আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডাকা ‘গণতন্ত্র সম্মেলন’কে কেন্দ্র করে বেশ আলোচনা চলছে চারপাশে।
অনেকের প্রশ্ন, এই সম্মেলনে বাংলাদেশ ডাক পেলো না কেনো? কারণা খুব পরিষ্কার। গণতন্ত্রের নামে যে সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে, এখানে কিন্তু পাকিস্তান ও ইরাকের মতো ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে ডাকা হয়েছে।
একইসঙ্গে ডাকা হয়েছে নিয়মিত যুদ্ধে লিপ্ত ইসরায়েলকেও। কিন্তু বাংলাদেশ এই তালিকায় নেই। কারণ হলো, বিশ্বরাজনীতি এবং পশ্চিমাদের উপনিবেশিক মনোভাব।
খেয়াল করে দেখুন, করোনা মাহামারিতে ইউরোপ-আমেরিকার রাস্তায় রাস্তায় লাশের স্তুপ পড়েছিল। মন্দা নেমেছিল বিশ্বজুড়ে।
সেসময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে পশ্চিমারা বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রচণ্ড নেতিবাচক ভবিষ্যতবাণী করতে শুরু করে। তারা লিখেছিল- বাংলাদেশে কমপক্ষে ২০ লাখ ভাইরাসে মারা যাবে। এছাড়াও অনাহারে মারা যাবে প্রায় অর্ধকোটি।
এমনকি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে প্রায় কোটি মানুষ কর্মহীন হবে। অরাজকতা শুরু হবে বাংলাদেশে। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই হয়নি। সরকার প্রণোদনা দিয়ে প্রান্তিক মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য ও নগদ অর্থ পৌঁছে দিয়েছে।
করোনা ভাইরাস যাতে গণহারে ছড়াতে না পারে, সেজন্য দেশ লকডাউন করে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছে। এমনকি সরকারের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ফসল তুলে দিতে সাহায্য করা হয়েছে কৃষকদের। ফলে খাদ্যঘাটতিও দেখা দেয়নি।
করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো একটা ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্রের সফলতা শুরু থেকেই সহ্য করতে পারেনি বিশ্বমোড়লরা।
এমনকি এই করোনার মধ্যেও দেশের অবকাঠামোগত কাজ চালিয়ে নিয়েছে সরকার। অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলে পদ্মা সেতুর কাজও সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
এই ঘটনাতেও চমকে গেছে পশ্চিমারা। কারণ বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে আগে তারা লোন দেওয়ার নাম করে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত দেশগুলোর জাতীয় নীতর ওপর ছড়ি ঘোরাতো।
তাদের মত ধনবান রাষ্ট্রগুলোর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই নির্ভর করতো আমাদের মতো সাধারণ রাষ্ট্রের উন্নয়ন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বে সেই দৃশ্যপটও বদলে গেছে।
মূলত, অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের পদ্মাসেতুর প্রকল্পকে বানচাল করতে চেয়েছিল পশ্চিমারা।
তারা চেয়েছিল, তাদের ইচ্ছামতো প্রকল্প সাজিয়ে, তাদের কাছে উচ্চ সুদে লোন নিয়ে, সেই অর্থ তাদের লোকদের পিছেই ব্যয় করা হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে, নিজেদের অর্থায়নেই পদ্মাসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এবং পশ্চিমা বিশ্বকে চমকে দিয়ে এক্ষেত্রর সফলও হয়েছে বাংলাদেশ।
এটাও তাদের গালে চপেটাঘাতের মতো লেগেছে। এই সেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারও নিজ উদ্যোগে দেশের ভবিষ্যত প্রকল্পগুলোও বাস্তবায়নের সাহসী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এমনকি, গত এক যুগে সরকার সামাজিক সুরক্ষা খাতে যেভাবে কাজ করেছে, তাতে পশ্চিমা এনজিওগুলোর সুদের ব্যবসা করার রাস্তা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে।
সরকার উদ্যোক্তাদের বিনা সুদে ঋণ দিচ্ছে, কৃষকদের স্বল্পমূল্যে সার ও বীজ দিচ্ছে, বিধবা-এতিম-বয়স্ক মানুষদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে ভাতার টাকা। এমনকি করোনাকালে প্রতিটি মাদ্রাসা-এমিতখানা, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কাছেও পৌঁছে গেছে সরকারি সহায়তা।
গৃহহীনদের করে দেওয়া হচ্ছে ঘর। ফলে সার্বিকভাবে মানুষের অভাব-অনটন কমে গেছে। এনজিওগুলোর কাছে ঋণ নিয়ে, পরে নিজের বাড়ি বিক্রি করে সেই ঋণ শোধ করার দুঃসময় পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ।
ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো ও ইন্টারনেট। আধুনিক ও কর্মমূখী শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে নতুন প্রজন্ম। ফলে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেই, বাড়িতে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করছে লাখ লাখ তরুণ।
এছাড়াও সরকারের নির্দেশে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সদা সতর্ক ভূমিকা রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে একসময় সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ঘাঁটিতে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ থেকে নাশকতাও হ্রাস পেয়েছে।
একারণে, এই ক্ষেত্রেও নাক গলানোর সুযোগ কমে গেছে পশ্চিমা মোড়লদের। অথচ একসময় তারা এসব ব্যাপারে নিয়মিত প্রেসক্রিপশন দিতো বাংলাদেশকে।
এমনকি পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতেও প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ এখন খোলা জায়গায় পয়ঃনিস্কাশন করে।
সেখানে বাংলাদেশের মানুষের ট্রেডিশনাল অভাব-অনটন-মন্দা, ক্ষুধায় মৃত্যু প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। করোনার পরবর্তী সময়ে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে তিনশ গুণ পর্যন্ত।
কিন্তু বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য কিছুটা বাড়লেও, তাদের তুলনায় অনেক কম এ সহনীয় রয়েছে। তারা যেসব থাক সামলাতে ব্যর্থ, আমরা সেসব ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি অর্জন করায় পশ্চিমাদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে বাংলাদেশের। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদের উন্নয়ন এবং জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচকে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতির ফলে জাতিসংঘ এই সুপারিশ করেছে।
কিন্তু পশ্চিমারা তো এটা চায়নি। তারা চেয়েছিল, দুশো বছরের বেশি সময় যেভাবে কালা-আদমি বলে আমাদের হেয় করা হতো, ঠিক সেই চক্রেই আমাদের দেশের মানুষের জীবন আটকে থাক।
তাদের সাদা চামড়ার তথাকথিত আভিজাত্য নিয়ে তারা আমাদের ওপর নিয়মিত হুকুম করবে, এই ধারা তারা দীর্ঘদিন বজায় রেখেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার দূরদর্শী নেতৃত্বে সেই দুঃসময়ের দিনগুলো পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ, এই নতুন ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সমীহ আদায় করে নিয়েছে।
এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপারেও একসময় নিয়মিত নাক গলাতো পশ্চিমারা। এখন সেই রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে তাদের।
এসব নানাবিধ কারণে, বাংলাদেশকে হেয় করার জন্য তাদের উপনিবেশিক মানসিকতা তীব্রভাবে কাজ করছে। কিন্তু তাদের সাদা চামড়ার আলগা অহংকার ও কর্তৃত্ববাদী আচরণকে পাশ কাটিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।