নিজস্ব প্রতিনিধি : ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতা (বর্তমানে শিয়ালদহ) থেকে গেদে – দর্শনা সীমান্ত দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের অভ্যন্তর হয়ে ঈশ্বরদী – নাটোর – সান্তাহার – জয়পুরহাট – পার্বতীপুর – সৈয়দপুর – নীলফামারী এবং চিলাহাটি হয়ে বর্তমান ভারতের কুচবিহার জেলার হলদিবাড়ী স্টেশনের উপর দিয়ে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল । যদিও প্রথমদিকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মিত হওয়ার আগে এই সেকশনটির অংশবিশেষ অর্থাৎ পদ্মা নদীর উত্তর তীরের সাঁড়াঘাট থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত পুরোটা অংশ ছিল মিটারগেজ । অন্যদিকে কলকাতা থেকে পদ্মানদীর দক্ষিণ তীরের তৎকালীন দামুকদিয়া ঘাট পর্যন্ত অংশটি ছিল ব্রডগেজ। তবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালুর সময়ে নদীর উত্তর পাড় অর্থাৎ পাকশী প্রান্ত থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত সেকশনটিকেও ব্রডগেজে উন্নীত করে ফেলা হয় ।
ইতিহাস বিখ্যাত ট্রেন “দার্জিলিং মেইল” ট্রেনটিও এই পথেই কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির মধ্যে চলাচল করত । ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পরেও এই পথে ভারতের সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রেল যোগাযোগ অব্যাহত ছিল । কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত – পাকিস্তান যুদ্ধের ফলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এই রেলপথের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে সুদীর্ঘ ৫৫ বছর এই পথে কোন ট্রেন চলাচল করেনি ।
বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে পরিত্যক্ত এই রেলপথে পুনরায় ট্রেন অপারেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর ফলশ্রুতিতে গত ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে চিলাহাটি ও হলদিবাড়ীর মধ্যকার আন্তর্জাতিক এই রেলওয়ে সেকশনটি নতুন রূপে উদ্বোধন করেন ।
এছাড়া একইসাথে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি শহরের নিউ জলপাইগুড়ি জংশন (এনজেপি) স্টেশন পর্যন্ত “মিতালী এক্সপ্রেস” নামে একটি আন্তঃদেশীয় ট্রেনেরও উদ্বোধন করা হয় । বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি শেষ হয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হলে নতুন এই আন্তঃদেশীয় ট্রেনটি উভয় দেশের যাত্রীদের নিয়ে ছুটে চলবে নতুন এই সেকশন দিয়ে ।
বেশ কয়েকবার ট্রায়াল রান সম্পন্ন করার পর অবশেষে ভারতের ডামডিম স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা একটি পাথর বোঝাই ট্রেন গত ১ আগস্ট, ২০২১ ইং তারিখে চিলাহাটি – হলদিবাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের চিলাহাটি স্টেশনে এসে পৌঁছে । এতে করে সুদীর্ঘ ৫৬ বছর পরে কোন আন্তর্জাতিক ট্রেন প্রথমবারের মত এই পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করল । ফলে সীমান্তের উভয় পাশের মানুষদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় ।
এভাবেই প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত, যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য আরও বৃদ্ধি পাক, আর সমৃদ্ধ হোক – এটাই কামনা থাকবে সবার।