ভ্রমণ গ্রুপের আড়ালে প্রতারণার ফাঁদ: গ্রেফতার ৪

অপরাধ এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নানা পেশার মানুষের বিভিন্ন কিছু পাওয়া না পাওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যতই আধুনিক হচ্ছে মানুষ। আর এই আধুনিকার নামে ফেসবুকে নানান বিষয়ে গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপগুলোর মধ্যে রান্না, ভ্রমণ, এমনকি বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক গ্রুপ রয়েছে।
জানা গেছে, ফেসবুক গ্রুপগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ যেমনি রয়েছে। তেমনি অনেকেই নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। আর এইসব গ্রুপগুলোর মধ্যে থেকে ফেসবুকে ট্রাভেল গ্রুপ খুলে অভিনব প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য এখন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ‘লঞ্চ ভ্যাসেল ফাইন্ডার্স বাংলাদেশ’ নামের একটি ফেসবুক ট্রাভেলার গ্রুপের মাধ্যমে ভ্রমণে যান এক ব্যক্তি। সেখানে একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব থেকে ব্যবসায়ের প্রস্তাব পান। আর তার কাছ থেকে সুযোগ বুঝে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারকরা। এই প্রতারকরা ভ্রমণের সূত্রে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর তাদের কাছ থেকে নানাপন্থায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো। আর এধরণের অভিযোগ রাজধানীর কল্যাণপুর, ঢাকার আশুলিয়া ও চাঁদপুর এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। এই চক্রের প্রধান জাকারিয়া পারভেজ, জাহিদ ইবনে জাহান ও সোহরাব হোসেন টিটু। এসময় তাদের ব্যবহৃত নামে-বেনামে ১৮টি ফেসবুক আইডি, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও সিম জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, লাভের আশায় ৩০ লাখ টাকা খুইয়েছেন এক ব্যক্তি। পরে প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে গত ২৩ মে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা তদন্তের ধারাবাহিকতায় অভিনব এই প্রতারণার তথ্য পায় ডিবি। এমন অভিনব প্রতারণার বিষয় একদমই নতুন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
জানা যায়, ভুক্তভোগী এই চক্রের ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ভোলা জেলার মনপুরা ভ্রমণে গিয়ে প্রতারক জাকারিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক হয়। পরে তারা একসঙ্গে চাঁদপুর-বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে যান। আর সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে একসময় ভুক্তভোগী ওই যুবককে আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত বিপণন প্রতিষ্ঠান অ্যামাজান, ইবে’র সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসার প্রস্তাব দেয়া হয়। ভুক্তভোগী রাজি হলে ডোমেইন কেনা, ওয়েবসাইট বানানোর নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন জাকারিয়া। আর যত বেশি ডোমেইন তত বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে একে একে ৪২টি ডোমেইনের টাকা নেয়া হয়। ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে, উদ্ধার করতে কিংবা সিকিউরিটির কথা বলে নেয়া হয়েছে টাকা। আমেরিকা থেকে উন্নত ওয়েবসাইট বানানোর কথা বলেও টাকা আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে নিজেই বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি খুলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কখনো হ্যাকার সেজে, কখনো আমেরিকান প্রবাসী কিংবা আইটি অভিজ্ঞ সেজে কথা বলেছেন জাকারিয়া। আর বিনিয়োগের মুনাফা দেয়ার সময় এলেই জাকারিয়াসহ তার সঙ্গীরা শুরু করতেন টালবাহানা। এমনকি ভুক্তভোগীর মেয়ের ছবি যুক্ত করে ওয়েবসাইটে পর্নো ছেড়ে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে নানা পন্থায় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া, রাজধানীর মতিঝিলে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মো. নুরুল হক ওরফে দাদা নামের একজনকে মঙ্গলবার বিকালে গ্রেফতার করেছে ডিবি লালবাগ বিভাগ।
গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত নুরুল হক নিজেকে আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী পরিচয়ে মানুষের নিকট প্রচার করতেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য তিনি ৪/৫ বৎসর জঙ্গলে ধ্যান করে আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী পরিচয় দেন। প্রতারক নুরুল হক নিজেকে আগাম কর্পোরেশন, আগাম বহুমুখী ফার্ম, পিটি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এমএম এন্টারপ্রাইজ নামীয় বহু কোম্পানীর মালিক দাবি করতেন। এই কোম্পানীগুলোর অধীনে তার বাবু নগর প্রকল্প, সোনা মনি নগর প্রকল্প, সরল পথ প্রকল্প, গাভী পালন প্রকল্প, এমএম মৎস খামারসহ শতাধিক প্রকল্প আছে বলে মিথ্যা প্রচারণা চালাতেন। এই প্রকল্প এবং কোম্পানীর সদস্য হইলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। এভাবে তিন হাজার থেকে পনের হাজার টাকার বিনিময়ে সদস্য বানাতেন। এই সকল সদস্যদেরকে শাখা প্রধান, জোন প্রধান, হাই কমান্ড, পরিচালক ইত্যাদি পদ দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তার বিরুদ্ধে তুরাগ থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়া প্রতারণার শিকার জোবায়ের নামে ভুক্তভোগী জানান, ‘লঞ্চ ভ্যাসেল ফাইন্ডার্স বাংলাদেশ’ গ্রুপের মাধ্যমে ভ্রমণে গিয়ে জাকারিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিই ওই ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ট্যুরগুলো পরিচালনা করতেন। পরিচয় থেকে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পর অ্যামাজানের সঙ্গে অ্যাফিলিয়েট ব্যবসার প্রস্তাব দেন তিনি। এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো লাভ হবে এবং এজন্য একটা ওয়েবসাইট বানাতে হবে বলে জানান।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। শুধুমাত্র একজনের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর তাদেরকে গ্রেফতারের খবরে অনেকেই ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।


বিজ্ঞাপন