নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদুল-ফিতর সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা মিরপুর-১, দারুস সালাম, বেড়িবাঁধ এলাকার দাবাজ সন্ত্রাসীরা। ঈদ – উল -ফেতরের দোহাই দিয়ে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে বেপরোয়াভাবে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বেড়িবাঁধ কাঁবাজারের আড়তসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী, ফুটপাথের হকাররা। চাদাবাজদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না বিভিন্ন মার্কেটে পজিশন নিয়ে বসা ব্যবসায়ী, স্থানীয় টেম্পো স্ট্যান্ডগুলোর মালিক চালকরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, চাদা দেয়া তাদের জন্য নতুন নয়।
তবে ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নামে ইচ্ছেমতো চাদা আদায় করা হচ্ছে। আর এই পুরো দাবাজির নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছেন মোহাম্মদ খাইরুল, মোহাম্মদ রতন ও মোহাম্মদ জনি নামে কয়েক সন্ত্রাসী। তাদের গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন ভাগে নানা পয়েন্ট থেকে চাদা তুলছে।
মিরপুর বেড়িবাঁধের কাঁচা মালের আড়তের এক ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, রমজান সবজি বা কাঁচা মালের কদর সব সময় কম থাকে। সেই হিসেবে এমনিতেই ব্যবসায়ী মন্দা। তার ওপর নতুন নতুন মাস্তানরা বিভিন্ন এমপি নেতা পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম করে মোটা অঙ্কের চাদার দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছে। না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানি নির্যাতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই আড়তে সাড়ে পাঁচ শ’ আড়তদার রয়েছেন। তাদের প্রত্যোকের কাছ থেকে নতুন হারে চাদা তোলা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। এমনকি বাজার কেন্দ্রিক রিকশা, ভ্যান, পিকআপ ট্রাক, ঠেলাগাড়ি থেকেও চাদা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিন শুধু বাজার কেন্দ্রিক চাদা তোলা হচ্ছে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা; যা মাসে ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকায় দাঁড়াচ্ছে।
স্থানীয় লাইনম্যান তৈয়ব আলী বলেন, তিনি বিভিন্ন সময়ে লাইনম্যানের কাজ করে প্রভাবশালীদের টাকা দিয়ে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি খাইরুল, রতন ও জনি তার কাছ থেকে প্রতি মাসে সাত লাখ টাকা চাদা দাবি করেছে। এই টাকা দিতে না পারলে তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে লাইন চালানোর হুমকি দিয়েছে।
টেম্পো চলক আতিফুর রহমান জানান, নতুন নতুন হারে চাদা আদায়ের দাবি নিয়ে হাজির হয় চাদাবাজরা। এই নিয়ে তাদের সাথে টেম্পো চালকদের বেশির ভাগ সময় কথাকাটাকাটি হয়। আর তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে চাদাবাজরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের মাস্তানিতে যাত্রীরাও ভয় পান।
জানা গেছে, খায়রুল রতন জনির নামে আদায় করা টাকা প্রতিদিন মিরপুর ১ নাম্বার প্রিন্স বাজার মার্কেটের দ্বিতীয় ও সপ্তম তলা বসে ভাগাভাগি করা হয়। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাখায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছুই বলতে পারে না। দু-একজন ভুক্তভোগী থানায় জিডি করলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পুলিশ। উল্টো জিডি করার অপরাধে ওই ব্যবসায়ীদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ।
এ ব্যপারে জানতে মিরপুরে জোনের পুলিশের ডিসি জসিম উদ্দিন মোল্লার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, অনেকে প্রতারণা করে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে দাবাজি করতে পারে। তবে এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সোচ্চার হয়ে থানায় অভিযোগ করা উচিত। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হয়।