এবার লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে পেঁয়াজের দাম

অর্থনীতি এইমাত্র বানিজ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : দুই দিনের ব্যবধানে ঢাকার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে অন্তত ৭০ টাকা; তবে খুচরা বাজারে এই দাম কমার প্রভাব এখনও তেমন দেখা যায়নি।
কী কারণে ধপ করে দাম পড়ছে- উত্তর খুঁজতে গেলে পাইকাররা চাহিদা কমে যাওয়াকে কারণ দেখিয়েছেন।
দামের অস্থিরতার কারণে খুচরা বিক্রেতারা যেমন পেঁয়াজ কিনছেন কম, তেমনি মানুষও রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে।
গত দুই মাস ধরে অস্থির পেঁয়াজের বাজারে গত শুক্রবার দেশি পেঁয়াজের দর কেজিতে ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আমদানি করা পেঁয়াজের দামও ছিল ২০০ টাকার বেশি।
সোমবার পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, মিয়ানমারের আংশিক পচা পেঁয়াজ ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়, মিশর-তুরস্কের বড় আকারের পেঁয়াজ ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তেও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০০ টাকার মতো কমেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
শ্যামবাজারের আমানত ভান্ডারের মালিক আব্দুর রাজ্জাক খান ও আড়তদার ইদ্রিস আলী মধু বলেন, বিক্রি কম বলে দামও কমে গেছে।
ইদ্রিস আলী বলেন, বিক্রি কমে যাওয়ায় হঠাৎ করে দামের পতন হয়েছে। জেলা শহরগুলোতে পেঁয়াজের বস্তা (৪০ কেজি) ৯/১০ হাজার টাকা থেকে কমে পাঁচ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। দাম আরও কমে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
রাজ্জাক খান বলেন, শ্যামবাজার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি হত। আজকে সারাদিনে ৫০০ বস্তা বিক্রি হয়েছে কি না সন্দেহ।
যারা আগে ১০ বস্তা পেঁয়াজ নিত, তারা নিয়েছে এক বস্তা। সবাই কম কম করে নিচ্ছে। কারণ দাম প্রতিদিনই পড়তির দিকে। অংশিক পচা পেঁয়াজ; যেগুলোর কেজি ৮০/৯০ টাকা, যেগুলোই বেশি চলেছে। ভালো পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কম।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রেতা অনেকেই পেঁয়াজ রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় মিরপুরের পীরেরবাগে মহল্লার ১০ মুদি দোকান ঘুরেও পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি।
পীরেরবাগে মুদি দোকান মা-বাবার দোয়া’র বিক্রেতা ঝন্টু মিয়া বলেন, গত ৫ দিন ধরে তিনি পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণেই তিনি নতুন করে পেঁয়াজের চালান আনছেন না। এখন দাম কমতে থাকায় তিনি আরও অপেক্ষা করতে চাইছেন।
তিনি বলেন, আজকে শুনেছি কিছু কিছু পেঁয়াজ দেড়শ টাকায় নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে পেঁয়াজ কেনা খুবই ঝুঁকির। কারণ আমাদের দোকানে কম পরিমাণে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। একবার আনলে বেশ কয়েকদিন সময় লাগে বিক্রি হতে। দেখা গেল, আজকে যেই দামে কিনলাম, কালকে দাম আরও কমে গেল, তখন তখন তো লস দিয়ে বিক্রি করতে হবে।
এমন লোকসানের শঙ্কায় আছেন মিরপুর এলাকার আরেক খুচরা বিক্রেতা নূর মোহাম্মদও। তিনি গত সপ্তাহে পাইকারি বাজার থেকে ২৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে এনেছিলেন। শুক্রবার আড়াইশ টাকা করে বিক্রি করেছিলেন। এখন পাইকারিতে দাম কমে যাওয়ায় সোমবার কেনা দাম ২৩০ টাকাতেই বিক্রি করছিলেন। দাম আরও কমলে তো আমার লোকসান হবে, বলেন নূর মোহাম্মদ।
রাজধানীতে পেঁয়াজের পাইকারি কেন্দ্র শ্যামবাজারে কেজিতে দর ৭০ টাকা কমলেও মিরপুরের বাজারগুলোতে দাম কমেছে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা। কেউ ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, কেউ আবার ২৩০ টাকা দরেও বিক্রি করছিলেন।
পীরেরবাগে মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল প্রতিকেজি ১৯০ টাকায়, দেশি কিং জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ২০০ টাকায়। দুদিন আগে এই বাজারে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২৫০ টাকা থেকে ২৬০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা আব্দুল আওয়াল জানান, তিনি পাবনা অঞ্চলের পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। গত শুক্রবার এই বাজারে পাবনার পেঁয়াজের দাম উঠেছিল ২৪০ টাকা।
গত সেপ্টেম্বরে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এক লাফে একশ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর সরকারের নানা উদ্যোগে সামান্য কমলেও ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে দুদিনের মধ্যে দেড়শ থেকে ১৮০ টাকায় উঠে যায়। এরপর সপ্তাহ পার না হতেই আড়াইশ টাকায় উঠে যায় পেঁয়াজের কেজি।
পেঁয়াজের বাজার সামাল দিতে বিমানেও আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবারই তার প্রথম চালান আসবে। এছাড়া চীন, তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার থেকে আমদানি চলছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *