যানজটে জনভোগান্তি

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের রাস্তাই এখন বাস টার্মিনাল

 

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর ঢাকার পথে বের হলেই যানজটের ভোগান্তি যেন নিয়ম হয়ে গেছে। সোমবার রাজধানীর সড়কগুলোর বিভিন্ন জায়গায় তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর চিটাগং রোড রায়ের বাগ থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ; কাজলা থেকে শুরু হয়ে হানিফ ফ্লাইওভার ঢাকা মেডিকেল; এদিকে হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে মানিকনগর, কমলাপুর, পল্টন মোড়, গুলিস্তান এলাকায় বেশি যানজট সৃষ্টি হয়। এতে সকাল থেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী এবং কাজে বের হওয়া মানুষরা। সঙ্গে তীব্র যানজটের মুখোমুখি হতে হয়েছে যাত্রীদেরকে।
এসময় যানজটের কারণে অনেকেই পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যে যেতে গেছে। অনেকেই দীর্ঘ যানজটে থাকার পর গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছেন। দেখা যায় সড়কে যানজট থাকায় লেগুনা ও সিএনজি বিকল্প রাস্তা হিসেবে অলিগলি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘদিন পর স্কুল কলেজ খোলা হয়েছে। যে কারনে রিক্সা প্রাইভেটকারও রাস্তায় বেশি লক্ষ করা গেছে। গণপরিবহন বিভিন্ন যায়গায় থামার কারণে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। এছাড়া স্কুল কলেজ সংলগ্ন রাস্তায় অতিরিক্ত রিকশা ও প্রাইভেটকারের কারণে অতিরিক্ত যানজট লক্ষ করা গেছে।
এসময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। বেশি সমস্যায় পড়েন বয়স্ক ব্যক্তি, নারী, শিশু ও রোগীরা। কথা হচ্ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী মো. আল আমিনের সাথে। তিনি জানান, দীর্ঘসময় যানজটে বসে থেকেছেন, এখন পায়ে হেঁটেই টিকাটুলি অফিসের দিকে রওয়ানা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ বসে ছিলাম ততক্ষণে অফিসে চলে যেতাম। তাই আর অপেক্ষা করছি না হেঁটেই অফিসে যাচ্ছি। অনেকেই বলেন, নিয়ম শৃঙ্খলা না মানা রাজধানীতে যানজটের একটি বড় কারণ। বাস-মিনিবাসগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করায়। একারণেই যানজটের সৃষ্টি হয়।
তেজগাঁওয়ের রাস্তাই এখন বাস টার্মিনাল : রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেশিরভাগ সড়ক দখল করে রেখেছে দূরপাল্লার বাস। তাদের দাবি, মহাখালী বাস টার্মিনালে জায়গা না থাকায় রাখতে হচ্ছে রাস্তায়। তবে সিটি করপোরেশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, কোনো অজুহাত শোনা হবে না, তিন মাসের মধ্যে উচ্ছেদ করা হবে। আর বিআরটিএ বলছে, সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালের আশপাশের সড়কে প্রতিদিন দেখা যায় দাঁড়িয়ে আছে দূরপাল্লার বাস। দিনের পর দিন রাস্তায় পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। টার্মিনালে জায়গা সংকটের কথা বলছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
টার্মিনালের ভেতরে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মূল রাস্তার ওপরেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে অনেক বাস। এতে সড়কের দুই পাশেই বেশ খানিকটা জায়গা বাসগুলোর দখলে চলে যাওয়ায় তৈরি হচ্ছে যানজট। তার ওপর টার্মিনাল এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিকল। অল্প বৃষ্টিতেই তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। ভেতরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পথে রাস্তা পার হওয়ার ঝক্কি তো আছেই। এটা রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আন্তজেলা বাস টার্মিনালটির নিত্যদিনের চিত্র।
টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাতরাস্তা থেকে মহাখালী মোড় পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে অন্তত ৩০টি স্বল্প ও দূরপাল্লার বাস দাঁড় করিয়ে রাখা। মূল সড়কের ওপরেই যাত্রী ওঠানোর কাজ চলছে।
মহাখালী টার্মিনাল থেকে বাস আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী-ভোগড়া বাইপাস ও টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ময়মনসিংহ, বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি। গন্তব্যে যাওয়ার জন্য টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পথে গাড়িগুলোকে ইউটার্ন নিতে হয়, যা এই এলাকায় যানজট তৈরি হওয়ার আরেকটি কারণ। টার্মিনাল থেকে কয়েক দফায় এক সারিতে পাঁচ-সাতটি করে গাড়ি বের হচ্ছে। তাতে মূল সড়কের দুই পাশে চলাচলকারী অন্য যানবাহনগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে
অনন্যা সুপার, রজনীগন্ধা নামের দুটি বাস বেশি দেখা যায় এই রাস্তায়। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, কত সংখ্যক বাস ঢাকায় ঢুকবে সে পরিকল্পনা না থাকায় দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। তবে বিআরটিএ’র (রোড সেফটি) পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, টার্মিনালেই পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। সদিচ্ছার অভাব রয়েছে পরিবহন মালিকরদের।
এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, রাস্তায় কোনো বাস রাখা যাবে না। তিন মাসের মধ্যে রাস্তা দখলমুক্ত করা হবে। অনেক চাপ মোকাবিলা করে তেজাগাঁওয়ের সড়ক থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। এবার নতুন চ্যালেঞ্জ অবৈধ বাস পার্কিং।


বিজ্ঞাপন