করোনাভীতি কাটিয়ে ফের সরগরম বারডেম হাসপাতাল

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ভীতিতে দেশের হাসপাতালগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। গত বছরের তুলনা এ বছর হাসপাতালে তিন লাখেরও বেশি রোগীর উপস্থিতি কম ছিল। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) মাধ্যমে রাজধানীর বারডেমসহ সারাদেশে ১১৪টি হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক কেন্দ্রে ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুভীতি কাটিয়ে রোগীদের ভিড়ে আবারও সরগরম হচ্ছে বাডাস পরিচালিত হাসপাতালগুলো।
বাডাসের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর হাসপাতালে পুরোনো ও নতুন মিলিয়ে তিন লক্ষাধিক রোগীর কম উপস্থিতি ছিল। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে (১ জুলাই থেকে ৩০ জুন) সারাদেশে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ছিল ৫২ লাখ ৭৬ হাজার। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে একই সময়ে রোগীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৭১ হাজারে। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরে হাসপাতালে আগত রোগীর সংখ্যা তিন লাখ পাঁচ হাজার কম ছিল।
সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুভীতি কাটিয়ে রোগীদের ভিড়ে আবারও সরগরম হচ্ছে বাডাস পরিচালিত অন্যান্য হাসপাতাল। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে রোগীদের ভিড় আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছিল। করোনাপূর্ববর্তী সময় বারডেমের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও করোনাভীতিতে এ সংখ্যা কমে তিনশতে নেমে আসে। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ৬০০ রোগীও হতো। আগস্ট থেকে ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।
বারডেম হাসপাতালের মহাপরিচালক কাইয়ুম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। পরবর্তীতে এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই মাসে হাসপাতালটিতে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কজনকভাবে কমে যায়। বর্তমানে একেবারে স্বাভাবিক না হলেও আগের মতোই রোগীর ভিড় দিন দিন বৃদ্ধি পাছে।
বাডাস মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বারডেম হাসপাতালের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে এক হাজার ৮০১ জন, ২৭৯ জন, ৪৬৪ জন, ৯০৯ জন, ৯৭৫ জন এবং এক হাজার ৬৪৩ জন। তিনি বলেন, করোনাভীতিতে ২০১৮-২০১৯ সালের তুলনায় ২০১৯-২০২০ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নতুন রোগীও কম শনাক্ত হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ সালে নতুন শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল চার লাখ ৯৭ হাজার। ২০১৮-২০১৯ সালে এ সংখ্যা কমে তিন লাখ পাঁচ হাজারে দাঁড়ায়। অর্থাৎ বিগত বছরের তুলনায় এ বছর এক লাখ ৯২ হাজার জন কম রোগী শনাক্ত হয়েছে।
বাডাসের সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরুতে সবার মধ্যে ভীতি কাজ করেছে। বারডেমসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা কমে যায়। শুরুর দিকে করোনায় আক্রান্ত রোগীর পাশে স্বজনরাও থাকতে ভয় পেতেন। হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে স্বজনদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
তবে বর্তমানে ভীতি আগের পর্যায়ে নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, করোনায় সংক্রমিত হলে ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি বেশি থাকে- এমন গবেষণা প্রতিবেদন না থাকলেও সাধারণভাবে বলা যায় অন্যান্য সাধারণ রোগীর চেয়ে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি থাকে। তদুপরি কারও যদি ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয় তবে তার ঝুঁকি আরও বেশি থাকে।


বিজ্ঞাপন