দুই কিংবদন্তির চিরবিদায়ে বিএনপিতে শোকের ছায়া

রাজনীতি

আহমেদ হৃদয় : বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের ছোবলে এ পর্যন্ত ৭৬ জন নেতাকে চিরতরে হারিয়েছে বিএনপি। এছাড়া দলের দুই কিংবদন্তি শাহজাহান সিরাজ ও ড. এমাজউদ্দীন আহমেদকে হারিয়ে বিএনপিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সব মিলিয়ে করোনাকালীন সময়ে এ পর্যন্ত মোট ৭৮ জন নেতাকে হারালো বিএনপি।
শাহজাহান সিরাজ ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার খলিফার অন্যতম এবং স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক। অন্যদিকে ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ ছিলেন একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ এভাবে হঠাৎ করে চলে যাবেন এটা আমরা কেউ বিশ্বাস করতে পারছি না। কারণ কয়েকদিন আগে আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি অনলাইনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন। তার এই চলে যাওয়া আমাদের জন্য একটি বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করলো। তার এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা তাকে যেন বেহেশতবাসী করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রফেসর এমাজউদ্দীন বাংলাদেশের অভিভাবক ছিলেন। স্বাধীনতাকামী, গণতন্ত্রকামী মানুষের অভিভাবক ছিলেন। তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন নিবেদিত প্রাণ দেশপ্রেমিক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। চরম দুর্ভাগ্য যে, এরকম একজন অভিভাবককে শুধু বিএনপি নয়, গোটা জাতি হারাল। তিনি সবসময় চেয়েছেন বাংলাদেশে একটা সত্যিকার অর্থে একটা উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মিত হোক, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটা উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হোক, জনগণের মুক্তি হোক। তিনি সারাজীবন ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্রের জন্য তার লেখনী অব্যাহত রেখেছেন। এমাজউদ্দীনের জীবনের সমস্ত কর্ম ছিল এই দেশের জন্য।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, এদিকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শাহজাহান সিরাজ ছিলেন দেশের একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। স্বাধিকার, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা উত্তর গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের আন্দোলনে তার ঐতিহাসিক ভূমিকা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে। জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলায় তার সাহসী ভূমিকা এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে দেশবাসীর কাছে। তার প্রস্থান এই ক্রান্তিকালে দেশে গভীর রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি করলো।
ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশ ও গণতন্ত্র সুরক্ষার আন্দোলনে আপসহীন নেতৃত্ব তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তিনি মাতৃভূমির প্রতি ঋণ পরিশোধ করেছিলেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনই ছিল তার রাজনৈতিক চেতনার ভিত্তি ও সকল কর্মকা-ের উৎস। জনকল্যাণের মহান ব্রত নিয়ে রাজনীতি করতেন বলেই তিনি এলাকাবাসীর নিকট ছিলেন আপনজন। শাহজাহান সিরাজ জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রী হিসেবে সরকারের দায়িত্ব পালনের সময় দেশের টেকসই উন্নয়নে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবেও তিনি জাতীয় সংসদে ভূমিকা রেখেছিলেন জনগণের অধিকার রক্ষায়। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক চেতনাকে দৃঢ়ভাবে বুকে ধারণ করে মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয়
ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার অঙ্গীকারে শহীদ জিয়া প্রবর্তিত ধারাকে অক্ষুন্ন রাখতে তিনি ছিলেন অবিচল, এ ক্ষেত্রে তার অবদান বাংলাদেশের মানুষের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, দেশের এই দুর্দিনে শাহজাহান সিরাজ এবং ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ এর মতো অভিজ্ঞ ও আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতিবিদদের পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ে বিএনপি শোকাহত। এছাড়াও মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিএনপির আরও ৭৬ জন নেতার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ সব সময় বাংলাদেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আজীবন কাজ করে গেছেন। তার গবেষণাধর্মী লেখা বাংলাদেশ তথা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষকে দিক নির্দেশনা দিয়েছে।
অন্যদিকে শাজাহান সিরাজের সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বেশ কয়েকবার কথা বলার এবং সেই উত্তাল দিনগুলোর ইতিহাস সম্পর্কে জানার সৌভাগ্য হয়েছিল। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর এমন ভাবে বর্ণনা করতেন যে তা এত বছর পরও জীবন্ত হয়ে উঠত। স্বাধীনতার পরেও গণতন্ত্র এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আবারও লড়াই-সংগ্রাম করেছেন শাহজাহান সিরাজ। শাহজাহান সিরাজ এবং ড. এমাজউদ্দীন আহমেদের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে দুটি নক্ষত্রের পতন।
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, তাদের মৃত্যুতে যে শূন্যস্থান তৈরি হল, তা অপূরনীয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং আমার দল নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ এবং শাহজাহান সিরাজের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এ দুই কিংবদন্তি নেতা তাদের কর্মের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।


বিজ্ঞাপন