পরীমনি ও ‘তাহাদের’ পচনশীল মানসিকতা

বিনোদন

বিনোদন প্রতিবেদক : পরীমনি শুধু একটা নাম মাত্র ‘তাহাদের’ পচনশীল মানসিকতায়। তারা এসব মানসিকতা পরীমনির বাইরে যারা সাধারণ মেয়ে তাদের ক্ষেত্রেও দেখায়। চলুন দেখে নেয়া যাক ‘তাহাদের’ পচা-বাসি মনগুলোকে,


বিজ্ঞাপন

তনু ধর্ষিত হয়ে মারা গেল প্রশ্ন তোলা হলো রাত-বিরাতে কেন বের হত সে, কোনো ভদ্রঘরের মেয়ে এতরাতে বের হয়! যেন রাত-বিরাতে বের হওয়াটা শুধু পুরুষের বা ‘তাহাদের’ অধিকারে। যেন রাষ্ট্র সংবিধানে শুধু তাদেরকে বলেছে রাতে বের হতে। পচা-গলা মানসিকতা নিয়ে একজন ধর্ষিতা মেয়েকে ‘তাহারা’ বিচার-বিশ্লেষণ করে। ধর্ষিতা দেখলেই ‘তাহারা’ চরিত্র বিশ্লেষণে মন দেয়। সবার আগে এটাই কাজ ‘তাহাদের।’ না ‘তাহারা’ ভিকটেমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায়, না ‘তাহারা’ বিচার দাবি করে অথচ মানুষ হিসেবে সবার আগে সেটাই করা উচিত।

বলিউডি নায়িকাকে শর্টস পরতে দেখা গেছে, বিকিনিতে দেখা গেছে কোনো সমস্যা নেই খুব হট লাগে ‘তাহাদের’ কাছে কারণ ওটা বলিউড যত সমস্যা নিজের দেশের বেলায়। কেন পরীমনি এত রাতে ক্লাবে গেল এটাই যেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বেগে প্রশ্ন হয়ে ছুটছে। আর কোনো মুভি ইন্ডাস্ট্রিতে যেন নায়িকারা ক্লাবে যায় না ভাবখানা এমন। ক্লাবে যদি সে যায়ও তাকে অসম্মান করার অধিকার কে দিয়েছে? নিজের সম্পত্তি ভেবে তার গায়ে হাত দেয়ার অধিকার কে দিয়েছে শুনি! এগুলো ‘তাহাদের’ চিন্তায় আসে না ঐ ঘুরেফিরে ‘কেন ক্লাবে গেল, ভালো মেয়েরা ক্লাবে যায় না, ভালো মেয়েরা মিডিয়াতে কাজ করে না’ ইত্যাদি বকবক চলতেই থাকে বিরতিহীন বিজ্ঞাপনের মতো। তার মানে পৃথিবীর যাবতীয় ইন্ডাস্ট্রির মেয়েরা খারাপ? ‘তাহাদের’ যুক্তি তো তাই বলে। এই পচা-গলা মানসিকতা আর কত!

‘এই জাহান্নামিকে নিয়ে কেন এত তোলপাড়?’ এই অমোঘ বাণীতেও ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম কমেন্টবক্সে ঝড় তোলে ‘তাহারা।’ যেন সবাইকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে তারা। কে জান্নাতে যাবে কে জাহান্নামে যাবে সেটা ঠিক করার ‘তাহারা’ তো কেউ না। সেটা উপরে যিনি আছেন তিনিই ঠিক করবেন, সব তাঁর হাতে। পৃথিবীর অন্য সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তারকাদেরই তাদের দর্শকেরা সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে সমস্যা কেবল আমাদের ‘তাহাদের’ বেলায়। ‘তাহারা’ যেন ধরেই নিয়েছে চলচ্চিত্রের কেউ ভালো না। আরে বাবা ‘তাহারা’ কতটা ভালো যে চলচ্চিত্রের সবার চরিত্র বিশ্লেষণ করতে আসে! দুঃখজনক হলেও সত্য মেয়েরাও বাজে মন্তব্যে পিছিয়ে নেই। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটি মেয়েকে সম্মান না করলে চলবে কীভাবে!

যখনই মিডিয়ার বা সাধারণ কোনো মেয়ের সম্ভ্রমহানির খবর আসে ভার্চুয়ালি যেন প্রতিযোগিতা তৈরি করে ‘তাহারা’ কে কত বাজে মন্তব্য করবে ঘটনা পুরো জানার আগেই, কে কত ভুঁইফোঁড় ইউটিউব চ্যানেলে এডিট ভিডিও প্রচার করবে, কে কত চরিত্র-বিশ্লেষক হয়ে উঠবে, কে কত জান্নাত-জাহান্নাম করবে তার অলিখিত প্রতিযোগিতা চলে। নিজের পরিবারের সাথে ঘটলেও কি ‘তাহারা’ তাই করত! জানার খুব ইচ্ছা।

‘একদম উচিত শিক্ষা হয়েছে’ পরীমনিকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য ‘তাহারা’ করেছে। অবজারভেশন তো বলে ‘তাহারা’ নিজেরাও এক একটি ঘুমন্ত ধর্ষক সুযোগ পেলেই জেগে উঠবে। সময় তো এখন ভার্চুয়াল ধর্ষকদের খুঁজে বের করার। ‘তাহাদের’ পচনশীল মানসিকতাকে বিনাশ করতে না পারলে আগামী প্রজন্মের মধ্যেও এসব ছড়াবে রাষ্ট্র নিশ্চয়ই তা হতে দেবে না এ প্রত্যাশা থাকবে।

পরীমনি খুব ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়াবে এবং কাজ করবে এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে তাকে ভালোভাবেই দরকার আছে। শুভকামনা পরীমনি।