ষাটোর্ধ্বদের মৃত্যু বেশি

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

*করোনায় মৃত্যু আবার বাড়ল
*ভারতে সংক্রমণে বিশ্ব রেকর্ড

 

এমএ স্বপন : দেশে একদিনের ব্যবধানে করোনায় মৃত্যু আবারও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৯৫ জন। এ নিয়ে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মোট মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৩ জনের। মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা ছিল ৯১ জন।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২৮০ জন। এতে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩২ হাজার ৬০ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৭ হাজার ৭২ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৩ জন।
অন্যদিকে করোনায় মৃতদের মধ্যে ষাটোর্ধ্বদের সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই বয়স্ক। আমরা প্রতিদিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখতে পাচ্ছি, ষাটোর্ধ্বরাই বেশি মৃত্যুবরণ করছে এবং তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের রোগীরাই বেশি। তবে করোনার নতুন যে ধরন এসেছে, তাতে তরুণরাও ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে। সুতরাং জটিল রোগে আক্রান্ত বা আক্রান্ত নয়, এটা দেখার কোনো সুযোগ নেই। সবাইকেই সচেতন হতে হবে। মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধিতে জোর দিতে হবে।
তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পার করছে দেশ। সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। করোনার নতুন ধরন ও মিউটেশনের কারণে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হলো অক্সিজেন সিলিন্ডার। সারাদেশে ২০/২৫ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার ছড়িয়ে আছে।
রোবেদ আমিন বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নতুন করে যোগ হয়েছে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে ইতোমধ্যে ১৩৮ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৮ জনই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পর্যায়ক্রমে আরো দেয়া হবে। যারা নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন, তারাই শুধু এই হাসপাতালে যাবেন। আর যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে কোথাও চিকিৎসাধীন, তারা এখানে এসে ভিড় জমাবেন না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ মুখপাত্র বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি সংক্রমণটা কমতে শুরু করেছে। তবে মৃত্যুটা বাড়ছে, যার কারণ কিছুদিন পূর্বে বেপরোয়া চলাচল। দেশে এখন কঠোর লকডাউন চলছে। আশা করছি আগামী দুই সপ্তাহ পরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে যাবে।
ভারতে সংক্রমণে বিশ্ব রেকর্ড: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় রীতিমতো কাঁপছে ভারত। দেশটিতে ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত কয়েকদিন ধরে দেশটির দৈনিক করোনা সংক্রমণ দুই লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বুধবার সেই সংখ্যা পৌঁছেছে তিন লাখের কাছাকাছি। এক দিনে আক্রান্তের এই সংখ্যা শুধুমাত্র ভারতে নয় বিশ্বেও সর্বোচ্চ।
একইসঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে গত কয়েকদিনে তা হাজারের ঘর পেরিয়েছে, কিন্তু বুধবার সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই হাজারের ঘর। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন রেকর্ড ২ হাজার ২৩ জন।
বুধবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৪১ জন। যা মঙ্গলবারের তুলনায় প্রায় ৩৬ হাজার বেশি। সংক্রমণের এই রেকর্ড বৃদ্ধিতে দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখের ঘর। মোট আক্রান্তের দিক দিয়ে বিশ্বে আমেরিকার পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।
মঙ্গলবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭৬১ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হলেও বুধবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩ জনে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৩ জনে।
দৈনিক বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার কারণে ভারতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সক্রিয় রোগী বেড়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৬১ জন। দেশটিতে এখন মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩৮ জন। যদিও এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে দেশটিতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমে দেড় লাখের নিচে চলে এসেছিল।
কিন্তু এরপর রোগী বাড়তে বাড়তে তা সাড়ে ২১ লাখ ছাড়িয়েছে। ফলে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগ ক্রমেই কমে আসছে। অনেক ক্ষেত্রেই একই শয্যায় একাধিক রোগীকে শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। অক্সিজেনেরও অভাব সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। অনেক জায়গায়ই অস্থায়ী করোনা সেন্টার তৈরি করে পরিস্থিতি মোবাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্য সরকার।
এদিকে সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউনও জারি করা হয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে সোমবার থেকে চলছে লকডাউন। মহারাষ্ট্রেও ‘করোনা কারফিউ’ চলছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে সপ্তাহান্তে চলছে লকডাউন। রাত্রিকালীন কারফিউ জারি হয়েছে দেশের বিভিন্ন শহরে।


বিজ্ঞাপন