মৃত্যু কমলেও শনাক্ত দ্বিগুণ

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

 

বিশেষ প্রতিবেদক : অন্তত ১৫ লাখ মানুষ আপাতত পাচ্ছেন না দ্বিতীয় ডোজের টিকা। তবে আশার কথা হলো, তাদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই দিতে চায় সরকার। যদিও সেই টিকা কোথা থেকে পাওয়া যাবে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। এদিকে দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এখন থেকেই। কোনো কোনো হাসপাতালে মজুত শেষ হয়ে গেলেও অনেকে মোবাইলে সেখানেই টিকা দেওয়ার মেসেজ পাচ্ছেন।
ষাটোর্ধ্ব মাহাতাব উদ্দিন। টিকা কার্ড অনুযায়ী তার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেবার কথা ছিল রোববার। সে মোতাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর দু’দিন এসে তিনি দেখেন নোটিশ দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
মাহতাব জানান, ডেট (তারিখ) অনুযায়ী টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য এসেছি। এসে দেখি বন্ধ।
তবে তিনি মোবাইলে টিকা নেওয়ার কোনো মেসেজ পাননি। যদিও মেসেজ পেয়ে একই হাসপাতালে টিকা নিতে এসে সোমবারও ফিরে গেছেন অনেকে। কবে টিকা পাবেন কিংবা এজন্য পরবর্তীতে মেসেজ দেওয়া হবে কিনা এসবের কিছুই জানেন না তারা।
হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, আপাতত টিকা শেষ হয়ে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী আবারও টিকা দেওয়া শুরু করবেন তারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু আমাদের স্টকে নেই। সেজন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকার অন্যদেশ থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছে। আসলে আবার দেওয়া হবে।
দেশে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন প্রায় ৫৯ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে ৩৮ লাখ দ্বিতীয় ডোজও পেয়েছেন। তবে বাকি ২১ লাখ মানুষ অপেক্ষমাণ থাকলেও টিকা আছে মাত্র ৫ লাখ ডোজ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডা. মো নাজমুল ইসলাম বলেন, যেহেতু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভ্যাকসিনের মজুদ কম। যখন পাব তাদেরকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
শুরুর দিকে এক মাস পর কিন্তু দু’মাসের মধ্যে, পরবর্তীতে দু’মাসের পরে কিন্তু তিন মাসের মাঝের কথা বলা হলেও অধিদপ্তর এখন বলছে, ৪ মাসের মধ্যে টিকা নেওয়া যাবে। এর মাঝেই অক্সফোর্ডের টিকা সংগ্রহ করা সম্ভব বলে আশাবাদী অধিদপ্তর। তবে চার মাসের মধ্যে টিকা পাওয়া না গেলে কী হবে সেটির কোনো সদুত্তর নেই অধিদপ্তরের কারো কাছেই।
ওইদিকে চীনের উপহারের ৫ লাখ ডোজ চাইলেই সাধারণ জনগণকে দেওয়াও যাবে না। রোববার থেকে শুরু হয় চীনের টিকা দেওয়া কার্যক্রম, অধিদপ্তরও বলছে যে পরিমাণ টিকা আছে তা দিয়ে চলা সম্ভব সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী তা-ব চালানো মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩০ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২১১ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন আরও ১ হাজার ২৭২ জন। দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ১১৫ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ২৪ হাজার ২০৯ জন। এদিন মোট করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮৫৫ জনের।
এর আগে সোমবার দেশে করোনায় ৩২ জন মারা যান, আর নতুন করে শনাক্ত হয় ৬৯৮ জন।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ১০ হাজার ৭৩৩ জন। এখন পর্যন্ত বিশ্বে মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৪ লাখ ৪ হাজার ২৭৯ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ কোটি ৪২ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮৯ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ২৮২ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ৫৩৩ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন ২ কোটি ৫২ লাখ ২৭ হাজার ৯৭০ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫১ জনের।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৫৬ লাখ ৬১ হাজার ১০৬ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৬২ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ লাখ ৮১ হাজার ১৩৭ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন এক লাখ ৭ হাজার ৮১২ জন।
এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে তুরস্ক। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫১ লাখ ২৭ হাজার ৫৪৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৪ হাজার ৯৮৩ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় রাশিয়া ষষ্ঠ, যুক্তরাজ্য সপ্তম, ইতালি অষ্টম, স্পেন নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে রয়েছে।
এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। সোমবার পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৮১ জন। মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৫৭ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৪ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।


বিজ্ঞাপন