১০ বছরে ১০ হাজার অগ্নিকাণ্ডে আহত ৭ লাখ প্রানহানি ১ হাজার ৫৯০ জনের

জাতীয় জীবন-যাপন

 

আজকের দেশ রিপোর্ট : দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় যানবাহনে, রেস্তোরাঁয় ও বসতবাড়িতে রান্নার কাজে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বিজ্ঞানের এমনই এক আশীর্বাদপূর্ণ প্রযুক্তি। তবে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে একটুখানি অসচেতনতায় ঘটে যেতে পারে বড় বিপর্যয়। ১০ বছরে ১০ হাজার অগ্নিকাণ্ডে আহত ৭ লাখ, প্রান হানি ১ হাজার ৫৯০ জনের। এ খবর ফায়ার সার্ভিসের একটি সুত্রের।


বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনাসমূহ। কখনো সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, কখনো লাইন লিকেজ আবার কখনো কখনো স্যুয়ারেজে আবর্জনার স্তূপ থেকে সৃষ্ট জমাটবদ্ধ গ্যাস থেকেই ঘটছে এসব দুর্ঘটনা।

এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় অনেকে আর ভাগ্যক্রমে যারা বেঁচে থাকে, তাদেরও আহত শরীর নিয়ে দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, বাংলাদেশে গ্যাস বিস্ফোরণে গত ১০ বছরে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার অগ্নিকাণ্ডে ৭ লাখ মানুষ আহত হয়েছে এবং ১ হাজার ৫৯০ জন প্রাণ হারিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত অসচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে বেড়ে যাচ্ছে এসব দুর্ঘটনার সংখ্যা।

বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে রান্নার ক্ষেত্রে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার এখন সবচেয়ে বেশি।

শহরাঞ্চলে লাইনে গ্যাসের সংকট এবং গ্রামে কাঠ-খড় জ্বালিয়ে রান্নার বদলে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বেশ স্বস্তিদায়ক।

তবে এতে ঝুঁকিও কম নয়। আবদ্ধ ঘরে গ্যাসের চুলা জ্বালানো, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার, তাপযুক্ত স্থানে সিলিন্ডার সংরক্ষণ, প্রলেপযুক্ত গ্যাসপাইপ ও ত্রুটিপূর্ণ লাইন সংযোগসহ নানা কারণেই রান্নাঘরে ঘটছে অগ্নিসংযোগ।

চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে এমনই এক দুর্ঘটনায় ১৮ জন দগ্ধ হয়েছেন।

এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডারের আরেকটি বড় ব্যবহার যানবাহনে। গত দুই দশক ধরে সিএনজিচালিত যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

তবে অনেক ক্ষেত্রেই মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহারে যাত্রীরা চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের মতে, সিএনজিচালিত ৪৪ শতাংশ বাসের গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক মান নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সিএনজি গ্যাস সিলিন্ডার পাঁচ বছর পরপর রিটেস্টের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

ফলে এসব যানবাহনে চলাচল উত্কণ্ঠা বাড়িয়ে তোলে। দেশের বেশ কিছু জায়গায় বিছিন্ন্ন বিস্ফোরণে ইতিমধ্যে অনেক যাত্রীই প্রাণ হারিয়েছে।

অনেক সময়ই অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ নানা কারণেই গ্যাসলাইনের কাছেই শিল্পনগরী ও বসতবাড়ির অবকাঠামো গড়ে উঠছে, ঘটছে অবৈধ গ্যাসসংযোগ, যা গ্যাস বিস্ফোরণে উল্লেখযোগ্য আর একটি কারণ।

মূলত এজন্যই গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল।

পাশাপাশি স্যুয়ারেজের আবর্জনা ও স্তূপ থেকে বা অন্য কোনো উৎস থেকে নির্গত গ্যাসও জমাট বেঁধে বিস্ফোরণের সৃষ্টি করতে পারে।

চলতি সপ্তাহে ঢাকার মগবাজারে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের কারণ এমনটাই বলে ধারণা করছে তদন্ত কমিটি। এসব দুর্ঘটনা রোধে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার বেশ তত্পর।

সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গ্যাস আইন প্রণয়ন ও সেবাকেন্দ্র স্থাপনার মাধ্যমে সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। তবে এসব আইন যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।

সেই সঙ্গে প্রয়োজন ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নিয়মিত গ্যাস সিলিন্ডার ও লাইন পরীক্ষা করা উচিত। রান্নাঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের উপস্থিতি থাকে, সেদিকে নজর রাখা জরুরি।

আর ঘর বন্ধ থাকলে রান্নার অন্তত ১০ মিনিট আগে জানালা-দরজা খুলে রাখা দরকার। এছাড়া বাজার থেকে সিলিন্ডার কেনার সময় অবশ্যই মেয়াদ দেখে কিনতে হবে।

পাশাপাশি এদেশের গ্যাসচালিত যানবাহনসমূহে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরদারি আরো কঠোর করা প্রয়োজন। মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার এবং অবৈধ লাইন স্থাপনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান জরুরি।

রিটেস্ট নিশ্চিতকরণে ওয়ার্কশপ আরো বাড়ানো দরকার। আর লাইন সংযোগে ত্রুটি চোখে পড়লে এবং গ্যাসের তীব্র গন্ধ পেলে দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

ফায়ার সার্ভিসসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়েও কাজ করতে হবে।

পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোরও উচিত ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এ বিষয়ে জনগণকে সজাগ করা। ব্যক্তির সর্বোচ্চ সচেতনতাই পারে গ্যাস বিস্ফোরণ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে।