‘নিয়ম রক্ষা’র লকডাউন

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী

*ক্রমেই বাড়ছে গাড়ির চাপ
*মানিকনগর-মুগদায় জটলা
*পুলিশ দেখলেই ফাঁকা

 

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীতে চলছে ‘নিয়ম রক্ষা’র লকডাউন। এতে করে আশ্রয়হীন, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল ডিআইটি এক্সটেনশন রোড ফকিরাপুল শান্তিনগর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে দোকানপাট আংশিক খোলা। মেইন রোডের পাশে জেনারেল স্টোর, ভাসমান দোকান খোলা রয়েছে। পুলিশের টহল দেখা গেলেও এলাকায় অলিগলি, দোকানে মাস্ক ছাড়া জনগণের চলাচল ছিলো চোখে পড়ার মতো।
এদিকে রাজধানীর মুগদা-মানিকনগরে ষষ্ঠদিনের লকডাউনে পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে জটলা করে বসে থাকছে এলাকাবাসী। মঙ্গলবার রাজধানীর মুগদা-মানিকনগরের সরেজমিনে গেছে দৃশ্য দেখা গেছে।
একদিকে পুলিশের কঠোর অবস্থা অন্যদিকে জটলা। এমনকি মুগদা-মানিকনগরে ছোট ছোট কয়েকটি চা, পান, বিড়ির দোকান খুলতে দেখা গেছে। এসব দোকানের সামনে মানুষকে বসে থাকতে গেছে।
মানিকনগরের ফুটপাথে ব্যবসা করা ফারুক বলেন, ‘লকডাউনে আমাদের কেউ অনুদান দেয়নি। কি করবো, বাধ্য হয়ে বের হয়েছি। যখন এদিকে পুলিশ আসছে, তখন এখান থেকে সড়ে যাচ্ছি, আবার অন্য জায়গায় গিয়ে বসছি।’
রিকশাচালক রাসেল বলেন, ‘কিসের লকডাউন, আগে যা ছিলো এখনো তাই, লকডাউন কেউ মানে নাকি! যদি প্রত্যেকটি ঘরে মানুষের জন্য খাবার নিশ্চিত করতে পারে তবেই মানুষ লকডাউন মানবে। তার আগে না। লকডাউনে আমাদের খাবার লাগে না, বাসা ভাড়া দিতে হয় না? ঘরে বসে থাকলে কি খরচ সরকার দিবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘সকাল থেকে বের হয়েছি ইনকাম তেমন নেই। সকাল থেকে মাত্র ১৭০ টাকা ইনকাম হয়েছে।’
পথচারী আলম বলেন, ‘মানুষ প্রয়োজনে বের হয়, বিনা কারণে না। আমি বের হয়েছি কাজের উদ্দেশে। লকডাউন শুধু গরীবের জন্য, বড়লোকেরা তো খেতে পায়, ওরা বাইরে কেন?’
রাজউক ভবনের সামনে পুলিশের চেকপোস্টের পাশেই রয়েছে ভাসমান দোকান। ডিআইটি এক্সটেনশন রোডে রিকশা-প্রাইভেট কারের যানজটের দৃশ্য চোখে পড়েছে। সেগুনবাগিচাসহ আশপাশের গলিতে সকাল থেকেই দোকানপাট খোলা রয়েছে।
এসব বিষয়ে স্থানীয় জনসাধারণ জানিয়েছেন, পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করেই দোকানপাট খোলা হয়েছে। তারা বলছেন, নিয়ম রক্ষার লকডাউন চলছে। আর এই লকডাউনে কষ্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের এবং আশ্রয়হীন, শ্রমজীবী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে মঙ্গলবার রাজধানীর সড়কে গাড়ি ও মানুষের চাপ দুটিই বেড়েছে। দিন যত পার হচ্ছে ততই যেন সড়কে বাড়ছে গাড়ির চাপ। বিধিনিষেধ অমান্য করে খুলছে জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও।
সরেজমিনে দেখো গেছে, লকডাউনের পঞ্চম দিনের তুলনায় ষষ্ঠ দিনে রাজধানীর সড়কগুলোতে অনেক বেড়েছে লোক চলাচল ও গাড়ির চাপ। সঙ্গে বেড়েছে রিকশাও। বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা না করে অবাধে চলাফেরা করছে মানুষ। মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে যে যার মতো সরে পড়ছেন।
সরকারের দেয়া প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জরুরি পরিষেবা ব্যতীত সব দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে খুলছে অন্যান্য দোকানও। কখনও সাটার অর্ধেক খুলে আবার কোনো কোনো জায়গায় পুরোপুরি দোকান খুলে চলছে বেচাকেনা।
এদিকে প্রজ্ঞাপনে খাবারের দোকান খোলা থাকলেও সেখানে বসে খাবার খাওয়া নিষেধ। শুধু কিনে নিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু রাজধানীর অনেক জায়গায় হোটেলে বসে খাবার খেতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাস্তার পাশের ফাস্টফুডের দোকানে ঘেষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছে। অলি-গলিতে চায়ের দোকানে চলছে আড্ডা। বেশিরভাগ মানুষের মুখেই থাকছে না মাস্ক। বেড়েছে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাফেরা। সেইসঙ্গে নিজস্ব পরিবহন ও রিকশার চাপ চোখে পড়ার মতো।
এ ব্যাপারে এক ফাস্টফুডের দোকানি বলেন, আমরা তো খাবার প্যাক করে দিচ্ছি; কিন্তু সবাই যদি এখানে দাঁড়িয়ে খায়, তাহলে আমাদের কী করার থাকে।
চায়ের দোকানি রাসেলের সাঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আর কত দিন দোকান বন্ধ করে রাখবো। টাকা পয়সাতো সব শেষ। বাজার করতে হবে না।
এদিকে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বেশির ভাগ মানুষই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নানা জরুরি কাজের অজুহাত দেখাচ্ছেন।
সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও বেশ কিছু অফিস খোলা রয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন তারা কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন। সেক্ষেত্রে কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে বা অন্যের গাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় নামবে না। প্রয়োজনে অফিস তার কর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করবে।
এদিকে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। ফলে সোমবার উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব বিধি-নিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৪ জুলাই ২০২১ রাত ১২টা পর্যন্ত এ বিধি-নিষেধের সময়সীমা বাড়ানো হলো।
তবে নতুন প্রজ্ঞাপনে নতুন কোনো নির্দেশনার কথা জানানো হয়নি। তাই চলমান বিধিনিষেধে যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেগুলোই কার্যকর থাকবে।


বিজ্ঞাপন