নড়াইলে ৭০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ’র অপরাধে শাস্তির দাবিতে ছাত্রলীগের মানববন্ধন!

সারাদেশ

সুমন হোসেন, নড়াইল থেকে : নড়াইল সদর হাসপাতালের ২১ মাসের ইউজার ফি এর (হাসপাতালের বিভিন্ন খাত থেকে আয়ের টাকা) ৭০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নড়াইলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ১১.৩০ মিনিটে আধুনিক সদর হাসপাতাল চত্বরে নড়াইল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আয়োজনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন চলাকালে ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানায় বক্তারা। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিলয় রায় বাধন, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সিদ্ধার্থ সিংহ পল্টু।
মানববন্ধনে নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিঠুন বিশ্বাস রাজু, সন্দীপ মজুমদার, মেহেদী হাসান সুমন, আশিক দাস ও স্কুল বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আলামিন মোল্লা, উপ-প্রচার সম্পাদক নাসিম সিকদার ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নড়াইল সদর হাসপাতালের ২১ মাসের ইউজার ফি-এর (হাসপাতালের বিভিন্ন খাত থেকে আয়ের টাকা) প্রায় ৭০ লাখ টাকা হিসাবরক্ষক জাহান-আরা-খানম (লাকি) ব্যাংকে জমা না দিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি জানাজানি হবার পর থেকে নড়াইল জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে বিভিন্ন দফতওে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে জেলার বিভিন্ন মহলে চলছে গুঞ্জন। গোপন সূত্রে জানা গেছে, ইউজারের এ অর্থ হাসপাতালের হিসাবরক্ষকের প্রতিমাসে ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা। হিসাবরক্ষক ব্যাংকে এ অর্থ জমা না দিয়ে তা আত্মসাৎ করে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে জাল চালানের কপি দেখাচ্ছেন।
নড়াইল সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জাহান-আরা-খানম (লাকি) বিগত ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সদর হাসপাতালে হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। হাসপাতালের রোগী ভর্তি ফি, অপারেশন থিয়েটার ফি, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা ফি, এক্সরে, প্যাথলজি, আলট্রাসনো ও ব্লাড ব্যাংক, কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ ফি, অ্যাম্বুলেন্স, ইসিজি, কেবিন ও পেইং বেড ফিসহ বিভিন্ন খাত থেকে যে আয় হয় তা প্রতি মাসে একবার করে সোনালী ব্যাংক নড়াইল প্রধান শাখায় জমা দিতে হয়। এই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়। কিন্তু বর্তমান হিসাবরক্ষক জাহান-আরা-খানম (লাকি) হাসপাতালে যোগদানের পর কোনো অর্থ জমা দেননি। টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে তিনি জাল জালিয়াতি করে তা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, হিসাবরক্ষক সদর হাসপাতালে যোগদানের পর ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রায় ৪৫ লাখ টাকা এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরের নয় মাসের প্রায় ২৫ লাখ টাকা তিনি ব্যাংকে জমা দেননি। তিনি সোনালী ব্যাংকে এসব অর্থ জমা দেওয়ার যে চালান দেখাচ্ছেন, যা ভুয়া ও জাল বলে জানান হাসপাতালের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।
নড়াইল সদর হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক ডা: আব্দুস শাকুর জানান, ইউজার ফি সঠিকভাবে ব্যাংকে জমা পড়ছে কি না তা যাচাই করার জন্য হিসাবরক্ষকের কাছ থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সিল সই ও কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত চালান নিয়ে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সোনালী ব্যাংক, নড়াইল প্রধান শাখায় যাই। সেখানে গিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি গত ২১ মাসে অর্জিত প্রায় ৭০ লাখ টাকার মধ্যে কোন টাকা ব্যাংকে জমা পড়েনি। সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার জানিয়েছেন, চালানগুলোর সই ও সিল তাদের না। এ ঘটনার পর হিসাবরক্ষককে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং তিন কর্মদিবসের মধ্যে আত্মসাৎকৃত সমুদয় অর্থ ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য বলেছি। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানাতে তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত’র জন্যে হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা: আকরাম হোসেনকে প্রধান এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মশিউর রহমান বাবুকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত হিসাবরক্ষককে পরবর্তীতে ইউজার ফি জমা দেওয়ার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে হাসপাতালের প্রধান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক মঞ্জুরুল আলমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক নড়াইল প্রধান শাখার ম্যানেজার মো: আবু সেলিম বলেন, নড়াইল সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক যেসব চালান নিয়ে ব্যাংকে এসেছিলেন, চালানে লেখা কোনো টাকা ব্যাংকে জমা পড়েনি।চালানে ব্যাংক কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক জাহান-আরা-খানম (লাকি) বলেন, কিছু টাকা জমা দিতে বাকি আছে, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে জমা দিয়ে দেয়া হবে। তবে কত টাকা বাকি রয়েছে এ পশ্নের উত্তরে তিনি বলতে পারেন নি।
নড়াইল সদর হাসপাতালের সাবেক হিসাবরক্ষক মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত একইভাবে হাসপাতালের ইউজার ফি ব্যাংকে জমা না দিয়ে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দায়ের করা দুদকের মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে দু’দফায় হাসপাতালের ইউজার ফি-এর প্রায় দু’কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জেলা শহরের সর্বত্র চলছে নানা গুঞ্জন। গত দুদিনে এ ঘটনা টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতারা।


বিজ্ঞাপন