রিহার্সাল শুরু করে। তবে এবছর করোনায় লকডাউনের কারণে আগের মত সুবিধা করতে পারছে না। ফলে নতুন পদ্ধতিতে তাদের প্রতারণার মহড়া শুরু করেছে। এসব প্রতারক ও অপরাধীচক্র বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন, ব্যস্ততম মার্কেটও তাদের কর্মকান্ড চালাতে পারছে না। শুধু মাত্র ভাসমান রিকসাচালক, সিএনজি চালক ছাড়াও অটো চালক ও তাদের যাত্রীদের অজ্ঞান করার চেস্টায় লিপ্ত হচ্ছে। তারা অজ্ঞান করতে না পারলেও ছিনতাইয়ে নিয়োজিত হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, অজ্ঞানপার্টি মলম পার্টিও খপ্পর থেকে র‌্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ডাক্তার, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রেহাই পান না। পবিত্র রমজান মাস, দুই ঈদ, পূজাসহ বিশেষ করে ঘরমুখো মানুষ এদের কাছে অসহায়। এর আগে প্রতিবছর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে নগদ টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান কাজপত্র হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বাস ট্রেন ও লঞ্চযাত্রীসহ পথচারীদের টার্গেট করে প্রতি বছরই খাওয়ানো নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতেন। আর কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন। আবার অনেকেই অজ্ঞান হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পরও পুরোপুরি সুস্থ হননি। শুধু যে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে তাই নয়, এ চক্রটি নানা কৌশলে যানবাহনের ভিতরেই চোখ-মুখে বিষাক্ত মলম লাগিয়ে সর্বস্য হাতিয়ে নিতো। এতে করে অনেকেই স্থায়ীভাবে অন্ধ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিত্র ও করোনায় সংক্রমণ রোধে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখাতে পুলিশ চেস্টা করে যাচ্ছে।
প্রতিবছরই পবিত্র ঈদুল ফিত্র এর আগে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা, নিয়ন্ত্রণে ট্রেন, বাস ও লঞ্চের নিরাপদ চলাচল ও যাত্রীদের নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, ঈদ জামায়াতের নিরাপত্তা এবং জাল টাকার অপব্যবহার রোধ পুলিশ সদরদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী তৎপরতা রোধে বিশেষ নিরাপত্তামূলকব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নওয়া হয়। রেলওয়ে স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে পকেটমার ও অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকে। আবার ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় শহরের বিপণী বিতান ও শপিংমল যথাসম্ভব সিসিটিভির আওতায় এনে কমিউনিটি পুলিশের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার হয়। আর জনসাধারণের সার্বিক কেনা-কাটার সুবিধার্থে এবং তারাবির নামাজের সময় অপরাধমূলক তৎপরতা প্রতিরোধে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যাপ্ত নৈশ টহলের ব্যবস্থা করা হয়।
তাছাড়া প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপনের জন্য ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য রেলওয়ে স্টেশন, বাস-লঞ্চ টার্মিনালে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে পুলিশ, মালিক ও শ্রমিক নেতৃৃবৃন্দ এবং কমিউনিটি পুলিশের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ঈদ জামাত স্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধু অজ্ঞানপার্টি আর মলম পার্টিই নয়, তৎপর হয়ে উঠছে নানা শ্রেণীর অপরাধীরা।
সূত্র জানায়, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, থাবাপার্টি, টানাপার্টি হাঁটাপার্টিসহ হাজারো রকম প্রতারণার শিকার হয় সাধারণ মানুষ। কিন্তু এ বছর করোনা সংক্রমণের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে লকডাউন চলছে। আর এই লকডাউনে জনসমাগম না থাকায় প্রতারকচক্রের তৎপরতা এখনো দেখা যায়নি।
রাজধানীতে এই সব প্রতারকচক্রের খপ্পরে পরে রাজধানীতে চলাচলকারী মানুষ পদে পদে বিপদে পড়েন। চাঁদাবাজি, অপরাধ আর প্রতারণার ‘ঈদ ধান্ধা’য় অনেকেই সর্বস্বান্ত হতেন। চলতি পথে, মার্কেট-বাজারে অজ্ঞানপার্টি, থুথুপার্টি, ধাক্কাপার্টির সীমাহীন দৌরাত্ম্য প্রতিদিনই ছিল। শুধু এই প্রতারকচক্রই নয়, রাজধানীতে পকেটমার চক্রের কয়েকশ সদস্য তৎপর ছিল। হাজারো পয়েন্টে ওত পেতে থাকছে চাঁদাবাজ, ঝাঁপটাবাজ, ছিনতাইকারী চক্র। এসব চক্রের অভিনব সব কৌশলের কাছে সাধারণ মানুষ ধরাশায়ী হচ্ছে। আর সব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়তেন হাজারো মানুষ।
শুধু তাই নয়, অস্বাস্থ্যকর, নোংরা অবস্থায় রক্ষিত বাসীপচা দুর্গন্ধের খেজুর, ইউরিয়া সার মেশানো মুড়ি, পোড়া মবিলে ভাজা চানাচুর রমরমা বেচাকেনা চলতো সর্বত্র। তবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের সেমাই তৈরির ব্যবসা এখনো পাল্লা দিয়ে করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের নামে নকল সেমাই প্যাকেটজাতের ব্যবসাও জমে উঠেছে। মাছ, মাংস, চাল, আটা, তেল, ঘি, ফলমূল, শাকসবজি, জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ সবকিছুতেই ভেজাল। বাদ থাকছে না শিশুখাদ্যও। ঈদে প্রসাধনের চাহিদা বেড়ে যায় বছরের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে।
এসব বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লকডাউনের কারণে রাজধানীতে মার্কেটগুলো বন্ধ এবং জনসমাগম না থাকার কারণে প্রতারণার অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। তারপরও এইসব প্রতারকচক্রের তৎপরতার বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারী রয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন