রুহিয়ায় কৃষকের কার্ড দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের ব্যবসা

সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি : গ্রামের চায়ের দোকানে আড্ডা চলছে নানা গালগল্প। গল্পে করোনা পরিস্থিতি প্রাধান্য পেলেও একসময় চলে আসে সরকারি খাদ্যগুদামে কৃষকের খাদ্যশস্য সংগ্রহের প্রসঙ্গটি। ধানচাষী হাবিবুর রহমান বললেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী, গোডাউনে আমি ধান দিছি। আবার দেইনি।’ শুনতে শুনতে তাঁদের গল্পের সঙ্গে যুক্ত হই। জানতে চাই, এটা কেমন কথা বললেন ভাই? এ কথা শুনে হেসে উঠলেন হাবিবুর রহমান।


বিজ্ঞাপন

গত শনিবার সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন ধান চাষির সঙ্গে কথা হয়। পরের চার দিন রবি থেকে বুধবার আখানগর, রুহিয়া পশ্চিম এলাকার আরও কয়েকজন ধান চাষির সঙ্গে। তাঁদের কথাবার্তায় একটি বিষয় বেরিয়ে আসে, সরকারি গুদামে কার্ডধারী কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হলেও তাঁদের অনেকে সেই ধান বিক্রি করেননি। তাঁদের কার্ড ব্যবহার করে ধান বিক্রি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

নিয়ম অনুযায়ী কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে সরকার। কৃষক যাতে কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয়, এ জন্য উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে কৃষককে কার্ড দেওয়া হয়। কার্ডধারী কৃষকদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষকেরা সরকারি খাদ্যগুদামে নিজের উৎপাদিত ফসল সরবরাহ করতে পারবেন এবং বিক্রির টাকা তাঁদের ব্যাংক হিসাবে জমা হবে।

সদর খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদরে ৩ হাজার ৬৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর রুহিয়া খাদ্য গুদামে লক্ষ্যমাত্রা ৮৮২ মেট্রিক টন। গত ২৩ এপ্রিল ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ১০ জুন পর্যন্ত পরে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবার সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধানের দর দেওয়া হয়েছে ২৭ টাকা। একজন কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন ধান সরবরাহ করতে পারবেন।

তবে কৃষকরা জানান, গুদামে ধান বিক্রি করতে তাদের আগ্রহ কম। কিছু স্থানীয় ব্যবসায়ী গুদামে কৃষকের হয়রানির কথা ছড়িয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড হাতিয়ে নিয়েছেন। পরে তারা সরকারি গুদামে কৃষকের কার্ডে ধান সরবরাহ করেন।

জানা যায়, যখন গুদামে ধান কেনা শুরু হয়, তখন বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ছিল ৮০০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ২০ টাকা। আর সরকারি গুদামের দর প্রতি কেজি ২৭ টাকা।

ধানচাষি হাবিবুর রহমান জানান, এবার ৩৬ শতক জমি চাষ করে ৯ মণ ধান পেয়েছেন। খাওয়ার জন্য কিছু ধান রেখে তিনি বাকিটুকু বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপরও রুহিয়া খাদ্যগুদামের ধান সরবরাহের যে তালিকা, তাতে তাঁর নাম রয়েছে। তিনি তিন টন ধান সরবরাহ করেছেন। তাহলে সরকারি গুদামে এই ধান কে বিক্রি করল? এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান জানান, ‘এলাকার হাসান আলী নামের এক ব্যবসায়ী আমার সঙ্গে দেখা করে বললেন, তিনি আমার নামে গোডাউনে ধান দেবেন। আমি বললাম, এতে আমার কোনো অসুবিধা হবে কি? তিনি বললেন, না। এরপর তিনি আমার কৃষি কার্ড নিয়ে গেলেন। পরে ধান ঢোকানোর দিন তিনি আমাকে সরকারি গোডাউনে নিয়ে গিয়ে কাগজপত্রে সই করিয়ে নিলেন। পরে আমার হাতে ১০০০ টাকা ধরিয়ে দিলেন।’ তিনি বললেন, ‘এখন বুঝলেন তো আমি কী কারণে বলেছিলাম, গোডাউনে আমি ধান দিছি। আবার দেইনি।’

আখানাগর ইউনিয়নের কৃষক বিউটি আক্তার এবার ধান চাষ করেছেন এক বিঘা জমিতে। সব ধান তিনি বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। অথচ খাদ্যগুদামে তাঁর নামে সরবরাহ করা হয়েছে তিন টন ধান। তিনিও জানালেন তাঁর কার্ড নিয়েছে সুমন নামের ধান ব্যবসায়ী। কতটাকা দিয়েছে সেটা তার স্বামী বলতে পারবে।

পঞ্চগড় জেলাধীন আটোয়ারী উপজেলার বাসিন্দা সেমল চন্দ্র রায়, রুহিয়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রির তালিকায় নাম রয়েছে। তিনি জানান, রুহিয়া বাজারে জুয়েলারি ব্যবসা করি। পাশের উপজেলায় বাড়ি সকালে আসি বিকেলে বাড়ি ফিরে যাই। আমার কৃষি কার্ড পরিচিত এক ব্যবসায়ি নিয়ে গেছে, বিনিময়ে আমি কোন টাকা নেইনি।

আরেক ধাপ এগিয়ে রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের প্রদীপ রায় অভিজ্ঞতা। তিনি ধান চাষ না করলেও সরকারি গুদামে ধান বিক্রির তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। ধান কেনা শুরুর আগে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তাঁকে ডেকে ভোটার কার্ড নিয়েছেন এপসে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়ার কথা বলে। রেজিস্ট্রেশনের পরে ‘সম্মানী’ দেওয়ার কথা বলে কৃষি কার্ডটি নিয়ে যান। প্রদীপ রায় বলেন, ‘কৃষি কার্ডের বিনিময়ে এক হাজার টাকা দিয়েছে। ধান গুদামে ঢোকানোর পরে আরো কিছু দিতে চেয়েছে।’

রাজাগাঁও ইউনিয়নের ধান চাষি জাহেদুল ইসলামের কৃষি কার্ড নিয়ে গুদামে তিন টন ধান দিয়েছেন হাসান আলী নামের এক ব্যবসায়ী। বিনিময়ে তাঁকে কিছু টাকা দিতে চেয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, ‘আমি ধান-গমের ব্যবসা করি না। আমি কৃষকের নামে গুদামে কোন ধান দেইনি। তবে আমি কৃষকের কার্ড সংগ্রহ করে চালের ডিলার ও ধান ব্যবসায়ী হেলালকে দিয়ে এক হাজার টাকা কৃষককে নিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে আরো চারজন কৃষকের কার্ড আছে।

অপরদিকে, কৃষকের কার্ড দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের ব্যবসা নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বেশ আলোচনা হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও রুহিয়া ছাত্রলীগ নেতা মানিক ইসলাম ফেসবুকে পোস্ট করেন। হুবহু তুলে ধরা হয়েছে।

সরকার কৃষকদের সুবিধার্থে কৃষি কার্ড এর মাধ্যমে লটারী সিষ্টেম চালু করেছেন কৃষক যেনো সরাসরি এল,এস,ডি তে সরকারী ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি আর কিছু ব্যবসায়ী এর মধ্যেও দূর্নীতি জাল বুনে ফেলেছে।

লটারীতে লিয়াজু করে বা পাওয়ার দেখিয়ে যারা কৃষির ‘ক” জানেনা তাদের নাম লটারীতে লাগিয়ে দেয় এবং সেই কার্ড আবার ব্যবসায়ীরা কম দামে ক্রয় করে নিয়ে এল, এস, ডি তে ধুমধারাক্কা ব্যবসা করেন।

যে ব্যাংকে টাকা তোলার জন্য ভীড় হওয়ার কথা কৃষকের সেখানে এখন ব্যবসায়ীদের আড্ডা খানা টাকা তুলছে ব্যবসায়ী।