নিজস্ব প্রতিনিধি : আজ হোটেল প্যানপ্যাসিফিক সোনারগা, ঢাকা তে “Stakeholder Consultation Workshop on Review of Health care Financing Strategy 2012-32″ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন লোকমান হোসেন মিয়া, সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মো: আলী নূর, সচিব, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ডা. বার্দান জাং রামা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ প্রতিনিধি।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় বলেন, আমি জেনে খুবই আনন্দিত হয়েছি যে, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট সরকারের গৃহীত ২০ বছর মেয়াদী স্বাস্থ্য অর্থায়ণ কৌশলপত্র: ২০১২-২০৩২ এর Review বা পূনঃমূল্যায়নের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কোভিড প্যানডেমিকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব যখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে সেই মুহুর্তে স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়নের গুরুত্ব বহুগুন অনুভূত হয়েছে বা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের অর্থায়ণের কৌশলপত্র পুনঃ মূল্যায়ন খুবই সময় উপযোগী এবং প্রাসঙ্গিক।
সরকার ২০১২ সালে স্বাস্থ্য খাতকে অর্থায়নের জন্য যে কৌশল গ্রহণ করেছিল, তাঁর মূল লক্ষ্য ছিলঃ ২০৩২ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা (Universal Health Coverage-UHC) অর্জনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ণ বা বরাদ্দ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য সেবায় সক্ষতা বৃদ্ধি এবং দরিদ্র ও দুস্থদের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি; এবং স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দ ও অর্থ ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি।
এই লক্ষ্য পূরণে “স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলপত্র” দরিদ্র শ্রেণি, আনুষ্ঠানিক খাত ও অনানুষ্ঠানিক খাতের জনগোষ্ঠির জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার কৌশল গ্রহণ করে।
২০১৬ সাল হতে দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য পরীক্ষামূলকভাবে টাঙ্গইল জেলার তিনটি উপজেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (SSK) বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং চলতি বছরেই সদর উপজেলা ও পৌরসভাসহ জেলার অবশিষ্ট ১টি উপজেলায় সে কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
সরকার ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের বাইরে ঢাকা মহানগরীতে এবং ৬টি জেলায় এসএসকে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং তদনুযায়ী প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এছাড়া সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য সামাজিক স্বাস্থ্য বীমা চালুর লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় এর আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরীর কাজ করছে।
পোশাকশিল্প শ্রমিকদের জন্য বেসরকারি উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে চলমান স্বাস্থ্যবিমা কর্মসূচিসমূহ অব্যাহত রাখা ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ্যে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি ও সামাজিক স্বাস্থ্যবিমার কর্মসূচিসমূহ অধিকতর পরিসরে বাস্তবায়নের জন্য একটি Management and Regulatory প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনার জন্য একটি আইন প্রয়োজন।
ইতোমধ্যে একটি খসড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সকল অংশীজনের সাথে আলোচনাপূর্বক তা চূড়ান্তকরণের কাজ চলমান রয়েছে।
বিশ বছর জন্য কৌশলপত্র বাস্তবায়নের সময়রেখা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং আমরা প্রায় নয় বছর অতিক্রম করছি। বিগত নয় বছরে আমরা এই কৌশলপত্র কতটুক বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, তা মূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেইক্ষেত্রে আমি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট-কে এই উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য খাতকে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। ২০০৫ সাল থেকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রতি বছর গড়ে ১২% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০০-২০০১ সাল হতে ২০১১-২০২১ অর্থবছর এই ২১ বছরে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ ২,৬৮৯ কোটি টাকা হতে বেড়ে ৩২,৭৩১ কোটি টাকা দাড়িয়েছে। নিয়মিত এ বাজেটের বাইরে করোনা রোগের চিকিৎসা ও টিকার জন্য অতিরিক্তি বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। সরকারের গৃহিত ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ১৭০ বিলিয়ন টাকা থেকে ৪০৮ বিলিয়ন টাকায় উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কিন্তু সেই অর্থবৃদ্ধির সাথে অর্থ ব্যবহারের পরিমাত্রা বৃদ্ধি ও গুনগত অর্থ ব্যবহারের উপর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রতিবছর স্বাস্থ্য খাতের অর্থ যেন ফেরত না যায়, তার জন্য আমাদের আরো মনোযোগ দিতে হবে। এর কারণগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের বাজেট প্রস্তুতকরণ, বাজেট ব্যবহার এবং পর্যবেক্ষণ প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
অর্থ ব্যবহারের দক্ষতাবৃদ্ধির আরেকটি দিক হচ্ছে এর গুনগত ব্যবহার আর গুনগত ব্যবহারের জন্য সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ করে দিয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার কোভিড-১৯ কে মাথায় রেখে জরুরীভাবে ১০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিমাসে সরকার ২৫ লক্ষ ভ্যাকসিন দেবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া জনবল বৃদ্ধি ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা ভিত্তিক রোগ নির্ণয়ের জন্য যন্ত্রপাতির সরবরাহে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে গড় আয়ু ৪৬ থেকে ৭৩ এ উন্নীত হয়েছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। আমরা বর্তমানে ৯৮ ভাগ শিশুর টিকা নিশ্চিত করেছি।
তবে, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য অর্থায়ণই উন্নয়ন ঘটাতে পারেনা, যদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যান্য বিষয়গুলোর উন্নয়ন সাধন না হয়। স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের জন্য আমাদের বিদ্যমান জনবল, মেশিনারী ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার লক্ষ্য অর্জনে আমাদের নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।
বাংলাদেশে এখনো মানুষ বেসরকারী খাত থেকে স্বাস্থ্য সেবা নেয় এবং আর্থিক ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।