শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রায় এক বছর দুশ্চিন্তায় অভিবাবকরা

শিক্ষাঙ্গন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২০ সালের মার্চ মাসের ৮ তারিখে বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এরপর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত বছর পর ১৬ই মার্চ সরকার সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। প্রথমে ৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে করোনাভাইরাসে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় এখনো খুলেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদিকে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই অস্বাভাবিক বিরতিতে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা; অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসিকতা।
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ প্রায় এব বছর হলো বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না। এতো লম্বা সময় স্কুলের বাইরে থাকার কারণে শিশুদের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমতো দীর্ঘ সময় ধরে স্কুলে না যাওয়ার ফলে স্কুলে যাওয়ার প্রতি বাচ্চাদের মধ্যে অনীহার সৃষ্টি হতে পারে। লেখাপড়াতেও তারা অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। এমন কী বাচ্চাদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন আসাও অসম্ভব কিছু না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এত দীর্ঘ সময় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় পাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ওপর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কারণ তারা এখনো বাচ্চা। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তাদের এই সময়টিতে পড়াশুনার পাশাপাশি সামাজিকতা এবং প্রাথমিক বিষয়েও অনেক কিছু শিখে। এক্ষেত্রে স্কুলের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে প্রায় এক বছর ধরে বাসায় থাকতে থাকতে বাচ্চাদের সঠিক মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অনভ্যস্ত হওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে শিশুদের মধ্যে।
এদিকে বাচ্চাদের নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অভিবাবকেরাও। সারাদিন বাসায় থেকে ছেলে-মেয়রা মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ সারাদিন ইন্টারনেটে পড়ে থাকে; আবার কেউ কেউ সারাদিন বিভিন্ন গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অভিবাবকরা বলছেন, বাচ্চারা ইন্টারনেট এবং মোবাইল গেমস থেকে ভালো কিছু শিখতে পারছে না। দিন দিন তারা মোবাইলের প্রতি এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে; এতে তাদের সুন্দর ভবিষ্যত নিয়ে এখন আমরা শঙ্কায় আছি।
রাজধানীর মিরপুর আইডিয়াল ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর মা লাকী আক্তার সকালের সময়কে বলেন, আমার একমাত্র মেয়ে ক্লাস থ্রী’তে পড়ে। এবছর পরীক্ষা হয়নি। পরীক্ষা না দিয়েই ও ক্লাস ফোরে ওঠেছে। এইভাবে পরীক্ষা ছাড়া ওপরের ক্লাসে ওঠলে বাচ্চাদের পরীক্ষার প্রতি অনীহা তৈরি হতে পারে। স্কুল বন্ধ হয়েছে প্রায় এক বছর হয়ে যাচ্ছে। আর স্কুল বন্ধ থাকায় আমার মেয়েকে সারাক্ষণই বাসায় থাকতে হচ্ছে। বাসায় থেকে সময় কাটানোর জন্য ও দিন দিন মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। সারাদিন মোবাইলে ইন্টারনেট এবং গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। পড়াশুনার প্রতি তার একদমই মনোযোগ নেই।
ধানমন্ডির বাসিন্দা তারিক রহমান। তার এক ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী; তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। তারিক রহমান এ বিষয়ে সকালের সময়কে বলেন, স্কুলে না যেতে যেতে আমার একমাত্র ছেলে এখন লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সারাদিন শুধু মোবাইলে গেমস খেলে সময় পার করছে। যেভাবে সে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং লেখাপড়ায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে তাতে আমার বাচ্চাকে নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত।
মিরপুর মনিপুর স্কুলের শিক্ষার্থী রুনু; তার বাবা সকালের সময়কে বলেন, স্কুলে পড়ালেখা না হলে বাচ্চারা বাসায় পড়তে চায়না। বাচ্চারা স্কুলের শিক্ষকে দেখে যেভাবে ভয় পায় বাসায় তারা সেই ভয় টা পায় না। যার জন্য বাসায় আমার বাচ্চা একেবারেই পড়তে চায় না। সারাদিন শুধু মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মোবাইলে গেমস খেলা এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেই তার সময় কাটে। মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে যে শুধু লেখাপড়ায়ই মনোযোগ হারাচ্ছে তা নয়; তারা খাওয়া-দাওয়াই ঠিকমতো করছে না।
এ বিষয়ে মিরপুর আইডিয়াল ল্যাবরেটরী ইনস্টিটিউট এর ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জন সকালের সময়কে বলেন, বাধ্য হয়েই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে যাওয়া, স্কুল থেকে ফিরে বাসায় পড়তে বসা এবং নিয়মিত হোমওয়ার্কগুলো তাদের নিয়মিত রুটিনের মতো ছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় তাদের রুটিন পরিবর্তন হয়ে গেছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ হারাচ্ছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে আমরা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের আবার আগের মতো নিয়মিত রুটিনের মধ্যে আনতে চেষ্টা করবো।


বিজ্ঞাপন