স্পোর্টর্স ডেস্ক : নেইমারের ব্রাজিল ও লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকার স্বপ্নের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ সময় আজ রোববার সকাল ৬ টায়। ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এ এক স্বপ্নের ফাইনাল। দুই দলের ভক্তকুলের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ফুটবল দুনিয়ায়। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরপরেই কেউ আনন্দে আত্মহারা থাকবে আর কারও ভাঙবে হৃদয়।
ফাইনালে তো হাসবে তারাই, যারা খেলাটায় জিততে পারবে। পরিস্থিতি নিজেদের করে নিতে পারবে। রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে অুনষ্ঠেয় এ ফাইনালে সুস্পষ্ট ফেবারিট নয় কোন দলই। শিরোপা জিততে পারে যে কোন দলই। আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলতে নামবে ২৮ বছরের শিরোপার খড়া দূর করার লক্ষ্য নিয়ে। লিওনেল মেসি ক্লাব পর্যায়ে সব ট্রফি জিতলেও দেশের হয়ে কোন ট্রফি জিততে পারেননি আজ পর্যন্ত।
মনে করা হয় দেশের হয়ে শিরোপা জেতার এটাই তার শেষ সুযোগ। দুই বছর আগে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কোপা আমেরিকায়। অনেকের মতে ব্রাজিলের এ দলটি গত আসরের চেয়েও ভালো। কারণ তখন দলে ছিলেন না তারকা খেলোয়াড় নেইমার। তখন অবশ্য সমর্থকদের অকুন্ঠ সমর্থন পেয়েছিল ব্রাজিল দল। এবার খেলতে হবে দর্শকবিহীন মাঠে।
ব্রাজিল কোপায় তাদের দশম এবং আর্জেন্টিনা ১৫তম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে। দুই দলের বর্তমান অবস্থান এতটাই কাছাকাছি যে, কোন দলকেই ফেবারিট বলার সুযোগ নেই। আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো দলে আছেন লিওনেল মেসি। ২০০৫ সাল থেকে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামলেও তিনি দলকে এখন পর্যন্ত কোন ট্রফি জেতাতে পারেননি।
এবার তিনি আছেন দুরন্ত ফর্মে। দলের হয়ে চারটি গোল করা ছাড়াও পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন মেসি। নিজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলকে, রয়েছেন দারুণ ছন্দে। এমিলিয়ানো মার্টিনেজ আর্জেন্টিনাকে বাড়তি সুবিধা এনে দিচ্ছেন। সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে তিনটি পেনাল্টি বাঁচিয়ে তিনি হয়েছেন জয়ের নায়ক। ফাইনালে তিনিই থাকবেন গোল পোস্টে। যে কারণে বাড়তি আত্মবিশ্বাস পাবেন মেসিরা।
খেলোয়াড়দের পাশাপাশি কোচ লিওনেল স্ক্যালোনিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ফাইনালের জন্য। তিনি ২০১৮ সালে দলের দায়িত্ব নেয়ার পর আর্জেন্টিনা ক্রমশ উন্নতি করছে। গত কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের কাছে পরাজিত হওয়ার পর আর কোন ম্যাচে হারেনি আর্জেন্টিনা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তিনি আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের এক সুতায় গাঁথতে পেরেছেন।
দলের সবাই উজ্জীবিত ট্রফি জেতার জন্য। যা দেখা গেছে লাওতারো মার্টিনেজের খেলাতেও। সার্জিও অ্যাগুয়েরো তেমন সুবিধা করতে না পারায় একাদশ থেকে ছিটকে গেছেন। মার্টিনেজ নিয়েছেন সে জায়গায়। সবশেষ তিন ম্যাচেই গোল করেছেন মার্টিনেজ। তিনি মাঠে থাকায় মেসি বেশি জায়গা নিয়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। মিডফিল্ডার হিসেবে রড্রিগো ডি পল এবং জিওভানি লে সেলসো খুব বেশি সৃষ্টিশীল না হলেও তারা দলের জন্য বেশ কার্যকরী। বিশেষ করে মেসিকে বেশি জায়গা নিয়ে খেলার সুযোগ করে দিচ্ছেন তারা। একইভাবে ভাল করছেন লেনার্দো পারেদেস এবং গুইডো রদ্রিগেজ।
প্র্রতিপক্ষ ব্রাজিল কোন দিক থেকেই পিছিয়ে নেই। ইকুয়েডরের বিপক্ষে নিয়মিত একাদশের ছয়জনকে বিশ্রাম দিয়েও তারা ড্র করেছিল। পারফরমেন্সে আছে ধারাবাহিকতা। এ পর্যন্ত খেলা সবগুলো ম্যাচেই গোল করেছে ব্রাজিল। তারা গোল হজম করেছে মাত্র দুটি। ব্রাজিল দ্বিতীয়ার্ধেই বেশি ভাল খেলছে। তখন প্রতিপক্ষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লেও ব্রাজিলের খেলায় উন্নতির ছাপ দেখা যায়।
খেলোয়াড় বদল করলেও ব্রাজিলের খেলার গতি কমে না। আর্জেন্টিনা যেমন মেসি আছেন, তেমনি ব্রাজিলের আছেন নেইমার। তিনি দুরন্ত গতিতে বল নিয়ে ছুটতে পারেন। তার ড্রিবলিংয়ে তাল হারায় প্রতিপক্ষ। এবারের প্রতিযোগিতায় নিজে দুই গোল করা ছাড়াও তিন গোলে দিয়েছেন সহায়তা। তার বুদ্ধিদীপ্ত পাস যে কোন সময়ই দলের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারে।
ব্রাজিলের কোচ তিতের ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা অসাধারণ। প্রতিপক্ষের কৌশল খুব সহজেই ধরতে পারেন এবং সে অনুযায়ী নিজ কৌশল ঠিক করায় তার সমকক্ষ মেলা ভার। কোচ অবশ্য বর্তমান দলটিকে গড়ে তুলছেন আগামী বছর কাতারে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপকে সামনে রেখে। তাইতো তিনি স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে খেলিয়েছেন উইঙ্গার হিসেবে।
তাইতো সুযোগ পেয়েছেন গ্যাব্রিয়ের বারবোসা এবং রবার্তো ফিরমিনো গোল করার। এছাড়া সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে মেলে ধরার। ব্রাজিলের রক্ষণভাগ দারুন করছে। অভিজ্ঞ থিয়াগো সিলভা এখনও আছেন দারুন ফর্মে। মার্কিনহোস এবং এডার মিলিটাও ইতোমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তারা দীর্ঘদিন জাতীয় দলের রক্ষণভাগ সামলাতে সক্ষম হবেন।
ব্রাজিল যে দুটি গোল খেয়েছে তার মধ্যে কলম্বিয়ার ডিয়াজ যে গোলটি করেছিলেন সেটি কারো পক্ষেই থামানো সম্ভব ছিল না। তবে ইকুয়েডরের বিপক্ষে অ্যাঞ্জেল মিনার গোলের ক্ষেত্রে রক্ষণভাগের কিছুটা দায় ছিল। ফাইনালে যেহেতু প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা। তাই স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত থাকে ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা। তাই আরও একবার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ব্রাজিল হারিয়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।