*ধর্ষকের ফাঁসি চান সায়মার বাবা
*গলায় রশি লাগিয়ে রান্নাঘরে নিয়ে যায় ধর্ষক
মহসীন আহমেদ স্বপন : পরন্ত বিকেলে যখন একটি শিশুর হাতে থাকবে খেলারসামগ্রী, যে সময়টায় সে হাসবে, খেলবে, ঘুরে বেড়াবে, সে সময়টাই নিষ্ঠুরতা ও লালসার শিকার হলো শিশু সামিয়া আক্তার সায়মা (৭)। শিশু সায়মাতো তার মমতাময়ী মায়ের হৃদয়ের ফুল। শিশুরা আমাদের মানব উদ্যানের হৃদয়কাড়া সৌন্দর্য, গোলাপের মত সুন্দর, হাসনাহেনার মত সুগন্ধি ছড়ানো, নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ, হৃদয়ের বাঁধন, নয়নের পুত্তলি, অতি আদরের সোনামণি সেই শিশু সামিয়া আক্তার সায়মাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হলো! দেশ আজ বর্বর দেশে পরিণত হয়েছে নাকী? নারী ও শিশুরা আজ নিজ বাড়িতে নিরাপদ নয়, স্কুলে নয়, বিশ্ববিদ্যালয় নয়, মাদ্রাসাতেও নয়, ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতে নয়, গাড়িতে নয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেও নয়! তাহলে কোথায় নিরাপদ নারী ও শিশুরা?
সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে কতিপয় মানবিকবোধহীন মানুষরুপি পশুর বর্বরতায়। জাগ্রত বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে পারে নাÑ কোথায় আছি আমরা? বর্বরতার জঘন্যতা লালন করা কি কতিপয় পুরুষের নেশা হয়ে উঠেছে? এর চেয়ে লজ্জার, কষ্টের, বেদনার আর কি হতে পারে। সায়মা ধর্ষণ দুঃসহ বাস্তবতার ও প্রতিনিয়ত বিভৎস অসহনীয় ঘটনার একটি অতি সাধারণ চিত্র মাত্র।
গত শুক্রবার মাগরিবের নামাজের সময় নিখোঁজ হয় সিলভারডেল স্কুলের ছাত্রী সায়মা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নির্মাণাধীন ভবনের অষ্টম তলার একটি কক্ষ থেকে মেয়েটির লাশ উদ্ধার করা হয়। সায়মার বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরে ব্যবসা করেন।
সায়মার গলায় রশি লাগিয়ে রান্নাঘরে নিয়ে যায় ধর্ষক : রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামের স্কুলছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৭) ছাদ ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে আট তলার লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায় হারুন অর রশিদ। সেখানে নবনির্মিত নবম তলার ফ্ল্যাটে সায়মাকে ধর্ষণ করে সে। এরপর নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকে সায়মা। মৃত ভেবে সায়মার গলায় রশি দিয়ে টেনে রান্নাঘরের সিঙ্কের নিচে রেখে পালিয়ে যায় হারুন।
শিশু সায়মা হত্যার ঘটনায় রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই রোমহর্ষক বর্ণনা দেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন।
ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত কুরুচির পরিচায়ক; মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ ধরনের অপরাধীরা সাধারণত ধর্ষণের পর যখন ভাবে এ অপকর্মের কারণে সে বাঁচতে পারবে না তখনই হত্যার মতো ঘটনা ঘটায়। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটিয়েছে ঘাতক হারুন।
ধর্ষকের ফাঁসি চান সামিয়ার বাবা : সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ধর্ষকের ফাঁসি দাবি করেছেন সামিয়ার বাবা আব্দুস সালাম।
রোববার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন শেষে সামিয়ার বাবা সাংবাদিকদের উদ্দেশে কথা বলতে গিয়ে শুরুতেই কেঁদে ফেলেন।
আব্দুস সালাম বলেন, আমার পরীর মতো মেয়েকে যে কষ্ট দিয়ে মেরেছে তারও সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তার ফাঁসি চাই।
এ সময় সামিয়ার বাবা আরও বলেন, আমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। মেয়েটা মাকে বলেছে, মা মাত্র ১০ মিনিটের জন্য ওই বাসায় যাব, একটু খেলে চলে আসব। এসে তোমার পড়াগুলো দিয়ে দেব। এরমধ্যেই তাকে আর পাওয়া গেল না।
আবদুস সালাম জানান, সামিয়ার মৃত্যুতে গত তিনদিন ধরে পরিবারের কেউ মুখে পানিও দেয়নি। সবাই সামিয়ার কাপড়-চোপড় নিয়ে কান্নাকাটি করছে।
সামিয়ার বাবা বলেন, আমি দেশবাসীকে একটি কথা বলতে চাই, যাদের মেয়ে বাচ্চা আছে, তারা আগলে রাখবেন। এক মুহূর্তের জন্য আড়াল হতে দেবেন না। এইসব নরপিশাচদের হাত থেকে খেয়াল রাখবেন। অনেক আলোচিত ঘটনা কয়েকদিন পরেই নিভিয়ে যায়। এ ঘটনাও যাতে অতলে হারিয়ে না যায় সে জন্য সাংবাদিকদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।