ঈদযাত্রায় সড়কে প্রাণ গেলো ৩১৪ জনের

জাতীয় জীবন-যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিনে (৭ থেকে ২০ মে) দেশে ২৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১৪ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন ২৯১ জন। নিহতের মধ্যে ৪৩ জন নারী ও ২৮ জন শিশু রয়েছে। একই সময়ে চারটি নৌ-দুর্ঘটনায় তিন জন নিহত এবং সাত জন আহত হয়েছেন। এছাড়া রেলপথে একটি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন একজন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংগঠনটি সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করার কথা জানিয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৪ জন নিহত হন, যা মোট নিহতের ৪২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৩৪ জন (৪২ দশমিক ৬৭ শতাংশ), বাস যাত্রী চার জন (১ দশমিক ২৭), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি যাত্রী ১৭ জন (৫ দশমিক ৪১), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার যাত্রী ২৯ জন (৯ দশমিক ২৩), থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা-টেম্পু) ৩৩ জন (১০দশমিক ৫০), নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি যাত্রী ১৬ জন (৫ দশমিক শূন্য ৯), প্যাডেল রিকশা, বাইসাইকেল আরোহী ৫ জন (১দশমিক ৫৯) নিহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৯৪টি (৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ৮৯টি (৩৭ দশমিক ২৩) আঞ্চলিক সড়কে, ৩৪টি (১৪ দশমিক ২২) গ্রামীণ সড়কে, ১৮টি (৭ দশমিক ৫৩) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে চারটি (১ দশমিক ৬৭) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাসমূহের ৪৪টি (১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৯৫টি (৩৯ দশমিক ৭৪) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭৬টি (৩১ দশমিক ৭৯) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ১৯টি (৭ দশমিক ৯৪) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৫টি (২ দশমিক শূন্য ৯) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার জন্য দায়ী- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা- টেম্পু) ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ, নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান-বাইসাইকেল ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
দুর্ঘটনা রোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে; চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বাড়াতে হবে; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।


বিজ্ঞাপন