বিশেষ প্রতিবেদক : হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে অর্থ লেনদেন করে রায় পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে এক মামলার শুনানির শুরুর আগেই এই অভিযোগ তোলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।
এসময় অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম আদালতকে জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত এক রিট মামলায় অবৈধভাবে ডিক্রি জারির মাধ্যমে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী রায় পাল্টে দিয়েছেন।
অভিযোগ শুনে আপিল বিভাগ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কত টাকার বিনিময়ে এই রায় হয়েছে? আমাদের তা জানান। এমন আদেশ হাইকোর্ট দিতে পারেন না। এটা নজিরবিহীন। এভাবে আদেশ হলে সুপ্রিম কোর্ট থাকবে না।
সাধারণ মানুষের হাইকোর্ট সম্পর্কে কী ধারণা হবে?- এমন প্রশ্নও করেন আদালত।
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এটি একটি সিরিয়াস মেটার। রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো উচিত। ওই বিচারপতিকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা উচিত।
তখন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তাকে শোকজ করতে হবে, কীভাবে এই আদেশ দিলেন?
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত ষোড়ষ সংশোধনী উচ্চ আদালতে বাতিল হওয়ায় এবং ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকায় বিচারপতিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কোনো ফোরাম নেই।
তখন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ বলেন, আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যকে সমর্থন করি। আমরা মনে করি বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষার জন্য যে বেঞ্চের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
শুনানি শেষে আপিল বিভাগ নি¤œ আদালতের ডিক্রি জারি সংক্রান্ত সকল আদেশ বাতিল করেন। একইসঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের আদেশ মঞ্জুর করে এম আর ট্রেডিংয়ের মিজানুর রহমানকে এক কোটি টাকা জরিমানা করেন আদালত।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আমিসহ আরো দুজন ও বারের সভাপতি সেখানে ছিলাম। আমরা সবাই এটার সমর্থন জানিয়েছি। এটার ব্যাপারে আপিল বিভাগও সংক্ষুব্ধ। এ ধরনের রায়ে আদালতের মর্যাদা ব্যাহত হয়, ক্ষুন্ন হয়। সেই প্রেক্ষিতে আমরা আদালতের কাছে আবেদন রেখেছি। বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে হোক বা আদালত যেভাবে বিবেচনা করে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা প্রার্থনা করেছি।
তিনি বলেন, একটি মামলার শুনানি প্রাক্কালে অ্যাটর্নি জেনারেল এই বক্তব্য রেখেছেন আদালতের কাছে। তিনি বলেছেন একটি অ্যাবনরমাল অর্ডার হয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগে। এই অনিয়মের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো যেতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু এটি দ্বৈত বেঞ্চ। দ্বৈত বেঞ্চের আদেশটা যৌথ আদেশ। সুতরাং যদি কোন দায় দায়িত্ব থাকে, এটা যৌথ দায় দায়িত্ব। সেজন্য যদি কোন পদক্ষেপ নিয়ে নেন। তাহলে দ্বৈত বেঞ্চে যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধেই।
এ মামলার শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, ফিদা এম কামাল, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ ও রোকন উদ্দিন মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।