সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিল উত্থাপন

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিনিধি : গতকাল বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের সকালের অধিবেশনে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ‘Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974’ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে ‘Territorial Waters and Maritime Zones (Amendment) Act, 2021’ বিল সংসদে উত্থাপন করেন। উত্থাপিত বিলটি জাতীয় সংসদের সম্মতিক্রমে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষাপূর্বক রিপোর্ট প্রদানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়।


বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক সম্পদের উপর বাংলাদেশের মানুষের সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের নিমিত্ত ‘Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974’ প্রণয়ন করেন যা ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রণীত সর্বপ্রথম মেরিটাইম অঞ্চল সংক্রান্ত আইন। বাস্তবতার নিরিখে ১৯৭৪ সালে প্রণীত আইনটি যুগোপযোগী করার স্বার্থে আন্তর্জাতিক আইনসমূহ, United Nations Convention on the Law of the Sea (UNCLOS, 1982) এবং ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত রায় সমূহের যথাযথ প্রতিফলনের নিমিত্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভার নির্দেশনাক্রমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে বিদ্যমান আইন ‘Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974’ রহিত না করে উক্ত আইনের অধিকতর সংশোধনপূর্বক Territorial Waters and Maritime Zones (Amendment) Act, 2021 প্রস্তুত করে।
এই আইনে সকল মেরিটাইম সম্পর্কিত অপরাধের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে এবং এ সকল অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়াও, Ocean Governance, Blue Economy, Maritime Cooperation সংক্রান্ত নির্দেশনামূলক বিধিবিধান সংযোজিত হয়েছে এবং বিশেষ করে Marine Scientific Research, Safety Zone নির্ধারণ, সাবমেরিন কেবল ও পাইপলাইন স্থাপনের পদ্ধতি ও অনুশাসন সংক্রান্ত বিধানাবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা ১৯৭৪ সালের আইনে ছিলনা। পূর্বের আইনের Contiguous Zone এর সংজ্ঞা ও সীমা UNCLOS, 1982 এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধন করা হয়েছে Contiguous Zone এর ব্যাপ্তি ১৮ থেকে ২৪ মাইল করা হয়েছে। UNCLOS,1982-এ ‘Exclusive Economic Zone’-এর উল্লেখ থাকায় প্রস্তাবিত আইনে ‘Economic Zone’-এর পরিবর্তে ‘Exclusive Economic Zone’ ব্যবহার করা হয়েছে এবং Exclusive Economic Zone-এ সকল প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পূর্বের আইনে Area এবং High Sea সংক্রান্ত কোন ধারা না থাকায় Area-তে সম্পদ আহরণ, উত্তোলন ও জাহাজ পরিচালনার অধিকার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পূর্বের আইনে সামুদ্রিক দূষণের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড শাস্তির বিধান ছিল যা প্রস্তাবিত আইনে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদন্ড অথবা সর্বনিম্ন দুই কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোপরি, প্রস্তাবিত আইনে বিদেশি জাহাজ বা ডুবোজাহাজের বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ফৌজদারি এক্তিয়ার (Criminal jurisdiction) ও দেওয়ানি এক্তিয়ার (Civil jurisdiction) উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই আইন অনুমোদিত হলে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা, ফৌজদারি ও দেওয়ানি এক্তিয়ার প্রয়োগ, মেরিটাইম ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে সুবিচার নিশ্চিতকরণ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হবে।