আমরা কী খাচ্ছি!

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন

অল্পতেই তৃপ্তি ঢেকুর

নিজস্ব প্রতিবেদক : অল্পতেই তৃপ্তির ঢেকুর। হাড়ভাঙা খাটুনির পর নিম্ন আয়ের মানুষগুলো প্রশান্তি খোঁজে, ভাতের প্লেটেই। অল্প খরচের আশায়, হরহামেশাই ফুটপাতের হোটেলেই আহার করেন তারা। আর সেই সুযোগই নিচ্ছেন, এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ। নোংরা পরিবেশে যেনতেন উপায়েই খাবার পরিবেশন করছেন তারা। যার ফলে অনেকেই অসুস্থ হচ্ছেন।
দেড় বছর পর আবারও আগের রূপে রাজধানী। চলতি পথেই দেখা মিলবে ফুটপাত জুড়ে ভাসমান হোটেলের। খাবারের নানা পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। যেখানে অল্প খরচে যে কেউ আহার সেরে নিতে পারেন। তবে খাবার পরেই বুঝতে পারেন জ্বালাটা কোথায়।
রিক্সা চালক আব্দুল আলিম সকাল থেকে রিক্সা চালিয়ে ক্লান্ত শরীরে মতিঝিলের ফুটপাতের একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খান। জানালেন, বেশ কয়েকবার পেটের পিড়ায় ভোগার পরও, ফুটপাতের হোটেলই তাদের ভরসা।
তেজগাঁও বিএসটিআই’র পাশে, একটি হোটেলেও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ খাবার খান। ড্রেনের পাশেই হোটেলটির ভেতরের পরিবেশ বেশ স্যাঁতস্যাঁতে আর দুর্গন্ধযুক্ত। খাবার ঢেকে রাখারও কোন ব্যবস্থা নেই, মাছি বসছে প্রতিনিয়ত।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ভাসমান হোটেলেও, খাবারের নিত্য দিনের সঙ্গী পথের ধুলা আর মাছি। যা প্রতিনিয়ত খাচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। উপায় না থাকায় সমাজের খেটে খাওয়া মানুষগুলো ফুটপাতেই খেতে বাধ্য হন। অথচ তাদের জন্যও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সুষম খাবার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।


বিজ্ঞাপন

 

লোভে বিষ খাচ্ছেন না তো?: মুখরোচক আর জিভে জল আনা খাবার হিসেবে ফুচকা-চটপটির জুড়ি মেলা ভার। পথের ধারের দোকানগুলো সব সময়ই থাকে ক্রেতাদের ভীরে জমজমাট। তবে অনেকেই এর রন্ধন প্রণালীর খবর রাখেন না। বেশীরভাগ ফুচকা ভাজা হয় বহুলব্যবহৃত তেলে। চটপটিতে দেয়া টক কবে বানানো হয় তা বিক্রেতাও মনে রাখতে পারেন না, আর প্লেট গ্লাস পরিষ্কার হয় একই পানিতে।
স্কুল, কলেজ, কোচিং এর সামনে দোকান ঘিরে থাকা জটলাই বলে দেয় ফুচকা-চটপটির জনপ্রিয়তা। জিভে জল আনা খাবারটির জন্য সকাল-বিকেল ভিড় করে তরুণ-তরুণী থেকে বয়স্করা।
শিশুদের ফুচকা খাওয়াতে আনা অভিভাবকরা বলেন, শিশুদেরকে কোনোভাবেই এসব খাওয়ানো থেকে থামানো যায় না, যদিও সকলে এই খাবারের অপকারিতা সম্পর্কে জানে, তারপরও বাচ্চার আবদারের সামনে বাধ্য হতে হয় তাদের।
দীর্ঘ বন্ধের পর স্কুল-কলেজ খোলায় কাটতি বেড়েছে মুখরোচক খাবারের। পথের ধারে খোলা জায়গায় বিক্রি হয় দেখেও রসনা তৃপ্তির কাছে হার মানে স্বাস্থ্য সচেতনতা।
ফুচকা খেতে আসা শিক্ষার্থীরা জানান, অনেকদিন পর স্কুল চালু হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই ফুচকা খাচ্ছেন তারা।
পথের ধারের এসব দোকানে অল্প পানিতেই কাজ সারতে হয়। তাই একই পানিতে চলে গ্লাস-প্লেট ধোয়া থেকে অন্য কাজ। জায়গার অভাবে বাসনকোসন রাখতে হয় রাস্তার ওপর।
এতো গেল পরিবেশনের খবর, কিন্তু কোন পরিবেশে ভাজা হয় এসব খাবার?
রাজধানীর লালবাগ। সরু গলি পার হয়ে বাসাতে ঢুকতেই দেখা যায় খাবারের ওপর একরকম দাঁড়িয়েই কাজ করছেন কারিগররা। গরমে সবাই ঘেমে নেয়ে একাকার। কুচকুচে কালো তেল-ই বলে দেয় কতবার ব্যবহার হয়েছে তার হিসেব রাখা মুশকিল।
অন্যদিকে গ্রিন রোডের এক বাসায় খাওয়া-ঘুম-রান্না সবই এক ঘরে। তেল চিটচিটে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভাজা হচ্ছে ভেলপুরি। খাবার ঢাকার কাপড়টিও অপরিষ্কার।
এসব কারখানা থেকেই নামি-দামী সব দোকানে চলে যায় অতি প্রিয় ফুচকা-ভেলপুরির উপকরণ।
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর ফুচকা, ভেলপুরি আর চটপটি খেয়ে পেটের পিড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী।