এবারের ভাবনা স্টিলের হাইটেক ব্রিজ নির্মাণের

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক : নেভিগেশন সুবিধা (পানি থেকে ব্রিজের দূরত্ব), পিলারের দূরত্ব বেশি হওয়া এবং টেকসই হবে— এ চিন্তা থেকেই এবার স্টিলের হাইটেক ব্রিজ তৈরির প্রাথমিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ‘হাইটেক ব্রিজ নির্মাণ’ ও ‘পার্মানেন্ট স্টিল ব্রিজ অন রুরাল রোডস’ নামের দু’টি প্রকল্প প্রাথমিক সম্মতির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এগুলো বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্প দুইটির একটির জন্য চীন ও অন্যটির জন্য স্পেনের কাছে অর্থ সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।
গত ১২ মে প্রকল্প দু’টি নিয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী। সভায় হাইটেক ব্রিজ ও বড় ব্রিজগুলোর জন্য পৃথক সমীক্ষা করাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী বলেন, লোহার বা স্টিলের ব্রিজে কেন যাওয়া হচ্ছে— সভায় তার যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হয়েছিল। পর্যালোচনা সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মৌখিকভাবে জানান, লোহার ব্রিজ করা হলে পানি থেকে সেতুর নেভিগেশন উচ্চতা কংক্রিটের সেতুর চেয়ে বেশি হবে। তাছাড়া লোহার ব্রিজ বানাতে গেলে ঘন ঘন পিলারের প্রয়োজন হবে না। ফলে পানি প্রবাহ ঠিক থাকবে। পলি বা চর পড়বে তুলনামূলক কম। কিন্তু আমরা লিখিতভাবে সুবিধাগুলো জানতে চেয়েছি। তাছাড়া সমীক্ষা না করায় পৃথকভাবে সেতুগুলোর সমীক্ষা করতে বলা হয়েছে। আপাতত পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে আমরা বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধানের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) প্রস্তাব পাঠানোর মত দিয়েছি।
সূত্র জানায়, ‘কনস্ট্রাকশন অব হাইটেক ব্রিজ অন রুরাল রোডস ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। চীনের ঋণ ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে এটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) পক্ষ থেকে। কিন্তু এ প্রস্তাবে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্বাসন নামক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আয়রন ব্রিজ অপসারণ করে কংক্রিট ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কংক্রিটের পরিবর্তে এবার হাইটেক ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের ব্রিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে তুলনামূলক সুবিধা এবং ব্যয় বিষয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা, তথ্য বা উপাত্ত নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি ব্রিজের পৃথকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। তাই বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণ না করে সমীক্ষা প্রকল্প হাতে নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়।
নতুন প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে সারাদেশে গ্রামীণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমানের দেশের নদীগুলোরর নাব্যর বিষয়টি বিবেচনা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ৪টি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। এর মধ্যে ১ম ও ২য় শ্রেণির নদীর ওপর নির্মিতব্য সেতুগুলোর হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ন্যূনতম ৭৬৫ দশমিক ২২ মিটার। এছাড়া এই দুই শ্রেণির নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের ডিজাইন বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি সম্ভব নয়। প্রকল্পভুক্ত নদীগুলো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে নদীর নাব্য ও প্রশস্ততা বিবেচনায় দীর্ঘ স্প্যান বিশিষ্ট সেতু নির্মাণ জরুরি। এজন্য হাইটেক সেতু নির্মাণের প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে চীন থেকে সম্ভাব্য বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ, ফেনী, বরিশাল, নরসিংদী, পটুয়াখালী ও ফরিদপুর জেলায় ১০টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
পর্যালোচনা সভার কার্যপত্রে বলা হয়, হাইটেক ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য একক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে চীন সরকারকে উল্লেখ করায় প্রকল্প প্রস্তাবে এর ব্যাখা বা যৌক্তিকতা সুস্পষ্ট নয় বলে মনে করে কমিশন। এসময় ইআরডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এরই মধ্যে চীনের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাব পাওয়ার পরই ঋণ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে ‘কনস্ট্রাকশন অব পারমানেন্ট স্টিল ব্রিজ অন রুরাল রোডস’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর বেশিরভাগ অংশ, ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে। বাকি ৯৫০ কোটি টাকা স্পেন সরকারের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়ার কথা। প্রকল্পটির আওতায় দেশের উত্তরাঞ্চলসহ আশপাশের অঞ্চলগুলোর ৩৫টি জেলায় ৬৮টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এর সঙ্গে অ্যাপ্রোচ সড়ক, নদী শাসন ও স্লপ প্রোটেকশনের কাজও যুক্ত রয়েছে। পর্যালোচনা সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেসব নদী বা খালের ওপর সেতু নির্মাণ করা হবে, সেসব নদী বা খালে স্থায়ী স্প্যান বসানো হলে প্রচলিত ব্রিজের বাইরে কী ধরনের ভিন্ন উপযোগিতা পাওয়া যাবে, তার ব্যাখা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্রিজের আলাদা সমীক্ষা হওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির সঙ্গে যুক্ত এলজিইডির দায়িত্বশীর একটি সূত্র জানায়, নতুনভাবে যেসব ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো লোহার নয়, স্টিলের হবে। তাছাড়া এগুলোর পিলারসহ নিচের দিকটা কংক্রিটের তৈরি হবে। ওপরে সুপার স্ট্রাকচার হবে স্টিলের। বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের স্ট্রিলের ব্রিজের দিকে যেতেই হবে। কেননা যখন বলা হয়েছিল নেভিগেশন উচ্চতা বেশি করতে হবে, তখন কংক্রিটের অনেক বড় বড় ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ আটকে গেছে। সেখানে স্টিল ব্যবহার করলে নেভিগেশন উচ্চতা অনেক বেশি পাওয়া যাবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *