কাজি আরিফ : ক’দিন থেকে ইস্তাম্বুলের পথে পথে ঘুরছি। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম নান্দনিক শহর এটা । এশিয়া আর ইউরোপের সংযোগ শহর ইস্তাম্বুল। বসফরাস প্রনালী পার হলেই ওপারে ইউরোপ। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অপূর্ব সংমিশ্রণ এখানে। লক্ষ লক্ষ পর্যটক এই শহরে বেড়াতে আসে। আসার কারনও আছে । কেননা দুই হাজার বছর আগের সব ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি ত আছেই এমনকি খৃষ্টের জন্মের ৬ /৭ হাজার বা প্রায় কোটি বছর বছর আগেও তুর্কির আনাতলি এলাকায় সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। অলমোস্ট, প্রথম সিভিলাইজেশনের নিদর্শন পাওয়া গেছে এই দেশের আনাতোলিতে ।
ইস্তাম্বুল নানা কারনে জগত বিখ্যাত। এক সময় পশ্চিম রোমানিয়ান শাসকের, কনস্টান্টিপোলের শাসকের, বাইজেন্টাইন শাসকের এবং উসমানীয় শাসকের রাজধানী ছিল এই তুর্কির ইস্তাম্বুল এলাকা, ইস্তাম্বুল স্ট্রাটেজিকভাবে একটা দারুন গুরুত্বপূর্ন শহর । এই শহরের রয়েছে হাজারো যুদ্ধের স্মৃতি, হাজারো ঐতিহাসিক রাজা রাজড়াদের কাহিনী, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, হেরেমের কাহিনী । একদিকে প্রাচীন রোম, গ্রীস, মিশর, ভারত যেমন প্রাচীন সভ্যতার দিকপাল তেমনি তুর্কিস্থান , ইস্তাম্বুল আনাতোলিয়াকে প্রাচীন সভ্যতা ও আধুনিক সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দুও বলা যায়।
ইস্তাম্বুল শহরের সব কটি ঐতিহাসিক নিদর্শন টপকাপি, আয়া সোফিয়া , ব্লু মস্ক, গোল্ডেন হর্ণ, তাকসিম স্কয়ার দেখে যখন ফিরছি তখন হটাৎ রাস্তার মধ্যে বিশাল দেয়াল দেখে চীনের প্রাচীরের কথা মনে পড়ল। দেখলে মনে হচ্ছে হাজার বছরের স্থাপনা । সেই দেয়ালের মাঝ দিয়ে চলছে আমার ট্যাক্সি!
কিন্ত কি ওটা ! কোন বিজয় স্তম্ভ ?
আগে রাজা রাজড়ারা রাজ্য জয় করলে দেশে ফিরে এসে বিশাল বিজয় স্তম্ভ তৈরী করে বিজয় উদযাপন করতো । এটা কি তেমন কিছু? যেহেতু দেশে যাবার জন্য ট্যাক্সিতে চেপে এয়ারপোর্ট যাচ্ছি তাই নেমে দেখা গেলনা স্থানটি কিন্ত মনের মধ্যে খটকা রয়ে গেল । আসলে ওটা কি। কম জানা ইংরেজীর ড্রাইভারও বোঝাতেও পারলনা ।
তারপর বসে বসে ঘাঁটাঘাটি শুরু হল।
এর মধ্যে জেনে গেছি ওটা আসলে একুয়াডাক্ট (Aqueduct)ব্রিজের পিলার ।
প্রশ্ন হতেই পারে, একুয়া ডাক্ট আসলে কি ?? আজকের মূল গল্পটা একুয়া ডাক্ট নিয়ে ।
রোমান সাম্রাজ্যে তখন রমরমা। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ তাদের পদানত।
রোমান রাজা জুলিয়াস ও তার ছেলে অগাস্টাসের হাত দিয়ে যাত্রা শুরু।
খৃষ্টপূর্ব ১০০ বছর থেকে ৪০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত রোমানরা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছে । ইউরেশিয়ার এ অঞ্চলটি তাদের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল । অতিরিক্ত খরার কারনে ওই সময়ে রোমান ইঞ্জিনিয়াররা মাথা খাটিয়ে জলের ট্রান্সপোর্টেশনের জন্য আবিস্কার করল এক প্রকার সুউচ্চ খাল বা ড্রেন যা রিসার্ভার থেকে পানি সাপ্লাই করতে পারে । এটা করতে গিয়ে কখনো কখনো দুই পাহাড়ের সংযোগ স্থলে পানির লেভেল ঠিক রাখতে গিয়ে করলো সুউচ্চ সেতু যার উপর দিয়ে তারা পানি প্রবাহিত করত।
এই পানি সরবরাহের ধারনা ইউরোপ, গ্রীস, আফ্রিকা পর্যন্ত চলে গেল। ইস্তাম্বুল একুয়াডাক্ট ব্রিজের পাশে রাস্তার উপর সেই ব্রিজের কিছু অংশ আজো টিকে আছে যার দৈর্ঘ্য ৯২১ মিটার এবং যেটা তৈরী হয়েছিল আনুমানিক ৩০০ খৃষ্টাব্দের দিকে।
এমন নিদর্শন গ্রীস , ইউরোপে এখনো দেখা যায়। ঐ সময়ে বিজ্ঞান একেবারে দুর্বল ছিলনা তা ঐ সময়ের বিভিন্ন স্থাপনা দেখলেই বোঝা যায়।