নিজস্ব প্রতিবেদক : ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো গুজবে কান দেবেন না। সত্য তথ্য না জানা বা যাচাই-বাছাই না করা পর্যন্ত শেয়ার দেবেন না। এতে দেশের ক্ষতি, সমাজের ক্ষতি ও ব্যক্তির ক্ষতি হয়।
বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তৃতীয় বাংলাদেশ ডিজিটাল দিবস ২০২০ সম্মাননা প্রধান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে বলবো একটা কিছু আসলে শুনে সাথে সাথে রিঅ্যাক্ট করার দরকার নেই। সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে হবে। না হলে এতে সমাজের ক্ষতি হয় ব্যক্তির ক্ষতি হয়। ইন্টারনেটে কোনো পোস্ট শেয়ারে বিষয়ে সচেতন হবে। যাচাই করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
‘এ বিষয়ে শিক্ষক-বাবা মা সবাইকে সচেতন হতে হবে। শিশুরা যাতে আসক্তিতে না পড়ে সে বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।’
সাইবার নিরাপত্তার জন্য ফিল্টারের ব্যবস্থা করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন অনেক ধরনের অপরাধ হয়ে থাকে। সে বিষয়ে যেনো দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায় সে ব্যবস্থাও জরুরী সেবার মাধ্যমে করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ স্থাপনের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত রচনা করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু দেশকে উন্নয়ন অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে সে কর্মসূচি। পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর নেয়া কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছিলাম, মানুষের মধ্যে যখন স্বচ্ছলতা আসছিল তখন ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়ন কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি আরও যোগ করেন, এর আগে ৯০ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় তখন একটি মোবাইল ফোনের দাম ছিল এক লাখ টাকা। মোবাইল ফোনের কল করলেও ১০ টাকা, ধরলেই ১০ টাকা মিনিট বিল আসতো। বিএনপির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানের একক কোম্পানি একচেটিয়া ব্যবসা করার ফলে মোবাইলের দাম কমেনি। তখনবার সরকারের অজ্ঞতার কারণে ব্রডব্যান্ড নিতে পারেনি। বিশাল সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যায়। এভাবে তারা দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি কোম্পানিকে মোবাইল ফোন বিক্রির অনুমতি দেয়া হলো। প্রতিযোগিতার কারণে মোবাইল ফোনের দাম ও কল চার্জ কমতে থাকে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলি। এখন সব অফিস-আদালত কম্পিউটাইজ হয়ে গেছে। ই-টেন্ডারের কারণে টেন্ডার বাক্স ছিনতাই বন্ধ হয়ে গেছে।
‘আমরা ৮ হাজার পোস্ট অফিসকে ডিজিটাল করেছি। ৩ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন ১৬ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করছে। আইটি খাতে গত পাঁচ বছরে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৬৫ হাজার ইন্টারনেট গ্রাহক সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, এখন ১ লাখ নয়, ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে মোবাইল পাওয়া যায়। কৃষক এখন মোবাইলের মাধ্যমে ফোন করে ছবি পাঠিয়ে ফসলের, গরু-ছাগল, হাস-মুরগি সবকিছুর চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা দিতে পারছি। ৯৯৯ ও ৩৩৩ এ ফোন করে সেবা নিচ্ছে। যে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম তা এখন সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে আইসিটি খাত হবে দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত। ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে একদিকে কর্মসংস্থান হচ্ছে আরেকদিকে মানুষ সেবা পাচ্ছে। ৩ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেয়া হয়েছে। আরো ২০০টিতে দেয়ার কাজ চলছে। আস্তে আন্তে সবগুলো ইউনিয়নে সংযোগ দেয়া হবে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে এখন ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার সিম ব্যবহার হচ্ছে। একজন একাধিক সিম ব্যবহার করছে।
অনুষ্ঠানে মাই গভ বা আমার সরকার অ্যাপ-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অ্যাপে অনলাইনে সরকারের মোট ১৭২টি সেবা পাওয়া যাবে। কেউ বিপদে পড়লে অ্যাপটি খুলে মোবাইল ফোন ঝাঁকালে সরাসরি ৯৯৯ নম্বরে ফোন চলে যাবে।
এসময় সেরা মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সেরা দপ্তর সমাজ সেবা অধিদপ্তর, শ্রেষ্ঠ বিভাগ সিলেট বিভাগ ও শ্রেষ্ঠ জেলা খুলনা এবং শ্রেষ্ঠ উপজেলা কুমিল্লা সদর। এবং শ্রেষ্ঠ ডিজিটাল ক্যাম্পাস শাহজালালাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মাননা প্রদান করেন।
এছাড়া ডিজিটাল প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ১৫ ব্যক্তি সম্মাননা দেয়া হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এম জিয়াউল আলম স্বাগত বক্তব্য দেন।