৬৯-র গণঅভ্যুত্থানের সময়ও পাকিস্তানী প্রভুদের ষড়যন্ত্র তত্ত্বে তৎপর খন্দকার মোস্তাক

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : মুজিবের চাইতে খোন্দকার বয়সে বড়। আওয়ামী লীগ যখন গঠিত হয় তখন থেকে দলে তার স্থান মুজিবের সমান। তার ওপর তিনি কিনা একজন অ্যাডভোকেট। অতএব নিজেকে তিনি সবসময় ঠাওরাতেন মুজিবের চাইতে বড়ো নেতা বলে। অথচ এমন ফ্যাসাদ, মুজিবের বিপুল জনপ্রিয়তা ও প্রবল। সংগঠন শক্তির সামনে দাঁড়াতেই দিশে পাচ্ছিলেন না। কেবল বিদ্বেষ আর। ঈর্ষার আখায় আঁচ দেওয়া ছাড়া কিছু করবার ছিল না তার।


বিজ্ঞাপন

মুজিব তাঁকে দলে জায়গা দিলেও তাঁর এই বয়ঃজ্যেষ্ঠ কমরেডকে। কোনোক্রমেই নজরুল, তাজউদ্দীন বা মনসুর আলীর ওপরে স্থান দেওয়ার। উপায় ছিল না। দলে তার নম্বর পাঁচ। সহ-সভাপতির কুরশিখানা পেয়েই খুশি থাকতে হল জনাব খোন্দকারকে। কিন্তু খুশি কি এতে হওয়া যায়? কদিন রইলেন ব্যাজার মুখে। তার পরে গেলেন ক্ষেপে। শুরু হল ষড়যন্ত্রের জাল বোনা।


বিজ্ঞাপন

কাদের নিয়ে জোট পাকানো যায়, একটা ফাই-ফর্দ করে নিলেন খোন্দকার। যোগাযোগ পাকা করে গোপনে মিলিত হতে লাগলেন একটা আস্তানায়। আস্তানাটি ছিল ঢাকার অভিযান প্রেসের উপরের একটি ঘরে। সেখানে একে একে অনেক নাক দেখা গেল। মুন্সিগঞ্জের শাহ মোয়াজ্জেম, ফরিদপুরের কে এম ওবায়েদ, কুষ্টিয়ার আজিজুর রহমান, ঢাকার জহিরউদ্দীন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন প্রমুখ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাহেরউদ্দীন ঠাকুরের সঙ্গে আগে থেকেই লাইন হয়ে গেছে খোন্দকারের। ঠাকুর-মিয়ার ভূমিকা তখন-ইত্তেফাক-এর রিপোর্টার।

আয়ুব-বিরোধী আন্দোলনের সময় শয়তানের খেল শুরু করে খোন্দকার গোষ্ঠী। আন্দোলন যখন চরম পর্যায়ে, গণ-অভ্যুত্থানের জ্বালামুখীতে, আতঙ্কিত আয়ুব হঠাৎ রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গোলটেবিল। বৈঠকের প্রস্তাব দিলেন। মুজিব তখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ। আয়ুব বললেন, এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য মুজিবকে তিনি প্যারোলে ছাড়বেন। কিন্তু এ-সময় আয়ুবের সঙ্গে কোনো রকম বৈঠকে বসার প্রশ্নে মতান্তর দেখা দিল আওয়ামী লীগে। অনেকেই এর বিরোধী। খোন্দকারগোষ্ঠী ব্যস্ত হয়ে পড়ল বৈঠকের জন্য। ইত্তেফাক সম্পাদক মরহুম মানিক মিয়া প্রচারে নামল খোন্দকারের তরফে। উল্টো দিক থেকে রুখে দাড়ালেন তাজউদ্দীন। তিনি বুঝেছিলেন, গণ-অভ্যুত্থানে আয়ুব শাহী এখন টলটলায়মান। তিনি চাপ দিলেন সুযোগ বুঝে- নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হলে আগে তথাকথিত আগরতলা-ষড়যন্ত্র-মামলার নিঃশর্ত প্রত্যাহার চাই। প্যারোল-ট্যারোল চলবে না। তা না হলে এই আন্দোলন কেবল চলবেই না, আরও উদ্দাম হয়ে উঠবে।

তৎপর হয়ে উঠল খোন্দকারগোষ্ঠীও। প্যারোলেই রাজি হওয়ার জন্য তারা মুজিবের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। বেগম মুজিব তখন কুর্মিটোলার জেলে তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করলেন। বললেন- প্যারোলের অপমান মাথায় করে বেরোলে আমি আত্মহত্যা করব। মুজিব জেল থেকে জানিয়ে দিলেন- প্যারোল নয়, পূর্ণ মুক্ত মানুষ হিসেবে ছাড়া তিনি বৈঠকে বসতে রাজি নন। আগে আগরতলা মামলা তুলে নিতে হবে।
মুজিবের এই সিদ্ধান্ত যে কত দূরদর্শিতার পরিচায়ক, পরবর্তী ঘটনায় তা প্রমাণিত হয়েছে।

সূত্র- মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র পৃষ্ঠাঃ ২৮, ২৯