চট্রগ্রাম প্রতিনিধি : দুবাই প্রবাসী চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী এক কোটি টাকা চাঁদা না দেওয়ায় বিদেশে পলাতক শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নির্দেশে তার অনুসারীরা নগরীর বিবিরহাট এলাকায় তার বাসভবনে গত ২১ এপ্রিল ভোরে পেট্রোল বোমা হামলা করে। শুধু তাই নয়, এ ঘটনা ঘটানোর পর ওই ব্যবসায়ীকে ফোন করে সাজ্জাদের অনুসারী ‘ঢাকাইয়া’ আকবর দাবিকৃত চাঁদা বুঝিয়ে না দিলে তার ছোট ভাইকে ‘শেষ’ করে দেওয়ার হুমকিও দেয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গতকাল রোববার আদালতে জমা দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচলাইশ থানার এসআই নূরুল আলম। গত ১৭ নভেম্বর মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশে পলাতক শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের বিরুদ্ধে এটিসহ কয়েকটি মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে আদালতে। আমরা যেকোনো মূল্যে তাকে দেশে আনার চেষ্টা করছি।
মামলার বাদী নূরুল আক্কাছ সাংবাদিকদের জানান, আমরা দুই ভাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে থাকি অনেক বছর ধরে। চান্দগাঁও থানাধীন হাজীরপুল এলাকায় আমাদের পৈতৃক জমিতে গত আট মাস ধরে আরেকটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০ এপ্রিল বিকালে নগরীর আলোচিত সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া আকবর নামে এক লোক দুবাইয়ে আমার বড় ভাই আবছারকে ফোন দিয়ে বলে, ভারত থেকে সাজ্জাদ ভাই ফোন করবে, ফোন যেন উনি রিসিভ করেন। পরে শিবিরের ক্যাডার সাজ্জাদের পরিচয় দিয়ে ভারতের একটি নম্বর থেকে আমার বড় ভাইকে ফোন করে এক লোক। সে বলে আমাদের ভবন থেকে একটি ফ্ল্যাট না হয় এক কোটি টাকা দিতে হবে তাকে।
আক্কাছ বলেন, ২০ এপ্রিল ওই ফোন পাওয়ার পর দুবাই থেকে আমার ভাই আমাকে বিষয়টি জানান। কিন্তু ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আমরা পুলিশকে কিছু জানাতে পারিনি। পরিচিত এক সাংবাদিকের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে তিনি আমাকে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেন। ভেবেছিলাম সকালে গিয়ে জিডিটা করব। তার আগেই ভোরে আমাদের বাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী জানিয়েছেন, ২১ এপ্রিল ভোর সোয়া ৪টার দিকে একটি সিএনজি টেঙিতে করে পঁাঁচজন যুবক এসে পরপর কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে বাড়ি লক্ষ্য করে। প্রচণ্ড শব্দে সেগুলো দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরিত হয়। এরপর টেঙিতে করে তারা চলে যায়। পরে তারা দুবাইয়ে আমার ভাইকে ফোন করে বোমা মারার বিষয়টি জানায়। বলে, আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে তাদের সাথে মিটমাট না করলে আমি রাস্তায় বের হলে তাদের যা করার তা করবে। কারণ তাদের বড় ভাই সাজ্জাদ সেরকম নির্দেশই দিয়েছে। পাশাপাশি আমাকে হুমকি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠায় অনবরত। এ ঘটনায় আমি পাঁচলাইশ থানায় মামলা করি অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে। পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক সাংবাদিকদেরকে বলেন, এ মামলাতেই শুধু নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২ নং গেট, শেরশাহসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং তদন্তের ভিত্তিতে দেখা গেছে প্রতিটি ঘটনার নেপথ্যে দেশের বাইরে বসে কলকাঠি নাড়ছে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ। এজন্য এ মামলাতেও চার্জশিটে তাকে আসামি করা হয়েছে।
বহদ্দারহাটে ২০০০ সালে ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ আটজনকে গুলি করে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিবিরকর্মী সাজ্জাদ হোসেন খান অনেক বছর ধরে পলাতক। নগরীতে ইতোপূর্বেও সাজ্জাদ তার সহযোগী সরোয়ার ও ম্যাঙনের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করত। চাঁদা না দিলে কিংবা দিতে দেরি হলে বাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা কিংবা গুলি করত। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার নয়াহাট এলাকায় এক গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবির পর তার বাড়িতে বোমা ছোড়া হয়েছিল। ওই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি সাজ্জাদের সহযোগী সরোয়ারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এর আগেই সে দুবাই থেকে দেশে ফিরেছিল। সাজ্জাদের অপর সহযোগী ম্যাঙন বর্তমানে দেশে আছে বলে শোনা যায়।