!! বর্তমানে পুলিশে নন-ক্যাডার সদস্য ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৮ জন। দেশে ৬ হাজার ৮৯৮ জন ইন্সপেক্টর রয়েছেন। তাদের মধ্যে বড় একটি সংখ্যা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতিযোগ্য। ২৪ হাজার ৪২৯ জন এসআই ও সার্জেন্টের মধ্যে বিপুলসংখ্যক সদস্য রয়েছেন পরিদর্শক পদে পদোন্নতিযোগ্য। অনেকের চাকরির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও পদোন্নতির মর্যাদা ও সুবিধা পাননি !!
নিজস্ব প্রতিবেদক : পদোন্নতির এগারো বছর পর অবশেষে র্যাঙ্ক-ব্যাজ ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি পেতে যাচ্ছেন পুলিশের ননক্যাডার সদস্যরা। চলতি মাসেই তাদের এসব বিষয় নিশ্চিত করা হবে বলে রবিবার তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। এর মধ্য দিয়ে এসব বিষয় নিয়ে পুলিশের মাঠপর্যায়ে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল, আপাতত তা নিরসন হয়েছে।
গতকাল রবিবার ১২ নভেম্বর, দুপুর থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), স্বরাষ্ট্র সচিব, উপসচিব ও যুগ্মসচিব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছে নন-ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ সদস্যের একটি দল।
এর আগে এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে গত শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে চতুর্থ দফায় বৈঠক করেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। কিন্তু ওই বৈঠকে এর কোনো সুরাহা না হওয়ায় কর্মবিরতিরও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তারা। সে পর্যন্ত যাওয়ার আগেই বিষয়টি সুরাহা করল সরকার।এসব সিরিজ বৈঠকে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমান সরকার ২০১২ সালের ৩০ জুলাই পুলিশ পরিদর্শক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার, আর এসআই ও ট্রাফিক সার্জেন্টের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তখন থেকে পরিদর্শকদের দুই কাঁধে দুটি করে মোট চারটি র্যাঙ্ক-ব্যাজ (পিপস) এবং এসআই ও ট্রাফিক সার্জেন্টদের দুই কাঁধে একটি করে দুটি পিপস পরার কথা। কিন্তু গত ১১ বছরেও তা বাস্তাবায়ন হয়নি।
অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমর্রত নন-ক্যাডার (নবম গ্রেড) কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে নবম গ্রেডের কর্মকর্তারা পদোন্নতির পরও নবম গ্রেডে থেকে যান। এমনকি পদোন্নতির পরেও ১১ বছর পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদ অনুযায়ী প্রাপ্য সরকারি সুবিধাদি থেকেও বঞ্চিত তারা।
২০১২ সালের আগে পুলিশ পরিদর্শক পদটি ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার। এসআই ও ট্রাফিক সার্জেন্ট পদ ছিল তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার।
বর্তমানে পুলিশে নন-ক্যাডার সদস্য ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৮ জন। দেশে ৬ হাজার ৮৯৮ জন ইন্সপেক্টর রয়েছেন। তাদের মধ্যে বড় একটি সংখ্যা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতিযোগ্য। ২৪ হাজার ৪২৯ জন এসআই ও সার্জেন্টের মধ্যে বিপুলসংখ্যক সদস্য রয়েছেন পরিদর্শক পদে পদোন্নতিযোগ্য। অনেকের চাকরির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও পদোন্নতির মর্যাদা ও সুবিধা পাননি।
এ মাসেই র্যাঙ্ক-ব্যাজ ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি পাওয়ার আশ্বাসের বিষয়ে গতকাল রবিবার ১২ নভেম্বর, সন্ধ্যায় বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম গণমাধ্যম কে বলেন, ‘আমরা কনস্টেবল থেকে আইজিপি পর্যন্ত এক এবং অভিন্ন। স্যারের (আইজিপি) নেতৃত্বে আমরা কাজ করি। আমাদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই।’
র্যাঙ্ক-ব্যাজ ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি না পাওয়ায় এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি দল গতকাল রবিবার ১২ নভেম্বর, দুপুর আড়াইটায় পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘স্যারের (আইজিপি) নির্দেশনা অনুযায়ী বিকাল ৩টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, উপসচিব ও যুগ্মসচিব মহোদয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়। এ মাসের (নভেম্বর) মধ্যেই র্যাঙ্ক-ব্যাজ ও আনুষঙ্গিক সবিধাদি নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয় আমাদের। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমরা সচিবালয় ছাড়ি।’
র্যাঙ্ক-ব্যাজসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে গত শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসায় যান ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় কর্মরত দেড় শতাধিক পুলিশ পরিদর্শক ও এসআই-সার্জেন্ট। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই পদোন্নতি, ড্রেসরুল ও নন-ক্যাডার পুলিশ নীতিমালা ঘোষণার দাবি জানান তারা। এ নিয়ে এ বিষয়ে তারা চারবার বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। তবে সুরাহা না পেয়ে কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
এর আগে চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শে দাবির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, পদমর্যাদায় উন্নতির এত বছর হয়ে যাওয়ার পরও পুলিশ পরিদর্শকেরা এখনো নবম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। নবম গ্রেডের অন্য বিভাগে কর্মকর্তারা ১০ বছর চাকরি করার পর সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ষষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত হন। কিন্তু পুলিশ পরিদর্শকেরা তা থেকে বঞ্চিত। অন্যান্য ক্যাডারে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার কর্মকর্তারা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তার সঙ্গে তাদেরও সমন্বয় করা উচিত। পুলিশে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়মিত পদোন্নতি হয়। কিন্তু কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদে সেই অনুপাতে পদোন্নতি হচ্ছে না।