অভয়নগরে কোচিং বাণিজ্যে মেতে উঠেছে কোচিংবাজ শিক্ষকরা!

সারাদেশ

সুমন হোসেন, অভয়নগর (যশোর) থেকে : সারা দেশে মহামারী করোনা সংক্রমণের ব্যাপক ভয়াবহতার পরেও থেমে নেই কিছু অসাধু কোচিংবাজ শিক্ষকরা। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদেরকে জিম্মি করে মোটা অংঙ্কের টাকার বিনিময়ে দের্দারছে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কোচিং ব্যবসা। বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোভিড-১৯ (করনা ভাইরাস) সংক্রান্ত নোটিশ অনুযায়ী সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
এদিকে কিছু অর্থলোভী শিক্ষকরা পূর্বের ন্যায় তাদের কাছে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদেরকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে গোপনে কোচিং ব্যবসা শুরু করে, তা চালিয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। দিনের পর দিন ব্যাপক হারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। অপরদিকে বাড়ছে করনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাক্তির মৃত্যুর সংখ্যাও। এ বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তারই ধারাবাহিকতাই ইতিমধ্যে কঠোর অবস্থানে নেমেছে প্রশাসন। তারপরও করোনার এই ভয়াবহতার মাঝেও অভয়নগরে থেমে নেই কোচিং বাণিজ্য। বিশেষ ক্লাসের নামে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চলছে এ কোচিং ব্যবসা।
নওয়াপাড়ায় বেশ কিছু প্রাইভেট স্কুলও সরকারের নিয়ম-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিয়মিত ক্লাস ও কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশাসনেও তোলপাড় শুরু হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শ্রেণীকক্ষে কোচিং করানোর অপরাধে গ্রাম-অঞ্চলের দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন। এদিকে নওয়াপাড়ায় শহরাঞ্চলে প্রশাসনের নাকের ডগায় কোচিং ব্যবসা দের্দারছে চললেও কোন পদক্ষেপ না নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমিনুর রহমান সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও ফুলেরগাতি হরিশপুর নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হঠাৎ পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং করানোর চিত্র দেখেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে কোচিং করানোর প্রমাণ পান।
এলাকাবাসি ও শিক্ষার্থীরা জানায়, সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে দীলিপ কুমার দাস ও ফুলেরগাতি হরিশপুর নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চিরঞ্জিত পাড়ে নামের দুই শিক্ষক প্রাইভেট নামে ছাত্রছাত্রীদেরকে কোচিং করাচ্ছিলেন। করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস, প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ রাখার কথা। ঐ দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট ও কোচিং করানোর বিষয়ে আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট কারণ দর্শানোর জবাব দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম ধর বলেন, আমি অসুস্থ, যে কারনে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছি। স্কুলের কোন শিক্ষক প্রাইভেট কোচিং করাচ্ছিল কি না? তা আমার জানা নেই। এই ব্যাপারে ফুলেরগাতি হারিশপুর নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিংকর কুমার ধর বলেন, বিদ্যালয়ে কোচিং করানো হচ্ছিলো না। কিছু শিক্ষার্থী এ্যাসাইনমেন্ট বোঝে, তাই তারা বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল।
গোপন সূত্রে জানা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি স্কুল-কলেজের ও এমপিও ভূক্ত স্কুলের শিক্ষকরা সুকৌশলে কোচিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে, মাসে ১২ দিন থেকে ১৫ দিন তাদেরকে পড়ানো হয়। ১ জন শিক্ষার্থীকে ১ মাসে কোচিংবাজ শিক্ষকদেরকে কোচিং ফি বাবদ ৫’শ থেকে ১৫’শ টাকা করে দিতে হয়।
এলাকাবাসির দাবী, উপজেলা প্রশাসন এসব চিত্র দেখে কোচিংবাজ শিক্ষকদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করলে অনেক গরীব-অসহায় ছাত্রছাত্রী সরকারের মহতী উদ্দ্যেগে বিনামুল্যে লেখাপড়া করতে পারবে। ছাত্রছাত্রীদেরকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না। ফলে তাদেও লেখাপড়ার মান আরও উন্নয়ন হবে।
নওয়াপাড়া পৌরসভা এলাকার মধ্যে রয়েছে আনুমানিক অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার। এসব কোচিং সেন্টারে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা চলে নিষিদ্ধ অবৈধ কোচিং বাণিজ্য। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা এ সমস্ত কোচিং সেন্টারের মালিক। তারা নিজে পড়ায় এবং বহিরাগত ছেলেদের দিয়ে মাসিক বেতন চুক্তিত্বে কোচিং ব্যবসার চাকুরী দেয়। শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়েও চলছে এই নিষিদ্ধ কোচিং বানিজ্যর ব্যবসা। উপজেলার সরকারি স্কুল কলেজ ও এমপিও ভুক্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বাসা ভাড়া নিয়ে নামে-বেনামে চালাচ্ছেন এই কোচিং বাণিজ্য ব্যবসা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ কোচিং বাণিজ্যের বন্ধ করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোচিং করানোর প্রমান পেলে যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অথবা ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমিনুর রহমান জানান, পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবৈধ কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা হবে। যদি কেউ গোপনে এই কোচিং বাণিজ্যে চালাই, তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিজ্ঞাপন