মির্জাপুর প্রতিনিধি : মির্জাপুর উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ পোষ্টকামুরী গ্রামের মো. আলী হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, সুদ-ঘুষ নেয়ার অভিযোগ অনেক আগে থেকেই। সাধারণ মানুষদের ভয় দেখিয়ে এবং মোটা অংকের টাকা খেয়ে বিচার-সালিশে অপরাধীদের বাঁচিয়ে দেয়ার অভিযোগও আছে এই আলী হোসেনে বিরুদ্ধে। এবার তার ছোট ভাই ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ জুয়েল ও ধলা গংদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে শেষ পর্যন্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদি সভা করতে বাধ্য হয়েছে। শনিবার মির্জাপুর সদরে কলেজ রোডে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মানববন্ধনে অংশ নেয় প্রায় ৫শতাধিক মানুষ।
অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগীরা তাদের অমানবিক অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে অভিযুক্ত জুয়েলের বড় ভাই মো. আলীর হোসেনের অত্যাচারের কথা। বিচার সালিশে মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে ঘুষ নেয়ার অভিযোগও উঠেছে এই আলীর বিরুদ্ধে। মো. আলী হোসেন বিভিন্ন জমি বেদখল করে এবং অবৈধ কর্মকা- করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মো. আলীর হোসেনের সাথে স্থানীয় এক সাংবাদিকও জবরদখল, চাঁদাবাজি, মিথ্যা রিপোর্টের ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়সহ স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অঢেল অবৈধ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। সেই সাংবাদিকের ঘরে এবং বাইরে স্বর্ণ আছে প্রায় কেজি খানেক কিংবা তারও বেশি। তার নামে মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এবং এর আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় তার ভিটে বাড়ি ও জমি-জমা আছে। টাকা আছে প্রায় কয়েক কোটি। তার নামে এবং তার আত্বীয়-স্বজনদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন একাউন্ট করে টাকা জমিয়েছেন কয়েক কোটি। যার কোন হিসাব নেই এবং হিসাব নেওয়ার মতো কেউ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ব্যাক্তি ভয়ে সেই সাংবাদিকের নাম প্রকাশ করেননি। তবে আরো জানা যায়, স্থানীয় এই সাংবাদিকের কথায় মির্জাপুর থানার পুলিশ উঠে আর বসে।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তাদের অতিদ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনবেন এটিই আমাদের দাবি।
পোষ্টকামুরী গ্রামের ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়া বলেন, জুয়েল, ধলা গ্যাংরা আমাদের সব জায়গা-জমি দখল করে নিয়েছে। আমাদের জমি বেদখল করে ওরা ভূয়া কাগজ-পত্র/ দলিল তৈরি করে জমি বিক্রি করে। এদের অতি দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি দাবি করছি।
অত্যাচারের শিকার গোলাম মোস্তফা সিকদার অভিযোগ করে বলেন, আমার চাচাত ভাই আমাদের জমি জোর করে দখল করে খাচ্ছে। আমার চাচা আব্দুল আজিজ ধলা নির্যাতন করে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা বউ-পুলাপান নিয়ে আমি রাস্তায় আছি। আমাদের থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।
ভুক্তভোগী পোষ্টকামুরী গ্রামের আলফা ও রশিদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ওরা সন্ত্রাসী, ওরা চাঁদাবাজ, ওরা গরীবের হক মাইরা খায়। দশজনে জানে আমরা ওগো নগে পারিনা, আমাগো জমি জোর দখল কইরা নিয়া গেছেগা, আমরা আমাগো জমি ফিরিয়া চাই, আমরা বিচার চাই।
অপহরণের শিকার পোষ্টকামুরী গ্রামের আজাহার সিকদারের ছেলে জামিল সিকদার অভিযোগ করে বলেন, প্রায় মাস খানেক আগে রাত ৯ টার দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাকে বাসা থেকে অপহরণ করে জুয়েল ও ধলা গং। পরে তারা আমার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমার পরিবার তাদের কাছে ১৫ হাজার টাকা দিলে আমাকে বাড়ির সামনে রাস্তার উপরে ফেলে দিয়ে চলে যায়। এরপরও বিভিন্নভাবে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়ে আসছে। আমি এর বিচার চাই।
ভুক্তভোগী পোষ্টকামুরী গ্রামের আজাহার সিকদার বলেন, জুয়েল ও ধলা গং আমাকে দিনের পর দিন বিভিন্নভাবে মেরে ফেলবে এমন হুমকি দিয়ে আসছে। জুয়েল ও ধলা গত মাস খানেক আগে আমার ছেলেকে অপহরণ করেছিল। সবমিলিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশে উপস্থিত সকলেই জুয়েল ও ধলা গংদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবি করেন।
উল্লেখ্য দীর্ঘদিন যাবৎ জুয়েল ও ধলা গং এলাকার মানুষদের জায়গা জমি দখল করে লুটেপুটে খেয়ে আসছে। প্রভাবশালী থাকায় তাদের কেউ কিছু বলতে পারেনা। এই জুয়েল ও ধলা গংদের বিরুদ্ধে সদরের ডাক বাংলোরের রাস্তার সরকারি জমি আত্মসাৎেরও অভিযোগ রয়েছে। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হলে অসহায় মানুষেরা ফিরে পেতে পারে তাদের জমি। এখন দেখার বাকি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে কতটা গুরুত্ব দেয় এবং সত্যতা যাচাই করে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।