বন্যার চরম অবনতি

জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

আজকের দেশ রিপোর্ট : ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২২ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন নদীর পানি।
তবে একই সময়ে বগুড়া, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নেত্রকোনা, সিলেটে ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। সমতল হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। এদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, জামালপুর এবং পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ছাড়া প্রধান প্রধান নদীর পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে।
যমুনা নদীর পানি জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি এবং তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে গত ৫০ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ১৫৮, ফুলছড়িতে ১৪৭, সারিয়াকান্দিতে ১২৬, কাজিপুরে ১২১ ও সিরাজগঞ্জে ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন নদীর পানি আরও ১৩ পয়েন্ট বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি : সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শুক্রবার সকালে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। যমুনা ও অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার্ত মানুষেরা উঁচু বাঁধ, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নদীবেষ্টিত পাঁচটি উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়নের দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এদের মধ্যে ৩৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান পেয়েছে প্রায় ১১ হাজার বন্যার্ত মানুষ। ১৬৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে আরও ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, জেলার প্রায় সাত হাজার ৫৪১ হেক্টর পরিমাণ জমির পাট, রোপা আমন, আউশ ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য ৩৫৪ মেট্রিকটন চাল, পাঁচ লাখ টাকা ও তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ জানিয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণসামগ্রী খুবই অপ্রতুল।
কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু : কুড়িগ্রামের উলিপুরে ঘরের দরজায় উঠে আসা বন্যার পানিতে ডুবে দেড় বছরের একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে উলিপুর পৌরসভার জোনাইডাঙ্গা ওয়ার্ডের খাওনারদরগা গ্রামের ভাটিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত সীমা খাতুন সে ওই গ্রামের সাদেক মিয়ার মেয়ে। উলিপুর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার সোহরাব হোসেন বলেন, শিশুটিকে তার মা ঘরের বাইরে রেখে কাজ করছিলেন। কোনো একসময় পানিতে পড়ে গিয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *