কটিয়াদীতে বৃষ্টি খুনের রহস্য উদঘাটন

অপরাধ

পিবিআই এর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান, খুনি আটক


বিজ্ঞাপন

 

নিজস্ব প্রতিনিধি : হাওর অঞ্চল খ্যাত জেলা কিশোরগঞ্জ দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় কিছুটা ভিন্নরকম। জেলাটিতে অধিকাংশ মানুষই কৃষিনির্ভর ও মৎস্যজীবী। কৃষি কাজ ও মাছ চাষ করে তাদের জীবন-জীবিকা পরিচালিত হয়।

পাশাপাশি, এ জেলায় প্রচুর হাওড়, ডোবা ও জলাশয় রয়েছে। হাওর গুলোতে জেলার অধিকাংশ মানুষ মাছের চাষ করেন। মাছ বিক্রি করে এলাকার মানুষগুলোর জীবনে বর্তমানে বেশ স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। এমনকি অধিকাংশ হাওড়ের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাশু মানুষজন এখানে ভিড় জমান।

তবে, কৃষিকাজ ও মৎস্যজীবীর পাশাপাশি কখনো কখনো এ অঞ্চলের মানুষজন হয়ে ওঠেন অতি হিংস্র ও ভয়ংকর। আর এ কারণেই প্রায়শই এ অঞ্চলে কিছু লোমহর্ষক ও পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেরকমই এ ঘটনাটি ঘটেছে এবার। যেটি কিশোরগঞ্জ পুলিশ ও পিবিআই এর নজরদারিতে উদঘাটন হয়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টি (৯) কে অপহরন, অপহরন পরবর্তী ধর্ষন পূর্বক হত্যা মামলা রহস্য উদঘাটন। গ্রেফতারকৃত সন্ধিগ্ধ আসামী নজরুল ইসলামের বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।

কটিয়াদী থানার মামলা নং-০৪, তাং-০২/০৭/২০২১ খ্রিঃ, ধারা-নারীও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর ৯(২)।

বাদী মোঃ চুন্নু মিয়া মাছ ধরার জন্য কটিয়াদী থানাধীন লোহাজুরী সাকিনস্থ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীতে যান। প্রতিদিনের মতো উক্ত তারিখ সকাল অনুমান ৭.৩০ ঘটিকার সময় বাদীর ছোট মেয়ে ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টি (৯) মাছ আনার জন্য নদীর ধারে যায়।

জানা যায়, ঐ দিন পর্যাপ্ত পরিমানে মাছ ধরতে না পাওয়ায় বাদী তার মেয়ে সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টিকে বাড়িতে চলে যেতে বলেন।

বাদীর মাছ ধরা শেষ হলে উক্ত তারিখ সকাল অনুমান সাড়ে ৯ টার সময় জাল ও মাছ নিয়ে তার বাড়িতে চলে এসে ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টিকে খোঁজ করেন।

আশেপাশের বাড়ীতে খোঁজ করে না পেয়ে আরো লোকজনসহ নদীর ধারে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে জনৈক জয়নাল (৪৫) পিতামৃত-ইউনুছ আলী, সাং-দক্ষিন লোহজুরী, থানা-কটিয়াদী, জেলা-কিশোরগঞ্জ এর পাটক্ষেতে বাদীর স্ত্রী, বাদীর চাচাতো শালি, চাচাতো শ্যালক ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টির পা দুটি কাঁচা পাট গাছে পেঁচানো ও গলায় ওড়না দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় চিৎ হয়ে দেখতে পান।

তৎক্ষণাৎ, তারা চিৎকার দিলে বাদীসহ আশেপাশের লোকজন সেখানে গিয়ে ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টির মৃতদেহ দেখতে পান। উক্ত বিষয়ে কটিয়াদী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। ইন্সঃ মোঃ শফিকুল ইসলামের উপর মামলার তদন্তভার অর্পন করেন।

ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টি (৯) কে হত্যার পর হতে পিবিআই, কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন ইউনিট উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ছায়া তদন্ত অব্যাহত থাকে।

আরও জানা যায়, মামলাটি পিবিআইতে হস্থান্তর ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টি (৯) ধর্ষন করে হত্যা মামলাটি পিবিআই সিডিউলভূক্ত হওয়ায় পিবিআই গত রবিবার ১১ জুলাই, মামলাটি অধিযাচন করে পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খানের উপর তদন্তভার অর্পন করেন।

উক্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বস্থ সোর্স নিয়োগ করে সন্দিগ্ধ আসামী নজরুল ইসলাম(৩৫), পিতা-ছমর উদ্দিন, মাতামৃত-রহিমা খাতুন, সাং-দক্ষিন লোহাজুরী, থানা-কটিয়াদী, জেলা-কিশোরগঞ্জকে মঙ্গলবার ১৩ জুলাই, সময় অনুমান ভোর বেলায় ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন বাড়ইপাড়া এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।

উক্ত আসামী ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টি (৯) কে অপহরন, অপহরন পরবর্তী ধর্ষনপূর্বক হত্যা করেছেন মর্মে নিজেকে জড়িয়ে বিজ্ঞ বিচারক জনাব সাদ্দাম হোসেন বিজ্ঞ সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কিশোরগঞ্জ এর নিকট ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদান করেছেন।

সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ততথ্যে প্রকাশ পায় যে, উক্ত আসামী ঘটনাস্থলের নিকট তার কাকরল ক্ষেতে বৃষ্টির জমা পানি নামানোর জন্য জমিতে যায়।

জমি হতে পানি নামিয়ে বাড়ীতে আসার সময় পাটক্ষেতের ধারে ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টিকে দেখতে পেয়ে আসামী ভিকটিমকে ধর্ষনের জন্য জড়িয়ে ধরিলে ভিকটিম এ কথা তার মা-বাবার কাছে বলে দিবে বলে জানায়।

আসামী তার বাম হাত দিয়ে ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টির মুখ চেপে ধরে অপহরন, অপহরন পূর্বক নিকটবর্তী পাটক্ষেতের ভিতরে নিয়ে যায়।

ভিকটিম টুনিকে পাটক্ষেতের ভিতরে শুয়াইয়া ডান হাত দিয়ে ভিকটিমের পায়জামা খুলিয়া ভিকটিমকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষন করেন।

ভিকটিম সাদিয়া আক্তার টুনি বৃষ্টি বেশী নড়াচড়া করে বাঁচার চেষ্টা করলে উক্ত আসামী ভিকটিমের বাম হাত দিয়ে মুখে এবং ডান হাত দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরে। আসামী নজরুল ইসলাম ভিকটিমকে অপহরন, অপহরন পরবর্তী ধর্ষন পূর্বক হত্যা করে পাটক্ষেত (ঘটনাস্থল) হতে বের হয়ে বাড়ীতে চলে যান।

ঘটনার পর উক্ত আসামী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন।

পরবর্তীতে উক্ত আসামী গাঁ ঢাকা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পলাতক হয়ে সর্বশেষ ঢাকার আশুলিয়া অবস্থান করেন। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।