কল রেকর্ডের ফরেনসিক

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র

বসুন্ধরার এমডির সঙ্গে মুনিয়ার কথোপকথন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে গুলশানে লাখ টাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া থাকা মোসারাত জাহান ওরফে মুনিয়ার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ড ফরেনসিক পর্যালোচনার জন্য আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী সোমবার এই নোটিশটি পাঠিয়েছেন। নোটিশটি স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, উক্ত নোটিশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান ও নুসরাত জাহান মুনিয়ার মধ্যে কথোপকথনের একটি রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ওই কল রেকর্ডে সায়েম সোবহান যেসব শব্দ ভিকটিম মুনিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন, তা যেকোনো নারীর জন্য অত্যন্ত অপমানজনক।
উল্লেখিত কল রেকর্ড ফরেনসিক পর্যালোচনার জন্য এবং যদি ফরেনসিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ‘অশ্লীল শব্দ’ প্রয়োগকারী ব্যক্তি সায়েম সোবহান, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে যেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান নামের একজন আইনজীবী ওই আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। রেজিস্ট্রি ডাকযোগে স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে তিনি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই কল রেকর্ড ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে উল্লেখিত বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম না দেখা গেলে পরবর্তীতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানে লাখ টাকা ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ওই দিন রাতেই মোসারাত জাহান মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। আর এই মামলা দায়েরের পরদিন বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করে পুলিশ। এরপর ওই আবেদন সেদিন মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া, গত ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনভীর। কিন্তু করোনার কারণে হাইকোর্ট আগাম জামিনের শুনানী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন। আবার গত ২ মে মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ তার বোনের মৃত্যুর ঘটনাটি হত্যা মামলা নিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চট্টগ্রামের সরকারদলীয় হুইপ পুত্র শারুনের বিরুদ্ধে আবেদন করেন।
মুনিয়ার আত্মহননের মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের নাম আসামি হিসেবে এসেছে। আর মুনিয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কোনো কথা হয়নি বলে দাবি করেছেন শারুন চৌধুরী।
হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন বলছেন, তার সাবেক স্ত্রী সাইফা রহমান মিমের সঙ্গে তানভীরের সম্পর্ক গড়ে ওঠার খবর মোসারাত জাহান মুনিয়া গত বছর তাকে জানিয়েছিলেন, তবে তা মেসেঞ্জারে।
মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় বসুন্ধরার এমডি আনভীরকে আসামি করার পর মুনিয়া-আনভীরের একটি ফোনালাপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি মুনিয়া-শারুনের হোয়াটস অ্যাপে কথিত কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশটও প্রচার হয়।
এবিষয়ে সরকার দলীয় হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন এর সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী না হলেও ভুয়া বলে জানিয়েছেন। এটি ফরেনসিক টেস্ট করলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে মুনিয়া গত বছর মেসেঞ্জারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সাবেক স্ত্রীর বিষয়ে কথা বলেছিলেন বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনার’ অভিযোগ এনেছে মুনিয়ার পরিবার। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ তারা পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল গুলশান-২-এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর বাড়ির ফ্ল্যাট বি-৩ থাকতেন মুনিয়া। সেখান থেকে কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ২২, ২৩শে এপ্রিল পরপর দু’দিন ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন সায়েম সোবহান আনভীর। বাসাটি গত ১লা মার্চ দুই বছরের জন্য ভাড়া নেন মুনিয়া। মুনিয়ার নামে ভাড়ার চুক্তি থাকলেও সংশ্লিষ্টরা জানান বাড়ির মালিকের মেয়ের জামাতা ইব্রাহিমের কাছে প্রতি মাসে ভাড়া ১ লাখ ও সার্ভিস চার্জ ১১ হাজারসহ ১ লাখ ১১ হাজার টাকা পাঠানো হতো।


বিজ্ঞাপন