একদিনেই সুস্থ ১৫ হাজার!
মহসীন আহমেদ স্বপন : করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সোমবার এ সংক্রান্ত ১৮ দফার একটি নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার থেকে রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় বেচা-কেনা, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষুধ কেনা, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না। যেসব প্রয়োজনের বাইরে আসা যাবে, তখনও চলাচলের সময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ১৫ জুনের পর শর্তসাপেক্ষে দেশের সার্বিক কার্যাবলী এবং জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে ৩১ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত এবং ১ জুন থেকে গণপরিবহন খুলে দেয়া হয়। ১৫ দিনের জন্য এ নির্দেশনা শেষে নতুন নির্দেশনা দেয় সরকার।
এ দিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ২০৯ জনের। একই সময়ে নতুন করে আরও তিন হাজার ৯৯ জনের মধ্যে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৯০ হাজার ৬১৯ জনে।
সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি ৫৮টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ হাজার ৭৩৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৩৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৫০৩টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৯৯ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯০ হাজার ৬১৯ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৮ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ২০৯ জনের। গত ২৪ ঘণ্টা যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের মিলিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা এখন ৩৪ হাজার ২৭ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের তিনজন, ত্রিশোর্ধ্ব তিনজন, চল্লিশোর্ধ্ব সাতজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব পাঁচজন, ষাটোর্ধ্ব ১৫ জন এবং সত্তরোর্ধ্ব পাঁচজন রয়েছেন। ১৮ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ছয়জন সিলেট বিভাগের এবং একজন করে রংপুর ও বরিশাল বিভাগের। হাসপাতালে মারা গেছেন ২৫ জন, বাসায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের এবং হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়েছে দুজনকে।
গত রোববারের (১৪ জুন) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ১৪ হাজার ৫০৫টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ১৪১ জনের মধ্যে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও বেড়েছে মৃত্যু। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ৪৬ জনের এবং সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড তিন হাজার ৪৭১ জনের। সর্বোচ্চ মৃত্যু ও শনাক্তের দুটি রেকর্ডের কথাই জানানো হয় গত ১২ জুনের বুলেটিনে।
সোমবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগী বিবেচনায় সুস্থতার হার ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৫৩৬ জনকে এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১৫ হাজার ৮৪৪ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৯৫ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৮১৮ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১০ হাজার ২৬ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৯২২ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ ২৩ হাজার ৩৫৮ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন তিন হাজার ৬৭ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৬১ হাজার ৬৮৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬১ হাজার ৬৬৯ জন।
দেশে কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
বরাবরের মতো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
এখন করোনাভাইরাসের ছোবলে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা চার লাখ ৩৫ হাজার প্রায়। তবে ৪১ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ।
একদিনেই সুস্থ ১৫ হাজার! : স্বাস্থ্য অধিদফতর গত রোববার জানিয়েছিল, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯০৩ জন এবং এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৮ হাজার ৭৩০ জন। গত প্রায় তিন মাসে শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ছিল ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ।
একদিনের ব্যবধানে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর বলেছে, এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৪ হাজার ২৭ জন। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ২৯৭ জন। ফলে একদিনের ব্যবধানে ২১ শতাংশ থেকে সুস্থতার হার প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে!
সোমবার দুপুরে করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৪ হাজার ২৭ জন। শনাক্তের বিবেচনায় সুস্থতার হার ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত দিনের চেয়ে আমরা আজ সুস্থতা অনেক বেশি বলছি। কারণ, আজ যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে শুধু হাসপাতালের সুস্থতা নয়। বাসায় এবং যারা উপসর্গবিহীন ছিলেন, সবাই এটার মধ্যে যোগ হয়েছেন। এই তথ্য আমাদের আইইডিসিআর সরবরাহ করেছে।’
তিনি আরও জানান, ৫৮টি ল্যাবে করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ হাজার ৭৩৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৩৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৫০৩টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৯৯ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯০ হাজার ৬১৯ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৮ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ২০৯ জনের।
রোববার তিনি জানিয়েছিলেন, ৬০টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহীত এবং পরীক্ষা হয়েছে। নতুন সংযোজিত হয়েছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইজি হাসপাতাল লিমিটেড ঢাকা। তাতে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৪ হাজার ৬৯০টি। পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০৫টি এবং এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে পাঁচ লাখ এক হাজার ৪৬৫টি। গত ২৪ ঘণ্টায় যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাতে শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ১৪১ জন। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮৭ হাজার ৫২০ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৯০৩ জন। এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৭৩০ জন সুস্থ হয়েছেন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরু করেছেন ৩২ জন। এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৭১ জন মৃত্যুবরু করেছেন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।’
আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন মন্ত্রিসভার সদস্য, সাংসদসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারাও। এতদিন চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তুলনামূলক বেশি আক্রান্ত হচ্ছিলেন। কিন্তু এখন বিশিষ্টজনদের আক্রান্ত হওয়া এবং কারও কারও মৃত্যুর ঘটনায় সাধারু মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।