বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিমান বাহিনীর শুভেচ্ছা

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর প্রতিষ্ঠা করেন। সোমবার (০৪-০১-২০২১) ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব কোন বিমান ছিল না। ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি কিলো ফ্লাইটের গর্বিত সদস্য ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ, বীর উত্তম ও ক্যাপ্টেন কাজী আবদুস সাত্তার, বীর প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতে তাঁর বাসায় যান। তারা বঙ্গবন্ধুর কাছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ডিসি-৩ বিমানটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর নিকট হস্তান্তরের অনুরোধ করেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি অটার বিমান, একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার ও ডিসি-৩ বিমান নিয়ে কিলো ফ্লাইট নামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। এই ডিসি-৩ বিমানটি ছিল ভারতের যোধপুরের মহারাজা কর্তৃক ব্যবহৃত ব্যক্তিগত বিমান যাতে ‍ছিল মাত্র ১০ টি আসন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অপারেশন কিলো ফ্লাইটে ব্যবহৃত ডিসি-৩ বিমানের পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন আবদুল খালেক, বীর প্রতীক, ক্যাপ্টেন আবদুল মুকিত, বীর প্রতীক এবং ক্যাপ্টেন কাজী আবদুস সাত্তার, বীর প্রতীক। মুক্তিযু্দ্ধকালীন সময়ে ডিসি-৩ বিমানটি সৈন্য, মালামাল ও সামরিক সরঞ্জামাদি পরিবহনে ব্যবহার করা হতো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই বিমানটি ভিআইপি ও ভিভিআইপি যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হতো। ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ, বীর উত্তম ও ক্যাপ্টেন কাজী আবদুস সাত্তার, বীর প্রতীক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ডিসি-৩ বিমানটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর নিকট হস্তান্তরের অনুরোধ করলে তিনি তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ব্যবহৃত ডিসি-৩ বিমানটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর নিকট হস্তান্তর করা হয়।


বিজ্ঞাপন

এই বিমানের মাত্র দশটি আসন থাকায় এটি যাত্রীবাহী বিমানের উপযোগী করার প্রয়োজন দেখা দেয়। পরবর্তীতে বিমানটিতে বিশেষ পদ্ধতিতে বেঞ্চ সংযোজন এবং কিছু রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষে ১৬ টি আসনে উন্নীত করা হয়েছিল। ডিসি-৩ বিমানের প্রথম ফ্লাইটটি ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম-এ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে সিলেট, যশোর ও ঈশ্বরদীতে উক্ত বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনার মাত্র ৬ দিন পরে ডিসি-৩ বিমানটি একটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনাকালে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে টেকঅফের সময় বিধ্বস্ত হয় এবং ক্যাপ্টেন খালেক, ক্যাপ্টেন নাসির হায়দার, ক্যাডেট পাইলট শরফুদ্দিন, ক্যাডেট পাইলট মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ক্যাডেট পাইলট মোস্তফাসহ সকলেই প্রাণ হারান।

এর পরপরই ভারতীয় বিমান সংস্থা থেকে দুটি Fokker F-27s বিমান ক্রয় করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আবারও তার যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয় যা সম্পূর্ণভাবে সরকারি মালিকানাধীন এবং এটি ১৩ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্যদ দ্বারা পরিচালিত যেখানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের ১৯টি শহরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এই সংস্থার বিমান বহরে মোট ১৯টি উড়োজাহাজ রয়েছে যার মধ্যে ০৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, ০২টি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিম লাইনার, ০৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিম লাইনার, ০৬টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও ৩টি ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ। বর্তমানে বিমানের বহর যেকোন সময়ের তুলনায় তারুণ্যদীপ্ত। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়ার সেরা ১০টি এয়ারলাইন্সের একটি হিসেবে বিশ্বমান অর্জনের রূপকল্প সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আবারও শুভেচ্ছা এবং এই সংস্থার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।