ই-কমার্সের রিটের প্রতিবেদন না পেয়ে হাইকোর্টের ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাহকের কয়েকশো কোটি টাকা নিয়ে এবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট উধাও। এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তাদের প্রধান কার্যালয়সহ দুটি অফিস। পাওয়া যাচ্ছে না আলেশা মার্টের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।
আলেশা মার্টে একটি মোটরসাইকেল অর্ডার করেন এক কলেজ ছাত্র। মোটরসাইকেল দিতে না পারায় টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিল আলেশা মার্ট। সোমবার বনানীর প্রধান কার্যালয়ে এসে অফিস বন্ধ পান। দিনভর বসে থেকেও কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেখা পাননি।
তার মত অনেকেই ফিরে গেছেন শুন্য হাতে। তাদের দাবি, আলেশা মার্ট কয়েক দফা চেক দিলেও অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় তা প্রত্যাখ্যাত হয়। এ অবস্থায় গ্রাহকের ভিড় বাড়লে প্রধান কার্যালয় বন্ধ করে দেয় আলেশা মার্ট।
ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হলেও সময় মতো দেয়া হয়নি পণ্য। এখন টাকা ফেরত চাইলে চেক ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু একাউন্টে টাকা না থাকায় চেক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বার বার।
এদিকে, বনানীর কার্যালয়ে নোটিশ টানিয়ে গ্রাহকদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে তেজগাঁওয়ের নাসরিন টাওয়ার অফিসে। অথচ সেখানেও কেউ নেই। এখন মামলা করার কথা ভাবছেন অনেকে।
তবে, অনেক চেষ্টার পর মুঠোফোনে পাওয়া যায় আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মনজুর আলম সিকদারকে। তিনি এখনও আশ্বাস দিচ্ছেন টাকা ফেরত দেয়ার।
জানুয়ারিতে জমকালো আয়োজনে যাত্রা শুরু করে আলেশা মার্ট। চটকদার বিজ্ঞাপন আর নানা অফারে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে প্রতিষ্ঠানটি। জানা গেছে, প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাহক ৪৫০ কোটি টাকা পাবে আলেশা মার্টের কাছে।
ই-কমার্সের রিটের প্রতিবেদন না পেয়ে হাইকোর্টের ক্ষোভ: বারবার বলার পরও দেশের ই-কমার্স খাত থেকে অর্থপাচার রোধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ না জানানোয় ক্ষোভ জানিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার সকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আগামী ২৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। এ প্রতিবেদনে ই-কমার্স খাতের কর আদায়ে নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে হবে।
আদালত জানান, নোটিশ জারির পরেও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টি আদালত গুরুতরভাবে নিচ্ছে। এসব অবহেলা সহ্য করা হবে না। পরে আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে কথা বলার বিষয়ে জানান।
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ই-কমার্স নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট। এছাড়া ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ে এনবিআরের পলিসি এবং ই-কমার্স খাতের স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের করা ১৬ সদস্যের কারিগরি কমিটির কার্যপরিধি কী তা-ও জানতে চাওয়া হয়।
দেশে গত কয়েক বছর ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা বা ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর গোটা খাতটি এখন ভুগছে আস্থার সংকটে।
সম্প্রতি খুব অল্প সময়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতসহ গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে।
ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ওঠার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত মাসে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা পদ্ধতি জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আদালত।
গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সুরক্ষা এবং ডিজিটাল কমার্স খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সেটাও জানতে চাওয়া হয়।