চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়ালে

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

বাংলাদেশে ৫৯০ বার জিন পাল্টেছে করোনা ভাইরাস

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় চীনের তৈরি ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। ফলে বাংলাদেশে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল হতে যাচ্ছে ভ্যাকসিনটির। রোববার (১৯ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএমআরসি’র পরিচালক ডা. মাহমুদ-উজ-জাহান।
তিনি বলেন, ‘চীনের তৈরি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বাংলাদেশে করার অনুমতি চেয়েছিল বেইজিং। বিষয়টি নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি।’
ডা. মাহমুদ-উজ-জাহান জানান, প্রাথমিকভাবে সরকারি সাত-আটটি কোভিড হাসপাতালে এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথা রয়েছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে চীন উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। চলছে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রস্তুতি। বড় আকারে তৃতীয় ধাপের ভ্যাকসিন পরীক্ষা চালাতে ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুমোদন পেয়েছে চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ (সিএনবিজি)। পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর পরীক্ষা চালানোর আগ্রহ দেখায় দেশটি।
চীনে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত রোগী কমে যাওয়ায় এখন দেশের বাইরে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য জায়গা খুঁজছে দেশটি। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগতিতে থাকায় বাংলাদেশকে এর উপযুক্ত মনে করছে চীন।
ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে অবহিত আছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন এমন এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘দেখুন, ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে করোনার সংক্রমণের ভয় আমাদের বেশি। আবার মাসের পর মাস সবকিছু বন্ধও রাখা যাবে না। এমন অবস্থায় এই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ শুধু নয়, পুরো বিশ্ব এর অপেক্ষায়।’
এর আগে বাংলাদেশে আসা চীনের প্রতিনিধি দলকে বিদায় জানানোর সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ‘চীন করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। তাদের কাজে অগ্রগতিও অনেক। এ ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে সবার আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে পাঠাবে বলে চীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। চীনের করোনা সংক্রমণের সময় বাংলাদেশ যেভাবে পাশে ছিল, চীন সরকার সে উদারতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জন্য সবার আগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে।’
বাংলাদেশে ৫৯০ বার জিন পাল্টেছে করোনা ভাইরাস : বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫৯০ বার জিন পরিবর্তন করেছে নভেল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে ৮টি একেবারেই নতুন মিউটেশন, যা বিশ্বের আর কোথাও হয়নি; কেবল বাংলাদেশেই হয়েছে। বাংলাদেশের বিস্তার হওয়ার ভাইরাসটির সঙ্গে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মিল পাওয়া গেছে ইতালির ভাইরাসের সঙ্গে। দেশে করোনাভাইরাসের ২২২টি জিনোম সিকোয়েন্সিং উন্মোচন করে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ।
ভাইরাসের উৎস, গতি-প্রকৃতি আর বিস্তার সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার উপায় জিনোম সিকোয়েন্সিং। বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের প্রায় ৬৭ হাজার জিনোম সিকোয়েন্সিং ডাটা প্রকাশিত হয়েছে উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্মে।
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় হওয়া কোভিড নাইন্টিনের ২২২টি জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫৯০ বার বদলেছে করোনাভাইরাসের জিন, যার মধ্যে ৮টিই স্বতন্ত্র রূপ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ বিস্তার হওয়া ভাইরাসের সঙ্গে অধিক মিল রয়েছে ইতালির ভাইরাসের। তবে চূড়ান্তভাবে কিছু বলতে এখনো অনেক গবেষণা প্রয়োজন।
জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন ও ওষুধের প্রয়োগের ক্ষেত্রেও অংশীদার হতে পারবে বাংলাদেশ। জিনোম সিকোয়েন্সিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নমুনা নেয়া হয় ঢাকা বিভাগের- ৬২টি।


বিজ্ঞাপন