নিজস্ব প্রতিবেদক : জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে সরকার কঠোর লকডাউনে দিয়েছে জানিয়ে নিজেদের এবং পরিবারের স্বার্থে বিধিনিষেধ মেনে চলতে জনগণের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
একইসঙ্গে লকডাউনের কারণে খাওয়া মানুষের দিকে অতীতের মতো মানবতার হাত বাড়িয়ে দিতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজের বাসভবনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই অনুরোধ জানান তিনি।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি শক্তিশালী এবং সংক্রমক-বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, করোনায় একজন যখন আক্রান্ত হয় তখন পরিবারের অন্যরাও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং হয়। এখন যে ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে আছে সেটি অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। একজনের মাধ্যমে বহু লোক আক্রান্ত হতে পারে।
‘সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে। জনগণের স্বার্থে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দেশবাসীকে এই করোনার হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকার লডকডাউন ঘোষণা করেছে। তাই দেশবাসীকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাই, নিজের স্বার্থে নিজের পরিবারের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা পালন করার জন্য।’
সরকার দীর্ঘমেয়াদে লকডাউনের পক্ষে না এবং এটি সমাধান বলেও মনে করে না-জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এটি মেনে চলা প্রয়োজন। এর ব্যত্যয় হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকার এই লডডাউন কখনো প্রলম্বিত করতে চায়না। কিন্তু জনগণের স্বার্থ সুরক্ষার জন্যই এই লকডাউন দিতে হয়েছে। দীর্ঘদিন লকডাউন সমাধান বলেও আমরা মনে করি না। সবাই যদি স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলেন তাহলে আমাদের পক্ষে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির ৫ জন নেতা মারা গেছেন। অনেক নেতা আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে এখনও আক্রান্ত আছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের ১২৫ জনের বেশি সংসদ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন।
এ সময় লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান দলের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
‘আমাদের দলের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সবসময় জনগণের পাশে ছিলো, আছে। আজকে এই সময়ে যখন খেটে খাওয়া মানুষের অসুবিধা হচ্ছে, তখন অনুরোধ জানাই সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি, অতীতে যেমন জনগণের পাশে ছিলেন, তেমনি এখন জনগণের পাশে থাকার জন্য।”
‘দলে মূল্যায়ন না পাওয়ায়’ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি দুজন নির্বাহী সদস্যের পদত্যাগের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. মাহমুদ বলেন, বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল কয়েকদিন আগে পলায়ন সম্পর্কে একটি কথা বলেছিলেন…এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সবাই আস্তে আস্তে পালাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই দুজন পদত্যাগ করেছে। বিএনপি যে পলায়নপর তার প্রমাণ হচ্ছে এই দুজনের পদত্যাগ।’
‘একচ্ছত্র শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য সরকার গণতান্ত্রিক সিস্টেম বদলে ফেলছে’-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল সংসদে যেভাবে বিরোধীদল বিএনপিসহ সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতার উপস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেছেন, তাতে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা আছে।’
‘একই সাথে মির্জা আলমগীরা প্রতিদিন যে সরকারের অমূলক সমালোচনা করছেন, বিষেদগার করছেন, এতে প্রমাণ হচ্ছে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রীতি এবং মুক্তভাবে বিতর্ক ও সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে।”
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বরং গণতন্ত্র হরণ করতে চেয়েছিলো বিএনপি। সেই কারণে তারা ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিলো। ২০১৮ সালেও তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিলো। বরং এই সমস্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে এবং সংসদীয় গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে।’
বিএনপি নেতার সমালোচনা করায় বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ’র দলটির নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি নিজেরাই যে গণতন্ত্রের রীতিনীতি চর্চা করে না, সেটিরই প্রমাণ হচ্ছে জাফরুল্লাহ সাহেব যখন বিএনপির সমোলোচনা করলেন, তখন তার দিকে যেভাবে বিএনপির কর্মীরা তেড়ে গেলো জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে; এতেই প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির নিজেদের মধ্যেই গণতান্ত্রিক চর্চা নেই।’