অধ্যাপক এডভোকেট কামরুন নাহার বেগম ট্রাব বিজয়ের সুবর্নজয়ন্তী সম্মাননায় ভূষিত

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটি অব বাংলাদেশ (ট্রাব) এর উদ্যোগে ২৯ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার কাকরাইল ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)’র মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে বর্নাঢ্য আয়োজনে ট্রাব বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব ২০২১,মুজিব মানে বাংলাদেশ স্মরনীকার মোড়ক উম্মোচন, সম্মাননা ও জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এডভোকেট কামরুন নাহার বেগম ট্রাব বিজয়ের সুবর্নজয়ন্তী সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি, উদ্ধোধক সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান এমপি, বিশেষ অতিথি মো. মকবুল হোসেন পিএএ, সভাপতি সালাম মাহমুদ অধ্যাপক এডভোকেট কামরুন নাহার বেগমের হাতে ট্রাব বিজয়ের সুবর্নজয়ন্তী সম্মাননায় তুলে দেন।
প্রবীণ মানবাধিকার কর্মী, সাবেক স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর ও বর্তমানে এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও কলামিস্ট এডভোকেট কামরুন নাহারের সুনাম আইন আদালত ও মানবাধিকার অঙ্গনে সর্বজনবিদিত। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও মানসিক শক্তিত্বে বলিয়ান তিনি। যশ-খ্যাতি, সম্মান, অর্থবিত্ত-সবই আছে তাঁর। ৮ সন্তানের সবাই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ঋদ্ধ, প্রতিষ্ঠিত। স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বড় ছেলে বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। উচ্চশিক্ষিত মেজো ছেলে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মৎস্যখামারি। তৃতীয় ছেলে শিপিং ব্যবসায়ী। ৪র্থ ছেলে বেলজিয়ামে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর সেখানেই প্রতিষ্ঠিত। কনিষ্ঠ ছেলে আন্তর্জাতিক পর্যটন ব্যবসায়ী। তিন কন্যার একজন চিকিৎসক, মেজ মেয়ে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এখন অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত এবং ছোট মেয়ে এলএলএম করে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বার-এটল তে অধ্যয়নরত। রত্নগর্ভা বলতে যা বোঝায়, সত্যিকার অর্থে তিনি তাই-ই।
উল্লেখ্য, তিনি ১৯৭০ সালে গভ: ইন্টারমেডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। তিনি চ.বি ১৯৭৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে বিএসএ এবং ১৯৮০ সালে বিএড কলেজ থেকে ১ম শ্রেণিতে বিএড ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। পেশাগত জীবনের শুরুতে তিনি পদুয়া ডিগ্রী কলেজে বেশ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অধ্যাপনা করেন। ১৯৮৮ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। ঘরে বসে আয়েশি কিংবা ঘুরে বেড়িয়ে বিলাসী জীবন-যাপনের অবারিত দ্বার তাঁর সামনে। কিন্তু বৈষয়িক, জাগতিক এসব প্রাপ্তি, ভালো থাকা তাঁর খুব বেশি পছন্দ নয়। গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদেরকে আইনী সহায়তা প্রদান কিংবা মানবতা লঙ্ঘনের জায়গায় প্রতিবাদী ঝান্ডা হাতে লড়াই করার রক্ত যার শরীরে, দীক্ষা-শিক্ষা যে জীবনে; সে জীবনের কাছে লাভ-অলাভ, বিলাসব্যসন সবই তুচ্ছ, নস্যি। তিনি প্রশান্তি ও আত্মতৃপ্তি খুঁজে ফিরেন আর্তপীড়িতের সেবায়, নারীর ক্ষমতায়নে।
২০০৯ সালে তিনি বিভাগীয় স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর দায়িত্ব পান। পরে জজ কোর্টের এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবেও নিয়োগ পান। পটিয়া থানাধীন খানমোহন গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবার নাম মোহাম্মদ আবদুল মালেক, মায়ের নাম রাবেয়া খানম। তিনি রাঙ্গুনিয়ার কৃতিসন্তান খ্যাতিমান আইনজীবী ও আইন অঙ্গনের পুরোধা পুরুষ, ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও দু’বারের জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর মরহুম আলহাজ্ব নুরুচ্ছফা তালুকদারের সহধর্মিণী। স্বামীর উৎসাহেই আইন পেশায় আসেন তিনি। প্যারালাইসিসের মতো রোগও তাঁকে কাবু করতে পারেনি। ১৭ বছর আগেই হারিয়েছেন চলৎশক্তি। হাঁটেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কথা বলতে গেলে জড়িয়ে যায়। কিন্তু এসব কিছুই এক মুহূর্তের জন্য তাঁকে দমাতে পারেনি। ঝড়-তুফান, বৃষ্টিবাদল যাই আসুক- প্রতিদিন তিনি নির্দিষ্ট সময়ে ছুটে যান আদালতে। নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প শোনেন চেম্বারে বসে। জুনিয়রদের ইন্সট্রাকশন দিয়ে সাধ্যমত সমস্যাসঙ্কুল মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কখনো কখনো বিচারকের কক্ষে নিজেই ছোটেন গাউন পরে। ‘তাঁর রচিত ‘নারী, মানবাধিকার ও বর্তমান সমাজ প্রেক্ষাপট’, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ এবং ‘আমার দেখা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ এবং এশিয়া ও ইউরোপের ১৩ টি দেশ’ বই ৩টি পড়লেই তাঁর জ্ঞানের গভীরতা অনুভব করা যায়। মানবাধিকার কর্মকান্ডে বিশেষ অবদানের জন্যে তিনি একাধিক পদক এবং সম্মাননাও লাভ করেন।
সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, নারী উন্নয়ন ও মানবাধিকারমূলক কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। তিনি নারী অধিকার এবং সমাজে নারীদের মর্যাদা সম্পর্কে স্থানীয় পত্রপত্রিকায় লিখে থাকেন এবং বিভিন্ন সময়ে টিভি-রেডিওতে নারী নির্যাতন এবং নারীদের অধিকার ও নারীসুরক্ষা সম্পর্কে আইনগত বক্তব্য রেখেছেন। তিনি হিউম্যান রাইটস কমিশন চট্টগ্রাম ডিভিশনের প্রাক্তন ডিভিশনাল কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলার হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রাক্তন সভাপতি। তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, চট্টগ্রাম রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ মহিলা ইসলামী পাঠাগারের সদস্য, লেডিস ক্লাবের সদস্য, চট্টগ্রাম রোজ গার্ডেনের পিপি। তিনি ছাত্রী অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য, দক্ষিণ জেলা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং জাতীয় পেশাজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। এ ছাড়াও প্রফেসর এ্যাডভোকেট কামরুন নাহার বেগম একজন সফল মানবাধিকার কর্মী হিসেবে ২০০০ সালে মানবাধিকার কমিশনের জাতীয় সম্মেলনে ‘ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস’ পদকে ভূষিত হন। দুস্থ নারী ও মহিলাদের সহায়তা দানের স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রে বায়োলজিকেল ইন্সটিটিউট ২০০৩ সালে তাঁকে ‘ওম্যান অব দ্যা ইয়ার’ মনোনীত করে। প্রফেসর এ্যাডভোকেট কামরুন নাহার বেগম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে এশিয়া এবং ইউরোপ মহাদেশের ১৩টি দেশ, পরিভ্রমণ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করেন। পরিভ্রমণকালে তিনি সে সমস্ত দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও নানান বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। পরে তাঁর এই অভিজ্ঞতা নিজ দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানবাধিকার, নারী উন্নয়ন ও নানা বিষয়ে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন।
ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, লুঙেনবার্গ, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ প্রফেসর এ্যাডভোকেট কামরুন নাহার বেগম সে দেশসমূহের রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সামাজিক অবস্থা সর্বোপরি সে দেশসমূহের আইন এবং বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আহরণ এবং উল্ল্লিখিত দেশসমূহের ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং দর্শনীয় স্থানসমূহ স্বচক্ষে অবলোকন করে বাস্তব জ্ঞান আহরণ ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে নিজ দেশের পাঠক সমাজের কাছে উল্লিখিত দেশসমূহের সঠিক অবস্থা সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সত্যিকার অর্থে তিনি একজন জীবন সংগ্রামী নারী এবং এদেশের নারী সমাজের প্রেরণার উৎস। মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশের মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নারী সমাজের প্রেরণার উৎস।
কিংবদন্তী মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার বেগমকে ‘ট্রাব বিজয় সন্মাননা ২০২১’ প্রদান করেছে টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটি অব বাংলাদেশ ট্রাব।


বিজ্ঞাপন