গাজীপুর সিটির সবচেয়ে অপরাধ প্রবণ এলাকা টঙ্গী

অপরাধ এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিনিধি : ২০১৩ সালে ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গড়ে ওঠা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ‘সবচেয়ে অপরাধ প্রবণ’ এলাকা টঙ্গীর ১৫টি ওয়ার্ড। এই এলাকায় কতটি কিশোর গ্যং বা অপরাধী চক্র আছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে। একসঙ্গে আড্ডা। এরপর রাস্তায় নারী উত্ত্যক্ত, মাদক সেবন ও মানুষকে হয়রানি। একপর্যায়ে লোকজনকে মারধর, চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, এমনকি খুনোখুনি। বর্তমান সময়ে উঠতি বয়সী কিশোরদের মধ্যে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি ও উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে খুনের শিকাড় হয়েছে অনেকে। টঙ্গীতে এভাবে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে একশ্রেণির কিশোর ও তরুণ। আর তাদের পেছনে আছেন এলাকার ‘বড় ভাইয়েরা’। আর এসব গ্রুপের সদস্যরা টেলিভিশনে দেখানো বিভিন্ন সিরিয়াল ফলো করে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালায়।
অনুসন্ধানে জানা যায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের মোড়ে বা অলি-গলির চা দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্য ইভটিজিং এবং বীরদর্পে সিগারেট ফুঁকালেও কেউ কিছু বলার সাহস করে না কিশোরদের সংগঠিত গ্যং গুলোকে। এরা বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী বা স্কুলছুট হওয়া কিশোর। এদের বয়স ১৩ থেকে ১৯-এর মধ্যে।
টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকার সক্রীয় মাদক ব্যাবসায়ী, কিশোর গ্যং ও প্রশ্রয়দাতাঃ
টঙ্গীর ‘সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ’ এলাকা বউবাজার, পূর্ব আরিচপুর ও নদীবন্দর। এখানে তুরাগ নদের পাশ ঘেঁষে হাঁটার পথ, তুরাগবাজার, ঢাকা ডাইংয়ের পেছনের দিকসহ আশপাশের এলাকায় সারাক্ষণই থাকে কিশোরদের আড্ডা। অন্তত ১৫টি দল এখানে গড়ে উঠেছে। একেকটি দলে ১০ থেকে ১২ জন করে সদস্য।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এসব দলের বেশির ভাগেরই নেতৃত্বে আছেন টঙ্গীর পাগাড় এলাকার মো. পারভেজ ও মনির ওরফে ব্লাকেট মনির। পাগাড় আলেরটেকের মিলন হত্যা মামলার প্রধান আসামি মনির। মিলন হত্যার ঘটনায় পরে পারভেজকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এর বাইরে ওই সব কিশোরের অনেকে হাবিবুর হত্যা মামলার আসামি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পারভেজ ও মনির বন্ধু। তাঁরা টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল রানার অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এবিষয়ে বহুল প্রচলিত একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধিকে সোহেল রানা বলেছিলেন, ‘পারভেজকে আমি চিনি। তবে সে আমার সঙ্গে রাজনীতি করত না। আর ব্লাকেট মনির ছাত্রলীগের এক ছোট ভাইয়ের পরিচিত। আমরা কখনোই কাউকে প্রশ্রয় দিই না। তবে বিষয়টি জানার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
টঙ্গী বাজার এলাকায় সক্রিয় ছিল চঞ্চল, রাফি ও নাহিদের দুটি গ্রুপ। ২০১৯ সালের ১ মার্চ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মারা যায় নাহিদ। হত্যা মামলায় রাফিসহ কয়েকজন ধরা পড়লেও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে যায় রবিউল ইসলাম চঞ্চল ওরফে টাক্কু চঞ্চল, এই গ্রুপের উৎপাত কিছুতেই থেমে নেই।
টঙ্গীর ভূঁইয়াপাড়া, জামাইবাজারসহ আশপাশের এলাকায় সজীব চৌধুরী ওরফে পাপ্পু বাহিনীর দাপট। তাঁর দলে আছে আরও অন্তত ৫ থেকে ৬টি কিশোর বা উঠতি বয়সের তরুণদের দল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অস্ত্র, মাদক, ডাকাতিসহ অন্তত পাঁচটি মামলার আসামি পাপ্পু। ২০১০ সালের দ্রুত বিচার আইনে করা একটি মামলার পাঁচ বছরের সাজা হয় তাঁর। বর্তমানে তিনি থাকেন ঢাকার বাড্ডায়। তাঁর অবর্তমানে এসব দলের নেতৃত্ব দেন তাঁর বড় ভাই বাপ্পি। বাপ্পীর বর্তমানে দুইটি অস্ত্র মামলা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি পাপ্পু ও তার বড় ভাই বাপ্পী বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। পাপ্পু রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত টঙ্গীতে স্থায়ীভাবে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।
টঙ্গীর মধুমিতা ভরান এলাকায় এখনো সক্রিয় আছে মিম, জয়, মহিন, রাকিব ও বিল্পবের নেতৃত্বে তিনটি দল। এ তিনজনই ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর করা স্কুলছাত্রী অপহরণ মামলার আসামি। জয় ও মীমের নামে উত্তরা ও টঙ্গী পূর্ব থানায় রয়েছে একাধীক মামলা। ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদকের কারবারই হলো এদের নিত্য দিনের আয়ের উৎস।
টঙ্গীর ব্যস্ততম এলাকা টঙ্গী বিসিক ও নতুনবাজার এলাকা। এ দুই এলাকায় নেতৃত্ব দেন মো. শুক্কুর আলী নামের এক ব্যক্তি। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। মারধর, হত্যাচেষ্টা, চুরি, হুমকির অভিযোগে গত ১২ জুলাই টঙ্গী পূর্ব থানায় করা একটি মামলার প্রধান আসামি ছিলেন শুক্কুর।
টঙ্গীর মাদকের হাট ব্যাংক মাঠ বস্তিকে মাদকের হাট বলে আক্ষায়িত করেন অনেকে আর নারী মাদক সম্রাজ্ঞীদের নামের তালিকা করতে গেলে প্রথমে চলে আসে রেল ষ্টেশন সংলগ্ন ব্যংকের মাঠ। কারণ টঙ্গীর আলোচিত মাদকসম্রাজ্ঞী মোমেলা বেগম (৪০)। থাকেন কো-অপারেটিভ ব্যাংক মাঠ বস্তিতে। এক যুগ ধরে বস্তিতে বসে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসা। তাতে গড়ে তুলেছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। খোদ টঙ্গীতেই রয়েছে মোমেলার তিনটি অলিশান বাড়ি ও একাধিক গাড়ি। একাধিক বাড়ি-গাড়ি থাকা সত্ত্বেও বস্তি ছাড়েননি মোমেলা।
মাদক মামলায় বহুবার জেল খেটে জামিনে বের হয়ে ফের বস্তিতে গিয়ে ওঠেন তিনি। সেখানে বসে আবার চালিয়ে যান মাদক ব্যবসা। স্থানীয় সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এক যুগ ধরে চলছে মোমেলা বেগমের মাদক সাম্রাজ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ইয়াবার বড় চালান ও দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ফেনসিডিলের চালান টঙ্গীর ব্যাংক মাঠ বস্তিতে নিয়ে আসেন মোমেলা বেগম। এরপর ছোট ছোট চালানে সেসব পৌঁছে দেন টঙ্গী ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। স্থানীয় প্রশাসনের মাদক ব্যবসায়ীদের নামের তালিকার শীর্ষে রয়েছে মোমেলা বেগমের নাম।
মোমেরা মাদক বিক্রির টাকায় টঙ্গীতে কিনেছেন তিনটি বাড়ি। ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের মরকুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন কুদ্দুস খলিফা রোডে ‘জাহিদ হাসান ভিলা’ নামে একটি বহুতল বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে তার। একই ওয়ার্ডের শিলমুন পূর্বপাড়া যুগীবাড়ি রোডে মাতৃকোল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির স্বপন মাস্টারের কাছ থেকে কেনেন অর্ধকোটি টাকার একটি বাড়ি। পুবাইলের করমতলা পূর্বপাড়া আবাসিক এলাকায় পৌনে ৪ কাঠা জমির ওপর একটি আধাপাকা বাড়ি রয়েছে তার। ব্যাংক মাঠ বস্তিতে রয়েছে একাধিক আধাপাকা ঘর।
মোমেলা তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলমকে কিনে দিয়েছেন চারটি মিনি ট্রাক ও সিএনজি। মেয়েজামাই পুলিশের কথিত সোর্স হৃদয়কে কিনে দিয়েছেন ২০ লাখ টাকা দামের একটি প্রাইভেটকার। বিভিন্ন এলাকায় মোমেলার রয়েছে নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
সূত্র জানায়, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোমেলার বিরুদ্ধে টঙ্গী পূর্ব থানা, গাজীপুর ডিবি, র্যা ব ও গাজীপুর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ১৭টি মাদক মামলা হয়।
সুত্র জানায়, টঙ্গীর ব্যাংক মাঠ বস্তির আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী আরফিনা বেগম। এলাকায় তিনি জামালের বউ নামেও পরিচিত। বর্তমানে তিনি টঙ্গীর অন্যতম শীর্ষ ফেনসিডিল ব্যবসায়ী। কথিত আছে, টঙ্গীর কোথাও ফেনসিডিল পাওয়া না গেলেও আরফিনার কাছে সব সময় পাওয়া যায় তা। মাদক ব্যবসার কাজে আরফিনাকে সহযোগিতা করেন তার ভাই শ্রাবণ ও স্বামী জামাল। বস্তিতে বসে দেদার মাদক কারবার চালিয়ে গেলেও গত তিন বছরে আরফিনাকে টঙ্গী থানা পুলিশ একবারও আটক করতে পারেনি। অসাধু কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতার নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে আরফিনা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে টঙ্গী থানার সাবেক এক পুলিশ কর্মকতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, আরফিনা ছিলেন ডিবি পুলিশের অন্যতম আয়ের উৎস। সাবেক গাজীপুর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দুজন এসআই আরফিনাকে কয়েক দিন পরপর আটক করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিতেন। তবে সব সময়ই থানার পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতেন আরফিনা।
এ ছাড়া ব্যাংক মাঠ বস্তির অন্যতম মাদক ব্যবসায়ীরা হলেন, রিপন মিয়া, টুক্কু, বাচ্চুর বউ, রতনা, বুতনির মা, আমির কানা, রুবিনার জামাই মৃদুল। এদের নেতৃত্বে বস্তির বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা।
একইভাবে টঙ্গীর ৪৭ নং ওয়ার্ডের মরকুন টেকপাড়া এলাকায় রয়েছে শরীফ গাজীর সক্রিয় কিশোর গ্যং বাহিনী। শরীফ গাজীর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে ২৫-৩০ জনের এই বাহিনী। এরা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় খুর, সুইচ গিয়ার, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পরে সাধারণ মানুষের উপর। গত ২৫ই মে ২০২১ইং সালের রমজান মাসে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিমুল নামে এক কিশোরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘারে খুর দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এতে শিমুলের ঘারে প্রায় ৬০টি সেলাই লাগে। এঘটনায় আমান, অনিক, হাসিফ, রিদয়, রায়হান ও হামীমকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। তবে এরা জামিনে এসে পুনরায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পায়তারা করছে।
এছাড়া মরকুন পূর্ব পাড়া এলাকায় স্থানীয় মফিজ মিয়ার ছেলে রুবেল ও রায়হানের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন কিশোরকে নিয়ে রয়েছে সক্রিয় কিশোর গ্যং। মরকুন গুদারা ঘাট এলাকায় রয়েছে এলাকার ভাড়াটিয়া চান মিয়ার ছেলে রকি। তার নেতৃত্বে রয়েছে ১৫-২০ জনের সক্রিয় কিশোর গ্যং বাহিনী। স্থানীয় সুত্র জানায়, এই বাহিনীর আয়ের মূল উৎস মাদকের কারবার। এরা দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় ইয়াবা ট্যাবলেটের কারবার করে আসছে। রকিকে কিছুদিন আগে ১০১ পিছ ইয়াবাসহ টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ গ্রেফতারের পর জেল হাজতে প্রেরণ করে। কিছুদিন পর জামিনে বের হয়ে পুনরায় এলাকায় মাদকের কারবার শুরু করে।
এছাড়া মরকুন গুদারা ঘাট এলাকায় রাসেল ওরফে গাফফু রাসেল, আক্তার, রতন, জামান, হারুন, বিল্লাল, ছোটন ও আল-আমিন দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় মাদক কারবার করে আসছে। সুত্র জানায় এরা মরকুন গুদারা ঘাট এলাকার সক্রীয় মাদক কারবারি।
স্থানীয় সুত্র জানায়, রকিসহ এদের মাদক কারবারের প্রশ্রয়দাতা মরকুন গুদারা ঘাটের মোতাহার হোসেন মিঠু ওরফে জেনারেটর মিঠু।
তিস্তার গেইট, রেল ষ্টেশন এলাকায় ছিলো টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, তার নেতৃত্বে রয়েছে একাধীক কিশোর গ্যং, বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধীক মামলা। কিছুদিন আগে মাদক ও চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হয় রেজাউল। রেজাউল গ্রেফতারের পর তার সহযোগীরা এই গ্যং ও মাদকের সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, রেজাউল করিমের সহযোগীরা ও তিস্তার গেইট এলাকার একজন প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে রয়েছে ৩৫-৪০ জনের একটি সক্রীয় বাহিনী। এরা দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় মাদকের কারবার করে আসছে। ছাত্রলীগের কর্মকা-ের আড়ালে টঙ্গী থেকে রাজধানীর এয়ারপোর্ট এলাকা পর্যন্ত বাপ্পীর নেতৃত্বে ডাকাতি, চোর, ছিনতাইকারী চক্রসহ বেশ কয়েকটি সক্রীয় বাহিনী বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে।
টঙ্গীর আরেক এলাকা এরশাদনগর। অনুসন্ধানে দেখা যায়, আটটি ব্লকে বিভক্ত এ এলাকায় ছোট-বড় ছয় থেকে সাতটি বাহিনী রয়েছে। এসব বাহীনীর মধ্যে সবাধীক ক্ষমতাধর হাত কাটা শফিকুল গ্রুপ, এলাকায় তার নির্দেশে এলাকায় জুয়া, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়। এক্ষেত্রে তাকে সহযোগীতা করে রাসেল, লিয়াকত, রশিদসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়া এদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা আলাদা গ্যং। রশিদের ছোট ভাই আকাশের রয়েছে ১৫-২০ জনের একটি গ্যং। বিএনপি নেতা আনোয়ার ওরফে টিভি আনোয়ার ও তার ছেলে আকাশের রয়েছে সক্রিয় কিশোর গ্যং বাহিনী। ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েলের রয়েছে ৩০-৪০ জনের অধীক কিশোরদের নিয়ে একটি গ্রুপ, জুয়েলের বিরুদ্ধে রয়ছে একাধীক মামলা। সর্বশেষ ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিমের চাঁদাবাজি মামলার আসামি জুয়েল। ছাত্রলীগ নেতা হায়দাদের রয়েছে আরো একটি বিশাল গ্যাং। মাদকসহ এলাকায় সকল প্রকার অপকর্মের সাথে যুক্ত এই নেতার রয়েছে ২৫-৩০ জনের কিশোর গ্যং। এছাড়া ১ নং ব্লকের জাকিরের বিরুদ্ধে পুলিশ পিটানো, চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন থানায় রয়েছে অসংখ্য মামলা। জাকির ওয়ার্ডের সর্বাধিক মামলার আসামী বলে জানায় স্থানীয় সুত্র। জাকির কিছুদিন আগে মাদকসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল বর্তমানে জাকির জামিনে রয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিমের চাঁদাবাজি মামলার সহযোগী হিসেবে তার নাম রয়রছে। এছাড়াও জাকিরের ভাগিনা আকাশের বিরুদ্ধে মাদক ও হত্যাসহ রয়েছে একাধীক মামলা। আকাশ ও তার পরিবারের লোক চোরাই মোবাইল ফোন কেনা বেচার জন্য অতি পরিচিত। তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে ২৫-৩০ জনের একটি সক্রিয় গ্যং।
টঙ্গীর কলেজগেট, সফিউদ্দিন রোড, মুক্তারবাড়ি রোড এলাকায় আছে ইব্রাহীম বাহিনীর দাপট। গত বছরের ১০ মে টঙ্গী পশ্চিম থানায় হওয়া একটি মামলার আসামি তিনি। তাঁর দলে আছে বেশ কিছু কিশোর ও উঠতি বয়সের তরুণ। বিভিন্ন সময় মারামারি বা আধিপত্য বিস্তারে এসব কিশোর–তরুণকে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এছাড়া রয়েছে এলাকায় একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে স্বপনের। স্বপন মোক্তারবাড়ী এক্সিলেন্ড রোড এলাকায় নিহত সৈকত হোসেন হত্যাকান্ডের একজন সক্রিয় আসামী।
এর বাইরে টঙ্গীর খাঁ পাড়া, দত্তপাড়াসহ পুরো আউচপাড়া এলাকায় যুবলীগ নেতা নাহিদের রয়েছে ৪০-৫০জনের সক্রিয় বাহিনী। চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, খুন, মাদক কারবার ও দখলদারিত্বসহ সকল অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত নাহিদ ও তার সক্রীয় গ্যং।
স্থানীয় সুত্র জানায়, টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন তিলারগাতী এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যাবসায়ীর তালিকায় রয়েছে মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধীক মামলা। গত ৭-৮ বছর আগে মুদাফা গ্রামে সপরিবারে বসবাস করতো জাহাঙ্গীর। মাদকের কারবারের কারণে এলাকার স্থানীয়রা জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারের উপর ক্ষীপ্ত হয়ে তাদের বিতারিত করে। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর সপরিবারে একই ওয়ার্ডের বাকরাইল গ্রামে অবস্থান নিলেও তার পরিবারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী তাদের বিতারিত করলে সর্বশেষ জাহাঙ্গীর কোথাও আশ্রয় না পেয়ে পরিবার নিয়ে তিলারগাতি এলাকার পূর্ব পাড়ার শেষ অংশে একজন নিরীহ লোকের জমি জবর দখল করে বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তিলারগাতী এলাকার কতিপয় মাদক ব্যাবসায়ী ও দুষ্কৃতিকারীদের সহযোগীতায় পুরো উদ্যোমের সহিত মাদক ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছে। বহুবার পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার হয়ে কারা ভোগ করলেও জেল থেকে বাহির হওয়ার পর অদৃশ্য শক্তির বলে পুনরায় আরো বেপরোয়া ভাবে মাদক ব্যাবসা শুরু করে। স্থানীয় সুত্রে জানায়, গত কয়েক বছর পূর্বে মাদক ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীরের পিতা বিপুল পরিমান গাজ্যাসহ গ্রেফতার হওয়ার পর কারাভোগ করাকালীন সময় জেল হাজতে মৃত্যুবরণ করেন। তবুও থামেনি তাদের মাদক ব্যাবসা। বর্তমানে স্ত্রীকে দিয়ে মাদক কারবার পরিচালনা করছেন জাহাঙ্গীর। এছাড়া স্বামীর রেখে যাওয়া গাজা ব্যাবসা পরিচালনা করছেন জাহাঙ্গীরের মা সূর্য্য বানু। বর্তমানে তিলারগাতি এলাকার স্থানীয় মৃত আলতাফ হোসেনের ছেলে শাওন আহমেদ বাবু ওরফে ঘাওরা বাবু এই পরিবারের মাদক ব্যাবসায় সহযোগী ও প্রশ্রয়দাতা। এছাড়া এই সিন্ডিকেটের সহযোগী ও যোগানদাতা হিসেবে কাজ করছে তিলারগাতি গ্রামের প্রভাবশালী নেতা ও গ্রাম ইউনিটের সভাপতি সৈয়দ খানের ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে কানা সাইফুল। সাইফুল এসিড নিক্ষেপ ও অস্ত্রসহ একাধীক মাদক মামলার আসামী। সাইফুল দীর্ঘ ৫-৭ বছর কারা ভোগ শেষে বাইরে এসে পিতার ক্ষমতার অপব্যাবহার করে মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছে। সাইফুল তার চালিত আটো রিকশার মাধ্যমে মাদক আনা নেওয়া করে।
স্থানীয় সুত্র আরো জানায়, এলাকার স্থানীয় হাজি বাহাদুর মন্দলের ছেলে মোঃ মোস্তফা মাদক সেবনের স্বার্থে দেওরা এলাকা থেকে বিতারিত মাদক ব্যাবসায়ী কামাল কে নিজ বাড়ির নিচ তলায় বাসা ভাড়া দেয়। কামালের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা রয়েছে। মাদক সেবনের জন্য তিনি এলাকার স্থানীয় ও বহিরাগত মাদক কারবারিকে প্রশ্রয় দেয়।
স্থানীয় সুত্র জানায়, তিলারগাতি ও বড় দেওড়া এলাকায় তাহের আলীর ছেলে আল-আমিন, ওমেদ আলীর ছেলে রাজু, ওমর আলীর ছেলে পিয়াল কুরবান আলীর ছেলে রবিন, আমান আলীর ছেলে সুমন, সিদ্দিকুরের ছেলে রাকিব, নেছারের ছেলে মুন্না,সাহাজ উদ্দিনের ছেলে জুলহাস, মোছলেম উদ্দিনের ছেলে শাহজাহান দীর্ঘদিন যাবত মাদক কারবার, মাদক সেবন ও এলাকার বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত।
স্থানীয় সুত্র জানায়, আদর্শ পাড়া এলাকায় রয়েছে আলমাছ ও নিলুফা বাহিনী। এই বাহিনীতে ৮০-১০০ জনের অধীক। মাদক, ছিনতাই, মারামারিসহ সকল অপকর্মের সাথে জড়িত এই গ্যং। কাঠালদিয়া এলাকায় রয়েছে আজিজ গ্যং। এই গ্যং শান্ত, শরিফ ও শামসুলের সমন্বয়ে ৩০-৪০ জনের একটি সক্রীয় গ্যং। এরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে সকল অপকর্ম সংগঠিত করে। মিত্রি বাটি বট তলা এলাকায় রয়েছে তাইজুল ও রাকিবের নিয়ন্ত্রিত ৩০-৪০ জনের একটি গ্যং। এই গ্যং এর নাম মেন্টাল গ্যং। এই সকল বাহিনীর সদস্যদের কারনে এলাকার সাধারন জনগন সব সময় আতংকিত থাকে।
টঙ্গীর আপরাধ কর্মকা-ের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) ইল তুৎ মিশ বলেন, মাদক ও কিশোর গ্যং নির্মূলে আমরা বহু অভিযান করে আসামীদের হাজতে পাঠিয়েছি। বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা আমাদের নিয়ন্ত্রনে আছে। মাদক নির্মূলে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।


বিজ্ঞাপন