নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যা-পরবর্তী এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে, সব হারানোর বেদনা চেপে- জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই আজ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারছে বাঙালি জাতি। উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সীমাহীন হিংস্রতা দূরীভূত হয়ে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে প্রতিটি মানুষের, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আইনের শাসন। দারিদ্র্য-ক্ষুধা-মন্দার নিদারুণ কষ্টকর পথ অতিক্রম করে আজ সচ্ছল হয়ে উঠেছে আপামর জনগণ। উগ্রবাদী চক্র এবং স্বৈরশাসকদের অপশাসন ও তীব্র শোষণে একসময় অনাহারে-অর্ধাহারে ছেঁড়া কাপড় পরে বেঁচে থাকা দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ আজ পেয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে নিরাপদ জীবন, তারা নিজের চোখে দেখে যাচ্ছেন নতুনপ্রজন্মের জন্য তৈরি হওয়া আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের এই স্বপ্নীল পরিবর্তন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে বর্বর ঘাতকেরা। সেসময় স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে ইউরোপে থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশবাসীকে জিম্মি করে রাখে উগ্রবাদী চক্র এবং স্বৈরশাসকেরা। তাদের নিপীড়নে আপামর বাঙালির জীবন যখন ওষ্ঠাগত, তখন দেশবাসীকে মুক্ত করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
১৯৮১ সালের ১৭ মে, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। এদিন কোটি মানুষের আনন্দঅশ্রুতে সিক্ত হয়ে স্বদেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। আর একারণেই পরবর্তীতে পতন হয় স্বৈরাচারের, ব্যর্থ হয় উগ্রবাদী চক্র, ফিরে আসে গণতন্ত্র, শুরু হয় উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ, ভাগ্য বদলাতে থাকে সাধারণ মানুষের। যার ধারাবাহিকতাতে বাংলাদেশ উন্নীত হয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন করে আমরা আজ ধাবমান উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নাম লেখানোর পথে।
সেদিন দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসন ভেঙে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশের এই স্বপ্নময় অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। এক যুগ আগেও মানুষের কাছে যা কল্পনাপ্রসূত মনে হয়েছে, সেসব বাস্তবে পরিণত করে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অগ্রগতির এই অবিশ্বাস্য সাফল্যের পেছনে কোনো জাদুমন্ত্র নেই, যা আছে তা হলো বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শনকে বাস্তবায়নের জন্য সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনার প্রণয়ন এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দীর্ঘ একদশক ধরে দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে ঘুরে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগকে সংগঠিক করেন শেখ হাসিনা, জাতীয় মুক্তির জন্য সংগঠিক করে তোলেন সর্বোস্তরের মানুষকে। গণসংযোগে গিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সমস্যাগুলো পর্যন্ত চিহ্নিত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছুটে গিয়ে তিনি দেখতে পান- পর্যাপ্ত রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই, এমনকি স্থানীয় পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য সহজ কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থাও নেই। দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই অজস্র মানুষের মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই, অধিকাংশ মানুষের জন্য নেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য-শিক্ষার সুবিধা।
দেশের গণমানুষের এই মৌলিক সমস্যাগুলোকে একান্তই নিজের সমস্যা মনে করে, তা সমাধানের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা।
একারণেই স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায় থেকে নতুন করে গোছাতে শুরু করেন তিনি। দলকে পুনর্গঠিত করার মাধ্যমে উগ্রবাদী ও স্বৈরাচারের হিংস্র থাবায় আক্রান্ত দেশকে পুনর্গঠনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ছক আঁকেন। যার ফলাফল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে এক নতুন বাংলাদেশ এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে আজকের ডিজিটাল প্রজন্ম, যাদের হাত ধরেই স্মার্ট রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বীর বাঙালির প্রিয় বাংলাদেশ।