মন্তব্য প্রতিবেদন : গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পের শ্রমিকদের অবস্থা প্রসঙ্গে!

জাতীয়

আজকের দেশ নিউজ : মানুষকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অসচেতন করে রাখা হচ্ছে। সামাজে জনগণের মাঝে কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে ও মিডিয়া ব্যাবহার করে কিছু গুজব বা প্রপোগান্ডা প্রচার করে সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের ভরকেন্দ্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

প্রায়ই আমাদেরকে শুনতে হয়, নিজের কথা ভাবো! নিজের কথা তো পাগলেও বুঝে! বা নিজে বাঁচলে বাপের নাম।

এগুলোই আমাদের সমাজ কাঠামোকে ভাঙতে হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ করা হয়েছে। এগুলো জনগণের ভেতরে পারিবারিক ও এলাকাভিত্তিক সম্পর্কের বন্ধনগুলোকে কেটে দিয়েছে।

কেননা আমার মতে, যে ব্যাক্তি আত্মকেন্দ্রীকতার মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত সেই শুধু নিজের কথা ভাবে। একজন সুস্থ ব্যাক্তি তার পরিবার, সমাজের ও প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতার কথাও বিবেচনা করবে বলে প্রত্যাশা করি।

একটা যৌথ সমাজ বা সমিতির মত দেশ গড়া সম্ভব হলে সকলের জীবনের জন্য প্রত্যাশিত মৌলিক চাহিদাগুলো সুসমবন্টন নিশ্চিত করা সম্ভব।

এমন একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্খাকে দাবিয়ে দেবার পাশাপাশি একটি পুঁজিবাদী ব্যাবস্থাকে কায়েম করার লক্ষে এই “গুজব ষড়যন্ত্র” প্রয়োগ করা হয়েছে বাংলাদেশে।

এতে করে জনগণের মাঝে তথাকথিত একটি মুক্ত বাজারে উৎপাদন ও বিপনন শ্রমিক হিসেবে অংশ গ্রহন করে সব আকর্ষনীয় পণ্যের সম্ভারে গ্রাহক হিসেবে ডুবে থাকার মোহোচ্ছন্নতা স্থান করে নিয়েছে।

সম্পদের স্বল্পতায় আর অভাবের তাডনায় তাদের মনোসামাজিক স্থিতি একটি টিকে থাকার পরিস্থিতিতে আটকে গেছে।

জনগণ বুঝতে পারছে না যে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর মাধ্যমেই বৃহৎ সুবিধা ও আত্মনির্ভশীলতা অর্জন করা সম্ভব।

আজকের গার্মেন্টস শিল্প সহ অন্যান্য শিল্পের শ্রমিকদের অবস্থা পর্যালাচনা করে এগুলোই মনে হচ্ছে।

বিগত দেড় বছর যাবত তাদের জীবনের তাদের স্বাস্থ ঝুঁকির কথা পর্যবেক্ষন করে এমনই মনেহচ্ছে। তারা শুধুই দাস! আসলেই তাদের দাসের জীবন। চাকরী কর – বিয়ে কর – আয় কর – ব্যায় কর চক্র।

অবসর বা জ্ঞ্যান অর্জন করার কথা চিন্তা করাও তারা পাগলামী বা অস্বাভাবিক আচরন বলে মনেকরে। এই চক্রের মানুষেরা সমাজের বৃহৎ বৈষম্যটি অনুধাবন করতে পারছে না।

করোনা বিস্তারের শুরু থেকে আমি বহুবার বলে আসছি যে এই প্রতিকুল পরিস্থিতির সাথে কৌশলে মোকাবিলা করতে হবে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একটি কার্যকর আপদকালীন ক্যাম্প পরিচালনা পদ্ধতির কথা আমি তুলে ধরেছিলাম।

কিন্তু কি পেলাম? সেনাবাহিনী পুলিসের সাথে ডিউটি করল, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পাহারা দিল, একটা ফার্মাসিটিকেল ব্যাবসা শুরু করল, হাসপাতালগুলোর পরিচালকের পদ গ্রহন করল এবং একটি নতুন মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের নতুন একটি প্রতিষ্ঠান চালু করার অনুমোদন নিয়ে অর্থ-বানিজ্যে মনোনিবেশ করল।

তারা উচ্চ বেতনের সরকারী চাকরিজীবি, পুলিশের মতই।
তাদের পেনশন, ভাতা ও স্কিমের বাইরেও অবসরকালীন অতিরিক্ত কল্যান চাই! আর যেখানে স্বাস্থ্যকর্মি, পরিচ্ছন্নতাকর্মি ও পোষাক শ্রমিকরা সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের বেতন পাওয়ার নিশ্চয়তা নাই।

তাদেরকে সবার আগে টিকা দিতে হত। অথচ তারাই অবহেলিত! তাদের অধিকাংশ এখনও অপুষ্টিতে ভূগছে তা ফেরীর ছবিগুলো দেখলে নিশ্চিত হওয়া যায়।

বিগত দশ বছরে নাকি বাংলাদেশের মেয়েদের গড় উচ্চতা চার ইন্চি কমে গিয়েছে, পুষ্টির অভাবে। এটা দেশের ধনীগোষ্ঠি, নির্বাহীবর্গ বা বুভূক্ষ সরকারী চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রে নয়।

যারা এই দেশটাকে চালায় তাদের বাস্তবতা। তাও এই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে ও বিচিত্র কায়দায় ঠেকে ঠেকে ওরা যায়-আসে।

ওরা একটা চাকরী চায়। ওরা শ্রেফ শ্রমিক। ওরা নাগরিক এটা ওরা ভূলে গেছে। তাই আজ আমি ওদের নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে কিছু বলতে চাই!

এই গার্মেন্টস শ্রমিকদের সস্তা শ্রমের নামেই তো আজ বাংলাদেশের এই শিল্পের বিকাশের ভিত্তি। তাদের তো অবসরকালীন জীবনে নিরাপত্তার ব্যাবস্থা নাই।

তাই মুনাফার উপর তাদের একতৃতীয়াংশ অধিকার থাকা চাই। তাদের শ্রম বাংলাদেশের মূলধন।

তাই তাদের অবসরকালীন নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রর পক্ষ থেকে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য মালিক পক্ষের থাকা আদায় করার পদক্ষেপ দেখতে চাই।