বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১
বিশেষ প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে মাত্র ৬টি সরকারী বেসরকারী টিভি চ্যানেল ফ্রিকোয়েন্সি নিলেও বাকী চ্যানেলগুলো কিছু অসুবিধার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) কাছে। ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের মধ্যে ফ্রিকুয়েন্সি নিলে যে কোন সময় ক্যাবল কাটা পড়ে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর্থস্টেশনের মাধ্যমে সম্প্রচার না করতে পারলে সম্প্রচার নিয়ে আশঙ্কা থেকে যাবে। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, দেশের সব টিভি চ্যানেল সম্প্রচার চুক্তি হয়েছে ১৯ মে। চুক্তির দিন থেকেই দেশের ৬টি টেলিভিশন পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু করেছে। তবে বাকি টেলিভিশনগুলো এখনও সম্প্রচারের জন্য ফ্রিকুয়েন্সি নেয়নি। তারা এখনও বিদেশী স্যাটেলাইট থেকেই ফ্রিকুয়েন্সি নিচ্ছে। আমরা সব টেলিভিশনকে তিন মাস ফ্রি ফ্রিকুয়েন্সি দিয়েছি। তারা এখন না নিলেও পরবর্তীতে নিতে বাধ্য হবে। তিন মাস পর বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়ার মতো ভাড়া নির্ধারণ করবে স্যাটেলাইট কোম্পানি। তবে এই ভাড়া কত হবে তা এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করেনি স্যাটেলাইট কোম্পানি।
সূত্র জানিয়েছে, চুক্তির পরে টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টিভি চ্যানেলগুলো শর্ত দিয়েছে। টেলিভিশন কোম্পানিগুলো ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের ওপর খুব একটা ভরসা রাখতে পারছে না। কারণ প্রতিনিয়ত ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল কাটা পড়ে। এতে সম্প্রচারে বিঘœ ঘটতে পারে। তারা চায় গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে আর্থস্টেশনে ফ্রিকুয়েন্সি। এখানেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে স্যাটেলাইট কোম্পানি বলছে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের মাধ্যমে সম্প্রচার করার জন্য বিভিন্ন ক্যাবল কোম্পানিকে ‘নো নোয়েজ ব্লক’ (এলএনবি) সরবরাহ করা হয়েছে। এতে করে সম্প্রচারে কোন অসুবিধা হবে না।
এদিকে, মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ কারিগরি দিক পরীক্ষা করে দেখছে। সম্প্রচারের জন্য গাজীপুরে গ্রাউন্ড স্টেশনে দিন রাত কাজ চলছে। কারণ বিসিএসসিএল’র সঙ্গে অনেক আগেই বেসরকারী ৭ টেলিভিশন চ্যানেল চুক্তি করে রেখেছে। সরকারী টেলিভিশনসহ সব টেলিভিশনকে ফ্রিকুয়েন্সি দেয়া হচ্ছে।
ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রীয় তিন চ্যানেল বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশিন ও বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র পরীক্ষামূলক সম্প্রচার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফ্রিকুয়েন্সি পাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন এক মাসের বেশি সময় আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে সেবা নিচ্ছে। বেসরকারী টেলিভিশনগুলোর মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, সময় টিভি, ডিবিসি নিউজ, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি, এনটিভি, একাত্তর টিভি, বিজয় বাংলা ও বৈশাখী টিভি। এই চ্যানেলগুলো বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ট্রান্সমিশন ব্যবহার করতে পারছে। বাকি চ্যানেলগুলো চুক্তিবদ্ধ হয়েছে গত ১৯ মে। ৩০টি বেসরকারী চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সঙ্গে চুক্তি করেছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন আমরা গ্রাউন্ড স্টেশনে ঢুকতে পারছি। ফ্রিকুয়েন্সি দেখতে পাচ্ছি। যা গত মাসেও আমাদের হাতে ছিল না। এখন আমাদের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন বিদেশী প্রকৌশলীদের সঙ্গে।
সূত্র জানিয়েছে, দু’টি স্থানীয় ভিস্যাট কোম্পানির সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে বিসিএসসিএল। এটা হলে দ্রুততার সঙ্গে আয় করতে শুরু করবে সরকারী দেশের প্রথম এই স্যাটেলাইট। গতবছরের ১২ মে নিজ কক্ষপথ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করার পর নবেম্বরে তা বিসিএসসিএলকে বুঝিয়ে দেয় স্যাটেলাইটটির নির্মাতা কোম্পানি থ্যালাস এ্যালেনিয়া স্পেস। আর সে কারণে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতেই অনেক বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছে বিসিএসসিএল। এদিকে বর্তমানে চালু থাকা বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলোর বেলায় তেমন কিছু উল্লেখ না করলেও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন লাইসেন্স প্রাপ্তরা সেবায় আসতে হলে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকেই সম্প্রচার করতে হবে। সম্প্রতি কমিশন বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিটিআরসি এটি এখন টেলিভিশনের স্পেকট্রাম বরাদ্দ পাওয়ার শর্ত হিসেবে যুক্ত করে দিয়েছে।