৮ টুকরা লাশের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করল পিবিআই গাজীপুর

Uncategorized আইন ও আদালত



নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন পানজোড়া এলাকার বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর গার্মেন্টস কর্মী সবুজ বার্নাড গোছাল (৩২) এর হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার করল পিবিআই গাজীপুর জেলা।এছাড়াও মামলার ভিকটিম সবুজ বার্নাড গোছাল এর দেহ টুকরা টুকরা করতে ব্যবহৃত বটি, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, এছাড়াও ঘটনার সময় আসামীর পরিহিত কাপড় আসামীর দেখানো মতে উদ্ধার করা হয়।মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী মোঃ শাহীনুর রহমান শাহীন (৩২), পিতা-মোঃ মোসলেম উদ্দিন, মাতা-মমতাজ নাহার, সাং-বালিয়া, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা। এ/পি-দক্ষিণ পানজোরা, পূর্বাচল এপ্যারেল গার্মেন্টস লিঃ এর পাশে (মানিক মেম্বার এর ভাড়াটিয়া), থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-গাজীপুরকে গত ২ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১ টার সময় পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম ও পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মাহমুদুল হাসান এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে খুলনা মেট্টোপলিটন এর সোনাডাঙ্গা থানাধীন সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড হতে গ্রেফতার করা হয়।মামলার ভিকটিম সবুজ বার্নাড গোছাল (৩২), পিতা-অমূল্য গনসালভেস, সাং-ভাষানিয়া, পোঃ নাগরী, থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-গাজীপুর কালীগঞ্জ থানাধীন পানজোরা সাকিনস্থ পূর্বাচল এ্যাপারেল গার্মেন্টস লিমিটেডে কিউসি পদে চাকরী করত। গত ২৮ সেপ্টেম্বর, গার্মেন্টস ছুটির পর বাসায় ফিরে না আসায় পরের দিন তার পিতা অমূল্য গনসালভেস কালীগঞ্জ থানায় নিখোজ ডায়রী করেন। গত ১ অক্টোবর সকাল অনুমান ৯ টার সময় সবুজ বার্নাড গোছাল এর কর্মস্থল কালীগঞ্জ থানাধীন পানজোড়া সাকিনস্থ পূর্বাচল এ্যাপারেল গার্মেন্টস লিমিটেড ফ্যাক্টরীর পাশে জনৈক আলাউদ্দিন শেখ এর বসত বাড়ীর দক্ষিন পূর্ব পাশে স্থানীয় লোকজন শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষের ২ (দুই) টি হাত দেখতে পায়। স্থানীয় মানুষ এবং কালীগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগীতায় আশপাশে খোজাখুজি করে সবুজ বার্নাড গোছাল এর পরিহিত জিন্স প্যান্ট, জনৈক আলাউদ্দিন শেখ এর ডোবা হতে কোমর হাটু পর্যন্ত অংশ, জনৈক সোবাহান শেখ এর বাড়ীর পশ্চিম পাশের পুকুরের দক্ষিন-পূর্ব পাশে বাম পায়ের ২ (দুই) টি খন্ড অংশ ও প্লাস্টিকের পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় গলা হতে বিচ্ছিন্ন মাথা, মনিকো গ্রাপের গেইটের সামনে ড্রেনের উপর বাজারের ব্যাগে মোড়ানো কোমর হতে গলার অংশ উদ্ধার করে। এই সংক্রান্তে ভিকটিমের বাবা অমূল্য গনসালভেস বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত নামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে কালীগঞ্জ থানার মামলা নং-০২ তারিখ-০১/১০/২০২২ খ্রিঃ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। সূত্রে বর্ণিত মামলার ঘটনার পর থেকে পিবিআই গাজীপুর জেলা ছায়া তদন্ত শুরু করে। মামলাটি পিবিআই এর সিডিউলভূক্ত মামলা হওয়ায় পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার স্মারক নং-পিবিআই/মামলা/১৩৮-২০২২/৮৩২/ সিআরও (পূর্ব), তারিখ-০২/১০/২০২২ ইং মূলে মামলাটি পিবিআই গাজীপুর জেলা অধিগ্রহণ করে।
অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম মামলাটি তদন্ত করেন।আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ শাহীনুর রহমান শাহীন এবং অত্র মামলার ভিকটিম সবুজ বার্নাড গোছাল একই গার্মেন্টসে চাকুরী করার কারনে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে রূপ নেয়। ভিকটিম আসামীর ভাড়াকৃত বাসায় প্রায়ই আসা যাওয়া করত। আসামীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩২), পিতা-ফারুক হোসেন, সাং-বালিকনা, থানা-ঝালকাঠি সদর, জেলা-ঝালকাঠি ও ভিকটিম একই গার্মেন্টসে চাকুরীর করত। ভিকটিম আসামীর স্ত্রীকে মাঝে মধ্যে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিত। আসামীর স্ত্রী উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখান করে আসামীকে বিষয় গুলো জানিয়ে দিত। এতে আসামীর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিন ভিকটিমের সাথে আসামীর কালীগঞ্জ পানজোড়া এলাকায় দেখা হলে আসামী নতুন চাকুরী পাওয়ার প্রেক্ষিতে আসামীকে পার্টি দেওয়ার জন্য বললে আসামী রাজি হয়ে আসামীর ঘরে স্ত্রীর জমানো টাকা হতে ১,০০০ টাকা নিয়ে ভিকটিমকে মদ আনতে দেয়। ভিকটিম মদ নিয়ে আসে এবং ভিকটিম ও আসামী দুজন আসামীর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে আসামীর ঘরে মদ সেবন করে। মদ সেবন করার পর মুখে মদ তিতা লাগার কারনে আসামী ভিকটিমকে বলে যে, এত টাকা দিয়ে তিতা মদ এনেছো কেন? এ বিষয়টি কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে ঘরের ভিতর ঝগড়াঝাটি ও মারামারি হয়। আসামী জোরে ভিকটিমের বুকে ঘুষি মারলে ঘটনাস্থলে ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে মারা যায়। আসামী লাশ গুম করার জন্য ভিকটিমের লাশটি বিভিন্ন টুকরায় বিভক্ত করে ঘটনার দিন লাশ বস্তায় ভরে খাটের নিচেই রেখে দেয়। পরের দিন আসামীর স্ত্রী গার্মেন্টসে যাওয়ার পর আসামী গার্মেন্টেসে না গিয়ে লাশের এক একটি অংশ বস্তায় ভরে মানুষের অগোচরে কালীগঞ্জ থানাধীন পানজোড়া এলাকার বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা ভিকটিমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তাদের নিকট ১৫,০০,০০০ টাকা মুক্তিপন দাবী করে।এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, গত এক বছর আগে একই গার্মেন্টসে কর্মরত জেসমিন আক্তার নামের মেয়েকে আসামী মোঃ শাহীনুর রহমান শাহীন বিবাহ করে। কিছুদিন আগে সে উত্তরখান এলাকায় আফ কো হাসান গার্মেন্টস লিঃ এ চাকুরী নেয়। আসামী বাসায় না থাকার সুযোগে ভিকটিম সবুজ বার্নাড গোছাল মাঝে মধ্যেই আসামীর বাসায় আসত এবং তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে প্রেম নিবেদন সহ বিয়ের প্রস্তাব দিত। এই বিষয়টি জানার পর আসামীর মনের মধ্যে একটি ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ভিকটিম সবুজ বার্নাড গোছাল নতুন চাকুরীর সুবাদে আসামীর কাছে পার্টি দেওয়ার অনুরোধ করলে আসামী ভিকটিম সবুজ বার্নাড গোছালকে মদ খাওয়ার জন্য বাসায় আসতে বলে। মদ সেবন করার একপর্যায়ে দুই জনের হাতাহাতি শুরু হয় এবং ভিকটিম সবুজ বার্নাড গোছাল অজ্ঞান হয়ে গেলে বটি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা কেটে ৮ টুকরো করে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *