নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু যারা চায় না, তারাই শিশুবলি আর ছেলেধরা গুজবের হোতা বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, পদ্মা সেতুতে শিশু বলি দিতে হবে তারাই গুজব ছড়িয়েছিল যারা পদ্মা সেতু চায় না, দেশের উন্নয়ন চায় না। যারা এই সরকার পদ্মা সেতু করতে পারবে না বলেছিল, তারাই পদ্মা সেতুতে শিশু বলি দিতে হবে বলে গুজব ছড়িয়েছে। পদ্মা সেতুতে শিশু বলি দিতে হবে বলে যে ঘৃণ্য ও অনভিপ্রেত গুজবটি ছড়ানো হয় সেটির কারণেই কিন্তু ছেলেধরা আতঙ্ক তৈরি হয়।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)
তিনি বলেন, আমরা জানি গত কয়েকদিন ধরে সমগ্র বাংলাদেশে ছেলেধরা গুজব ছড়ানোর ফলে নিরীহ মানুষ গণপিটুনির শিকার হয়েছে এবং যেখানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো সবই হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা সবাই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং একইসাথে এ ধরণের গুজব যাতে না ছড়াতে পারে তার জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আপনারা জানেন যে ঘটনার সত্যতা হচ্ছে, পদ্মা সেতুতে শিশু বলি দিতে বলে ছড়ানো গুজবের প্রেক্ষিতেই কিন্তু ডালপালা ছড়িয়ে এই হত্যাকাণ্ড করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ছেলেধরা বলে অনেকের ওপর হামলা করা হয়েছে, অনেককে হত্যা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত অনভিপ্রেত, ন্যাক্কারজনক, আইনবহির্ভূত। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলেছি, এই গুজব ছড়ানোর কারণে ইতিমধ্যে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের অনেকের রাজনৈতিক পরিচয় জানা গেছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমি সে পরিচয় প্রকাশ করবো না।
গুজবের বিস্তাররোধে সরকারের ব্যাপক তৎপরতার কথা উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, তবে এটিকে সূত্র ধরে যে কাজগুলো হচ্ছে, এগুলো কখনো হওয়া উচিত নয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা এই গুজব প্রতিরোধে নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। জনগণকে সর্তক করার জন্য তথ্য অধিদপ্তর থেকে তথ্য বিবরণী দেয়া হয়েছে এবং রেডিও, টেলিভিশনসহ সকল গণমাধ্যমে এগুলো প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও দেশব্যাপী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
গুজব নিরসনে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে অনুরোধ জানাবো এ ধরণের গুজবে কান না দেয়ার জন্য। এখনও পর্যন্ত ‘ছেলেধরা’ নামে যে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে, একটি ঘটনাও সত্য প্রমাণিত হয়নি। যারা এ ধরণের আতঙ্ক ছড়াবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক গতকাল দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নেতাদের সাথে বিষয়টি আলোচনা করেছেন। যারা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দলীয়ভাবে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। দলের প্রচার সম্পাদক হিসেবে আমি দলের সকল নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে সোচ্চার হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় দেরি হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কথাটি সঠিক নয়, প্রথম থেকেই কিন্তু মাইকিং করা হচ্ছিল। যেখানে যেখানে গুজব ছড়িয়েছে সেখানে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবং পদ্মা সেতুতে শিশু বলি দিতে হবে গুজব যখন ছড়ানো হয়, তখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল। এটির পিছনে যে ষড়যন্ত্র আছে, সেটি ভাবার বিষয়, দেখার বিষয়।
সরকারের ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে বিএনপি’র ‘অপ্রতুল’ মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি গণফোরাম একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য তাদের যে উদ্যোগ আয়োজন, সেটি প্রেসক্লাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিএনপিরও বন্যার্ত মানুষের জন্য যে উদ্যোগ, সেটিও প্রেস কনফারেন্সেই সীমাবদ্ধ। আর আমাদের দল ইতোমধ্যে বিভিন্ন বন্যার্ত এলাকার জন্য টিম গঠন করে নেতারা একেক এলাকায় গেছেন এবং দলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই কাজ শুরু করেছেন’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘একইসাথে সরকার শুরু থেকেই পর্যাপ্ত ত্রাণ বিভিন্ন জায়গায় দিচ্ছে। আর গণফোরাম এবং বিএনপি ঢাকায় প্রেসক্লাব এবং তাদের দলীয় কার্যালয়ে বসে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমেই সমস্ত কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে।
তিনি বলেন, আমি তাদের অনুরোধ জানাব আমাদের দলের নেতাকর্মীরা যেখানে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সেটাকে অনুকরণ করে অনুসরণ করে, একই কাজ করে তাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে সেটি করতে পারেন’ বলেন ড. হাছান।
জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আমরা এটা পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু এটা তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।
ওয়েজবোর্ডের সভা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামীকাল মন্ত্রিসভা কমিটির সভা হবে। সরকারি বিধিবিধান অনুসারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবার পর সেটা মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।