রাণী ২য় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোকাহত, কিন্তু আন্টাঘর চিনেন কি চিনেন না?

Uncategorized অন্যান্য

বিশেষ প্রতিবেদক ঃ ১৮৫৭ সালের ২২শে নভেম্বর, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বয়স তখন শতবছর পার করেছে। কোম্পানির শাসনে অতিষ্ঠ দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিতে কিছু দেশপ্রেমিক সিপাহী বিদ্রোহ করেছে। তাদের উদ্দেশ্য, ইংরেজদের হটিয়ে মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহকে আবারো ক্ষমতায় নিয়ে আসা। তখন ইংরেজ মেরিন সেনারা ঢাকার লালবাগের কেল্লায় অবস্থিত দেশীয় সেনাদের নিরস্ত্র করার লক্ষ্যে আক্রমণ চালায়। কিন্তু সিপাহীরা বাঁধা দিলে যুদ্ধ বেধে যায়। যুদ্ধে আহত এবং পালিয়ে যাওয়া সেনাদের ধরে এনে এক সংক্ষিপ্ত কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। বিচারের পর ১১ জন সিপাই কে আন্টাঘর ময়দানে এনে জনসম্মুখে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হয়।

স্থানীয় লোকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে লাশগুলো বহু দিন যাবৎ এখানকার গাছে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনার পর বহুদিন পর্যন্ত এই ময়দান এর চারপাশ দিয়ে হাঁটতে ঢাকাবাসী ভয় পেত, কারণ এ জায়গা নিয়ে বিভিন্ন ভৌতিক কাহিনী ছড়িয়ে পরেছিল।

আন্টাঘর চিনতে পেরেছেন এতক্ষণে? জ্বি, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কথাই বলছি। যেখানে দেশপ্রেমিক ১১ জন সিপাহীকে ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাঁদের মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল দিনের পর দিন। ঢাকাবাসীকে দেখানো হয়েছিল, এই দেখো তোমাদের স্বাধীনতা ঝুলছে। এই দেখো, তোমাদের দেশপ্রেম ঝুলছে!

হ্যা, দেশপ্রেমে ঝুলেছিল তিতুমীর, প্রিতীলতা ওয়াদেদ্দার, মাস্টার দ্যা সূর্যসেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র, ক্ষুদিরাম বসুরা। ইমপেরিয়ালিজম এর বিরুদ্ধে জীবন দিয়েছে হাজার হাজার দেশপ্রেমিক। স্বাধীনতার জন্য লড়েছে বছরের পর বছর।

বলা হয়ে থাকে, ২০০ বছরের শাসনে পাচার হয়েছে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ! ব্রিটিশরা আগমনের পূর্বে যেখানে গোয়াল ভরা গরু ছিলো, গোলা ভরা ধান ছিলো, ঘর ভর্তি সুখ ছিলো সেখানে ব্রিটিশরা এনেছিল দূর্ভিক্ষ! না খেয়ে মারা গিয়েছিল লাখ লাখ মানুষ।

তোমাদের প্রাচুর্যে আমি আমার পূর্বপুরুষের ঘাম দেখি। অনাহারে মারা যাওয়া বাচ্চাদের খাবার দেখি। দেখি, আমাদের ঘামে গড়া তোমাদের সভ্যতা। আমাদের গোয়াল ফাঁকা করা তোমাদের প্রাচুর্য্য আমাকে মুগ্ধ করে না। আমি ফাঁসিতে ঝোলা দেশপ্রেমিকদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাই না।

এসবের সাথে রাণী ২য় এলিজাবেথের সম্পর্ক কি? রাণী ২য় এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন ১৯৫২ সালে। ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনে তার ভূমিকা ছিলো না। কিন্ত, সিংহাসনে বসার পর অনেক কিছুই তার করার ছিলো। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে বসেও তিনি ভারতবর্ষের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে পারেননি।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ক্ষমা না চাইলেও আমাদের ক্ষমা চাওয়ার আছে। স্বাধীনতা সংগ্রামকে ভুলে গেছি জন্য তিতুমীরের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা চাইতে হবে প্রিতীলতার কাছে, ক্ষুদিরামের কাছে, মাস্টার দ্যা সূর্য সেনের কাছে। হাত জোর করে ক্ষমা চাইতে হবে নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের কাছে। ক্ষমা চাইতে হবে হাজার হাজার দেমপ্রেমিকের কাছে, যাঁরা দড়িতে ঝুলে গিয়েছিল ইমপেরিয়ালিজম রুখতে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *