কুক্ষিগত সড়কে ফিরেছে গণপরিবহন

এইমাত্র জাতীয় সারাদেশ

মহসীন আহমেদ স্বপন : নতুন সড়ক আইনের বিরোধিতা করে গেল কয়েকদিন রাজধানী ঢাকা শহরে গণপরিবহন চলাচল ছিল সীমিত। দূরপাল্লার বাসও চলেছে অল্প পরিসরে। হঠাৎ এমন কর্মসূচিতে ঘর থেকে বের হয়ে বিপাকে পড়তে হয় অনেককে। এরইমধ্যে শুক্রবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল; যদিও সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এ দিন সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা স্বাভাবিক কর্মদিবসের তুলনায় কমই থাকে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রীর প্রচেষ্টায় ফল না আসলেও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানের ঘোষণায় অবশেষে সচল হলো দেশের পরিবহন খাত। চার থেকে পাঁচ দিন পর যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেও এবার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তবে কি একক কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কুক্ষিগত হয়ে পড়ছে গুরুত্বপূর্ণ এই খাত? দেশের পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে না পারার রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার সুযোগই নিচ্ছে একটি মহল।
পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান। দীর্ঘ অচলাবস্থা শেষে অবশেষে নির্দেশ আসলো পরিবহন নেতার। এর পরপরই স্বাভাবিক হতে শুরু করে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা। শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সবকটি বাস টার্মিনাল থেকেই শুরু হয় স্বাভাবিক বাস চলাচল।
পরিবহন খাতের স্থবিরতা থেকে মুক্তি দিতে এর আগে সরকারের দুই মন্ত্রী নানা প্রচেষ্টা চলালেও তা ব্যর্থ হয়। পরিবহন শ্রমিকরা বন্ধ রাখেন যান চলাচল।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিনের একক আধিপত্যের সুযোগ নিয়ে মতের অমিল হলেই পরিকল্পিতভাবে অকার্যকর করা হয় পরিবহন ব্যবস্থা। জিম্মি দশায় পড়েন সাধারণ মানুষ। এমনকি অসহায় হতে হয় রাষ্ট্রকেও।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পৃথিবীর কোথাও পরিবহন সেক্টর ব্যক্তি-গোষ্ঠীর উপর নেই। তারা সরকারের নিয়ম-নীতি অনুযায়ী চলে, কোনো দাবি থাকলে সরকারের সঙ্গে কথা বলে।
আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার যৌক্তিক সমাধান সম্ভব জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পরিবহন সংগঠনগুলো যাতে যখন-তখন ধর্মঘট ডাকতে না পারে সেজন্যও করতে হবে আইন প্রণয়ন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনের মধ্যে এই ধারা আনা উচিত যে, কেউ যদি জনগণের স্বার্থে গাড়ি চালায় এবং সেটাতে অন্য কেউ বাধা দেয় তবে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
সড়ক পরিবহন আইন – ২০১৮ নিয়ে পরিবহন মালিক – শ্রমিকদের কিছু দাবির বিষয়ে একমত পোষণ করে, বাস্তবতার নিরিখে দ- নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলারও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার গভীর রাতে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিকেরা সারা দেশে পণ্য পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও বৃহস্পতিবার ঢাকার সড়কগুলোতে গণপরিবহনের কমতি তো ছিলও, দূরপাল্লার বাসও স্বাভাবিকভাবে চলেনি।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ছুটির দিনে যানবাহন চলাচল ও যানজট না থাকলেও ছিলো একটু ভিন্নচিত্র। দূরপাল্লার বাস চলছে। চলছে আন্তঃজেলা ও রাজধানীতে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন।
রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, কল্যাণপুর শ্যামলী, কলেজগেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলাচল করছে বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন। চলছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানও।
গাবতলীতে আসছে সব জেলার যাত্রীবাহী বাস। আন্তঃজেলার যাত্রীবাহী বাসও ঢুকছে রাজধানীতে। সিগন্যালগুলো চাপ না থাকলেও কিছু সময়ের জন্যও আটকা দেখা যায় পরিবহনগুলো।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। শ্রমিকরা কর্মে ফিরেছে। সকাল থেকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করছে। বাস মালিকরা বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল শুরু করেছেন।
সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস-মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, সায়েদাবাদ থেকে সব রুটে পরিবহন ছেড়ে যাচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই।
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি হাজি আবুল কালাম বলেন, নওগাঁ ও চুয়াডাঙ্গায় আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটে যানচলাচল বন্ধ রেখেছে স্থানীয়রা পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। তাছাড়া আর কোথাও কোনো সমস্যা নেই।
ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার দাস বলেন, সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যানবাহনের সংখ্যা কম থাকলেও আজ বেশি মনে হচ্ছে।
মিরপুর টেকনিক্যাল এলাকার ট্রাফিক সার্জেন্ট মাসরেকুল জানান, এ এলাকায় যানজট নেই, যান চলাচলও স্বাভাবিক।
ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের রমনা এলাকার সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম জানান, ছুটির দিনে অফিস আদালত বন্ধ থাকে। যান চলাচল স্বভাবত কমে যায়। তবে আজ শুক্রবার হলেও চিত্র ভিন্ন। যানচলাচল অন্যদিনের মতো। সাত কলেজের পরীক্ষা ও চাকরির পরীক্ষার কারণে এমনটা হতে পারে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *